ইনানীর বীচ কর্মী বেলাল ভাইয়ের আত্মকাহিনী

11998677_460182834164339_1407415135_nনিজস্ব প্রতিবেদক :

কক্সবাজার জেলার উখিয়ার জালিয়া পালং ইউনিয়নের ইনানী সমুদ্র সৈকতের নিরাপত্তা ও সার্বিক সেবায় নিয়োজিত বীচ কর্মী মুহাম্মদ বেলাল উদ্দিন পর্যটক,ব্যবসায়ী,পুলিশ এবং প্রশাসনের সকল স্তরের আগত কর্মকর্তাদের নিকট সততা, নিষ্ঠা, সাহসিকতা,দক্ষতার মূর্ত প্রতীক। তার বৈচিত্রময় এসব গুনাবলীর কারণে বীচ কর্মী বেলাল উদ্দিন হয়ে উঠেছেন আগত পর্যটকসহ ইনানী বাসীদের প্রিয় বেলাল ভাই।

বেলাল ভাইয়ের এসব জনপ্রিয়তার কারণ সর্ম্পকে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ২০১২ সালের জানুয়ারী মাসে ইনানী সমুদ্র সৈকতের একজন বীচ কর্মী হয়ে যোগদান করেছিলাম। সেই থেকে বীচের যে কোন সমস্যা সম্ভাবনা নিয়ে খুবই ভাবতাম। কারণ আমরা যদি এই পাথুরে সৈকতটির মান বজায় রাখতে পারি, নিরাপত্তা দিতে পারি তাহলে এলাকার সুনাম দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। লাভবান হবে ইনানী সহ কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প। এই মানসে আমার বীচ কর্মীতে যোগদান। তাই সৈকতের যে কোন মুর্হুতকে নিয়ে আমি চিন্তা করি আর সবার বিপদে দ্রুত সহযোগিতার মানসকিতা নিয়ে এগিয়ে আসার চেষ্টা করি। বীচ কর্মী বেলাল একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, ২০১৩ সালে শীতকালীন মৌসুমে ৫ জন পাকিস্থানি পর্যটক ইনানী সমুদ্রে ৩(তিন) ডেউয়ের মাঝখানে গোসল করার সময় ভেসে যেতে দেখে নিজে সাগরে সাতাঁর কেটে ৪ জনকে কোন রকম উদ্বার করার সুযোগ হলেও ১ জনকে উদ্বার করা সম্ভব হয়নি এবং ওই হতভাগা লোকটির লাশ বিকালের জোয়ারে পানিতে সমুদ্রতীরে ভেসে ওঠে ।

সেই দিন সাহসের সাথে সাগরে ঝাপ দিয়ে ডুবে যাওয়া ৪ জনকে উদ্বারের যে দু:সাহসিক অভিযান,যা আজো মনে পড়লে আমার কাছে শুধু স্বপ্ন মনে হয় । আসলে সেদিন আমার প্রচেষ্টায় আল্লাহর রহমতে ৪ জন লোকের যে নতুন জীবন ফিরে পেয়েছিল এতে আমাদের দেশের যেমন সুনাম বেড়েছে তেমনি ইনানী সৈকতের কদর বিশ^ পরিমন্ডলে নতুন দিগন্ত সঞ্চার করেছে। সেই সাথে অনেক কষ্টের বিনিময়ে অর্জিত পর্যটক মুখরিত পরিবেশকে পুঁজি করে কোন অপরাধী যাতে মাথা ছাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে দিকে আমাদের সার্বক্ষণিক নজর থাকে। যার ফলে অনেক ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে ধরে পুলিশকে দিয়েছি। এ ছাড়া সবসময় সৈকতের সকল ব্যবসায়ীদের যেন কোন ক্ষতি না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখি।

প্রতিদিনকার রুটিনমতে সকালে ঘুম থেকে ওঠে নিজের কর্মস্থল সৈকতের সেবার মানস রেখে দায়িত্বপালন করি যেন কোন পর্যটক সাগরে গোসল করতে গিয়ে ভেসে না যায়। যেমন আরেকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা সম্পর্কে পর্যটন কর্মী বেলাল জানান, এই বছর রমজানের ঈদের পরের দিনে কক্সবাজার সদর উপজেলার ইসলামাবাদ এলাকার রুবেল (২২) নামের এক যুবক সাগরে ভেসে যেতে দেখে একটি রশি নিয়ে সাগরে লাফ দিয়ে ছিলাম কিন্তু দেখি তার সাথে আরো তিনজন ইনানী বড় খালের মাঝখানে ডুবে যাচেছ,তখন কোন রকম তিনজনকে ডুবন্ত অবস্থা থেকে উদ্বার করার সুযোগ হলেও রুবেলকে উদ্বার করতে পারিনি। কারণ সে অনেক দূরে ভেসে যায় আর আমাদের নিকট লাইফ জ্যাকেট সহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বলতে কিছুই ছিলনা । তারপরও আল্লাহর রহমতে প্রচন্ড উত্তাল সাগর থেকে ৩ জনকে জীবিত উদ্বার করে আনতে সক্ষম হই ।

