ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার গুরুত্ব

islam_78550ইসলাম ডেস্ক:
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। আল কোরআন ও হাদীসে মানব জীবনের সব সমস্যার সমাধান দেয়া আছে। ইসলাম একটি পবিত্রতম জীবনব্যবস্থাও। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র এবং তিনি পবিত্রতা পছন্দ করেন। যারা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও পবিত্র থাকে, সবাই তাদের ভালোবাসে।

পবিত্র মনের অধিকারী ব্যক্তি পাপ ও মন্দকাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে। পবিত্রতা মানুষের মন ও দেহে পরিতৃপ্তি সৃষ্টি করে, ভালো ও কল্যাণকর কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। ইসলাম ধর্মে পবিত্রতা একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। কারণ, পবিত্রতা অর্জন ব্যতীত নামাজ-কুরআন পড়ার মতো মৌলিক ইবাদত করা যায় না। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম পবিত্র পুরুষ হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘পবিত্রতা অর্জন করা ঈমানের অর্ধেক।’ (মুসলিম, মিশকাত)।

তার মানে যে ব্যক্তি পবিত্র থাকতে পারল তার ঈমান পরিপূর্ণ, আর যে পবিত্র থাকতে পারল না তার ঈমানও পরিপূর্ণ নয়। পবিত্রতা সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে- আত্মিক পবিত্রতা ও বাহ্যিক পবিত্রতা বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা।

আত্মিক পবিত্রতা অর্জন করা যায় গুনাহ থেকে বেঁচে থেকে নেক আমলের মাধ্যমে। আর বাহ্যিক পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা যায় দুনিয়াবি উপায়-উপকরণের মাধ্যমে।

নিয়মিত নামাজ আদায় করলে আত্মিক ও বাহ্যিক দুই দিক দিয়েই পবিত্র থাকা সম্ভব। কারণ, নামাজ আদায়ের জন্য অজু করে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়। অজুতে এমন অঙ্গগুলো ধৌত করা ফরজ করা হয়েছে, যা সাধারণত প্রকাশমান। যেখানে ধুলোবালু লাগা স্বাভাবিক। দিনে পাঁচবার অজু করলে বাহ্যিক অঙ্গগুলো পরিষ্কার হয়। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে অজু করে পবিত্রতা অর্জনের আদেশ দেন।

আল্লাহ বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন নামাজ আদায়ের জন্য প্রস্তুতি নাও, তখন তোমাদের মুখমণ্ডল ও হাতগুলো কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নাও, আর মাথা মাসেহ করো এবং পাগুলো টাকনু পর্যন্ত ধুয়ে ফেলো। আল্লাহ তোমাদের ওপর কোনো সঙ্কীর্ণতা সৃষ্টি করতে চান না, বরং তিনি তোমাদের পবিত্র করতে ও তোমাদের ওপর স্বীয় নিয়ামত পূর্ণ করতে চান; যেন তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ (সূরা মায়েদা: ৬)।

হাদিস শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘যে অজু করে এবং সুন্দর করে অজু করে, তার গুনাহগুলো শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এমনকি তার নখের নিচ থেকেও গুনাহ বের হয়ে যায়।’ (বুখারি, মুসলিম)।

তিনি আরও বলেছেন, ‘জান্নাতের চাবি নামাজ এবং নামাজের চাবি পবিত্রতা।’ (আবু দাউদ, তিরমিজি)।

আর সাধারণ পরিচ্ছন্নতা অর্জনের জন্য প্রথমেই ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে শুরু করতে হয়। প্রত্যেকে নিজ দায়িত্বে ব্যক্তিগতভাবে পরিচ্ছন্ন হয়ে গেলে পরিবার, সমাজ ও জাতীয় পর্যায়ে পরিচ্ছন্ন করে তুলতে বেশি বেগ পেতে হবে না। নিয়মিত গোসল করা, জামাকাপড় পরিষ্কার রাখা, চুল-দাড়ি আঁচড়ানো, নখ কাটা, দাঁত ব্রাশ করা- মিসওয়াক করা, শরীরের পশম পরিষ্কার করা, তেল-ক্রিম ব্যবহার করা, নিজের রুম-পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখা ইত্যাদি ব্যক্তিগত দায়িত্ব।

দেশের সবাই যদি নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকে, তাহলে দেশের বেশির ভাগই পরিচ্ছন্ন হয়ে যাবে। এরপর আসে শ্রেণিভেদে বাড়ির আঙিনা, বিদ্যালয়ের আঙিনা, ক্লাসরুম, রাস্তাঘাট, দোকানপাট, অফিস-আদালত ইত্যাদি পরিষ্কার করার বিষয়। পরিচ্ছন্নতা অর্জনের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমার পোশাক-পরিচ্ছদ পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন রাখো এবং অপবিত্রতা থেকে দূরে থাকো।’ (সূরা মুদ্দাসসির: ৪-৫)।

পোশাক-পরিচ্ছদের পাশাপাশি নিজেদের ব্যবহার্য অন্যান্য সামগ্রী এবং পরিবেশও পরিচ্ছন্ন রাখা জরুরি।

পরিচ্ছন্নতা অর্জনের ওপরে বর্ণিত অনুষঙ্গগুলো সবই নিজের ওপর নির্ভর করে। কেউ যদি শহর-নগর-গ্রামের এখানে সেখানে মলত্যাগ না করেন, বাসাবাড়ির ওপর থেকেই ময়লা-আবর্জনা না ফেলেন, ডাস্টবিনের মুখে বা আশপাশে না ফেলে ডাস্টবিনের ভেতরে ফেলেন; তাহলে তো পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন হওয়ার সুযোগই পাবে না। এর পরও যদি কোনো জায়গা অপরিচ্ছন্ন হয়ে যায়, মিলেমিশে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।

পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশ দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, ‘পানির ঘাটে, রাস্তার মাঝে, গাছের ছায়ায় মলত্যাগ থেকে বিরত থাকবে।’ (মিশকাত)।

আসুন আমরা আত্মিক ও বাহ্যিক উভয় ধরনের পবিত্রতা অর্জন করে ইহ-পরকালীন সফলতা লাভ করি। আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন। আমিন।


শেয়ার করুন