ইসলামে নৈতিকতা ও আচরণ

islamসিটিএন ডেস্ক :

নৈতিকতা বলতে মুলতঃ আমরা বুঝি মানুষ অন্যদের মানুষ ও মানবজাতি বহির্ভূতদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করে তার নির্যাস ও রূপরেখা। অন্যান্যদের সঙ্গে পারস্পরিক কল্যাণ, প্রবৃদ্ধি, সৃজনশীলতার উন্নয়নে কিভাবে মানুষ আচরণ করে এবং কীভাবে মন্দের পরিবর্তে ভালো, ভুলের পরিবর্তে শুদ্ধতার জন্য প্রয়াস চালায় নৈতিকতা তারই নির্দেশনা দেয়। নৈতিকতার ক্ষেত্রে ইসলামের রয়েছে এক পূর্ণাঙ্গ ধারণা যা মানবজাতির নৈতিকতা বিকাশে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।

ইসলামে চরিত্র বা নৈতিকতাকে বুঝাতে সাধারণত আখলাক (খুলুক শব্দের বহু বচন), হুসনুন খূলুক, আদব শব্দত্রয় ব্যবহৃত হয়।

‘খুলুক’ শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য, প্রাকৃতিক গঠন, স্বভাব, চরিত্র, প্রকৃতি, মেজাজ, নৈতিকতা ইত্যাদি। আর এর বহুবচন আখলাক শব্দের অর্থ হচ্ছে চরিত্র, নৈতিকতা।

হুসনুন খুলুক শব্দগুচ্ছ দ্বারা বুঝায় সুন্দর স্বভাব, সচ্ছরিত্র, সৎস্বভাব, উন্নত স্বভাব-চরিত্র ইত্যাদি। আদব শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে মার্জিত আচরণ, পরিশীলিত, সামাজিক নিয়মানুবর্তীতা, নিয়মানুগ আচরণ ইত্যাদি।

বাস্তব জীবনে একজন মুসলিমের খাবার ও পানীয় গ্রহণের সময় তার আদব কেমন হওয়া উচিৎ। মানুষের সঙ্গে ভাব-বিনময়ের আদব কেমন হবে, কিভাবে তার সালাম প্রদান, অনুমতি গ্রহণ, বসা, কথা বলা, আনন্দ ও শোক প্রকাশ করা, হাঁচি দেওয়া ও হাই তোলার মত বিবিধ কাজ সম্পন্ন হবে তার সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে ইসলামে।

তখনই একজন মুসলিম কাঙ্খিত মানের ভদ্র ও সভ্য মানুষ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে এবং নিজেকে অন্যান্য জাতির চেয়ে ভিন্ন বৈশিষ্ট্যে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে, যখন ইসলামি শিষ্টাচারের সৌন্দর্যকে ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও দুনিয়ার দিক দিগন্তে তুলে ধরতে পারবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তুমি আল্লাহকে ভয় করো (তাকওয়া অবলম্বন করো)। কেননা তা তোমার সমস্ত কিছুকে সৌন্দর্য্যমন্ডিত করে দেবে । (বায়হাকী, শুয়াবিল ঈমান)

রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّ الْهَدْىَ الصَّالِحَ وَالسَّمْتَ الصَّالِحَ, وَالاِقْتِصَادَ جُزْءٌ مِنْ خَمْسَةٍ وَعِشْرِينَ جُزْءًا مِنَ النُّبُوَّةِ

‘নিশ্চয়ই উত্তম চরিত্র, ভালো ব্যবহার ও পরিমিত ব্যয় বা মধ্যমপন্থা অবলম্বন করা নবুয়তের পঁচিশ ভাগের এক ভাগ সমতুল্য।’ (আবু দাউদ)

হজরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, اُطْلُبْ الْأَدَبَ فَإِنَّهُ زِيَادَةٌ فِي الْعَقْلِ, وَدَلِيلٌ عَلَى الْمُرُوءَةِ ، مُؤْنِسٌ فِي الْوَحْدَةِ وَصَاحِبٌ فِي الْغُرْبَةِ ، وَمَالٌ عِنْدَ الْقِلَّةِ

অর্থাৎ ‘তুমি আদব অন্বেষণ কর। কারণ, আদব হলো বুদ্ধির পরিপুরক, ব্যক্তিত্বের দলীল, নিঃসঙ্গতায় ঘনিষ্ঠ বন্ধু, প্রবাসজীবনের সঙ্গী এবং অভাবের সময়ে সম্পদ।’

হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, تَأَدَّبُوا ثُمَّ تَعَلَّمُوا অর্থাৎ ‘তোমরা আগে সুসভ্য হও, তারপর জ্ঞান অর্জন কর।’

কোনো কোনো দার্শনিক বলেন, لَا أَدَبَ إلَّا بِعَقْلٍ ،وَلَا عَقْلَ إلَّا بِأَدَبٍ অর্থাৎ ‘আকল (বুদ্ধি) ছাড়া আদব হয় না; আবার আদব ছাড়া আকলও হয় না।’ অর্থাৎ একটি আরেকটির পূরিপূরক। আল্লাহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে প্রতিটি কাজে আদব রক্ষা করে চলার তাওফিক দান করুন। আমিন।


শেয়ার করুন