যদি আমাদের আরো প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম প্রস্তুত থাকতো হয়তো হতভাগা যুবক রুবেলকে হারাতাম না,সেই সাথে আমাদের সাহসিকতায় যোগ হতো নতুনত্ব । এ ভাবে বেলাল তার নিজস্ব দক্ষতার বলে ইনানীর সমস্ত পরিচিত মহলের কাছে বেলাল ভাই বলে উপাধি লাভ করেন। বেলালের সঙ্গে আরো কথা বলে জানা যায়, তার যে অদম্য সাহসিকতা আর সম্প্রীতির মানসিকতা তা সত্যিকারে যে কাউকে আলোড়িত করে দেয় । বেলালের আরো একটি পরিচয় হচেছ প্রশাসনের কোন অফিসার সৈকতে আসলে প্রথমে বেলালকে খুঁজে, কারণ তাদের সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে জেলা প্রশাসকের অফিস থেকে। সে সুবাধে বীচের সেবক হিসেবে বেলাল অন্যান্যদের চেয়ে একটু দক্ষ বিদায় তার কথায় বলে দেন যে কেউ। তাই প্রথমে ট্যুরিস্ট পুলিশদের খোঁজার আগে বেলাল ভাইকে খুঁজেন সবাই।

যার ফলে বেলাল আরো সহজিকরণে বেলাল নামের লোকটি সবার নিকটে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। এমনও দেখা যায় যে কোন ব্যবসায়ী কোন রকম বিপদে পতিত হলে সবার আগে বীচ কর্মী বেলালকে খুঁজেন। এতে আঁচ করা যায় বেলাল আসলে এই এলাকার একজন প্রজাতন্ত্রের অনন্য সেবক হিসেবে সর্বাঙ্গে বহুল পরিচিত। জানাযায়, তার বাড়ি ইনানী সৈকতের নিকটস্থ ছোট ইনানী গ্রামে এবং সে স্থানীয় এলাকার আবুল কাসেমের পুত্র আর পরিবারে তিন ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড়।

এ দিকে তার জনপ্রিয়তার কারণ এবং অনুভূতি সর্ম্পকে জানতে চাইলে বেলাল সিটিএনকে বলেন, আমি এই পেশায় নিজেকে অনেক আনন্দবোধ করি কারণ মানুষের কল্যাণে হাত বাড়িয়ে দেওয়া আমার একটি নেশা। বিশেষ করে আমি আগে ইনানী সৈকতের একজন ব্যবসায়ী হিসেবে সময় পার করছিলাম। কিন্তু মাঝে মাঝে যখন দেখতাম, পর্যটকদের বিভিন্ন দুর্ভোগ । তখন ইচেছ করে সাহসিকতা ও সৎ মনোভাব নিয়ে বীচ কর্মী হিসেবে যোগদান করেছি। সত্যি বলতে, আমি যেমন চিন্তা করছি তেমনি এখানকার সংশ্লিষ্টরা আমাকে ঠিক সেভাবে মর্যাদার আসীনে নিয়ে এসেছে। যদি এ ভাবে সবার সহযোগিতা সবসময় অটল থাকে তাহলে এই পাথুরে সমুদ্রের পর্যটক সংখ্যা দিনদিন বৃদ্বি পাবে আমার দৃঢ় বিশ^াস।

উল্লেখ্য যে, ইনানী সমুদ্র সৈকতটি কক্সবাজার শহর হতে ২২ কিলোমিটার অদূরে ইনানী মেরিন ড্রাইভ সড়কের নিকটে অবস্থিত এবং এখানকার নিরাপত্তায় প্রতিদিন জেলা ট্যুরিস্ট পুলিশের ৪ (চার) সদস্য সহ তিনজন বীচ কর্মী নিয়োজিত থাকেন। বেলালের সহযোগি অন্য দুইজন হলেন, নাজিম ও মঞ্জুর।


শেয়ার করুন