আমি শাসক না, জনগণের সেবক : শেখ হাসিনা

5c2f381b85dc2499c3b0051c24a2286e-590da3440ba12

মা, বাবা, ভাই বোনকে হারানোর পরও কেবল বাবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে দেশে এসেছিলেন শেখ হাসিনা। এখন তিনি প্রধানমন্ত্রী, ক্ষমতায় আছেন গত আট বছর ধরে। তিনি বলেছেন, দেশকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাবেন তিনি। তিনি বলেছেন, তার পথ যে কঠিন এটা তিনি জানেন।

শনিবার কক্সবাজার সফরে গিয়ে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে শেখ কামাল ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় এ কথা বলেন দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমি শাসক না, জনগণের সেবক হিসেবে এই বাংলাদেশ আমি পরিচালনা করবো। আমার পিতা দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছে, আমি মনে করি এটা আমার কর্তব্য।’

‘আমি জানি আমার জন্য কঠিন পথ’- এমন মন্তব্য করে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এই মাটিতে আমার বাবাকে যেমন হত্যা করা হয়েছে, আমার মাকে হত্যা করেছে, আমার ভাই কামাল, জামাল, ছোট্ট ১০ বছরের রাসেল তাদেরকে হত্যা করেছে। কামাল-জামালের নবপরিনিতা বধু সুলতানা, রোজীকে হত্যা করা হয়েছে। আমার একমাত্র চাচা, আবু নাসের তাকে হত্যা করা হয়েছে। সকলেই মুক্তিযোদ্ধা ছিল।’

‘একই দিনে আমার পরিবারের মেজো ফুপুর বাড়িতে আক্রমণ করেছে, তার ছেলে, ছেলের বউকে হত্যা করেছে। আমার সেজো ফুপুর বাড়িতে আক্রমণ করেছে, আমার সেজো ফুপু গুলিবিদ্ধ হয়েছে, তার স্বামীকে হত্যা করেছে। তার ছেলেকে হত্যা করেছে, তার দুই মেয়েকে হত্যা করেছে। তার চার বছরের নাতিকে হত্যা করেছে, তার বাড়িতে আত্মীয় স্বজনকে হত্যা করেছে’-বলেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘আমার ছোট ফুপুর বাড়ি আক্রমণ করেছে, আমার ফুপাকে খুঁজে পায়নি, পরে ফুপুকে তিন মাস গৃহবন্দী করে রেখেছে, পরে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। আমার ছোট ফুপুর ছোট মেয়ে, তাকে হত্যা করেছে। এইভাবে আমাদের পরিবারের ওপর হত্যাযজ্ঞ চলেছে।’

৭৫ এর ১৫ আগস্টের হত্যাযজ্ঞের বর্ণনা দিয়ে দেশে ফেরার কারণ ব্যাখা করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘মানুষ আপনজন মারা গেলে একটা শোক সইতে পারে না। আর আমি আর আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। আমরা বেঁচে গিয়েছিলাম ঠিক। কিন্তু একটা দিন যখন শুনলাম আমার মা, বাবা ভাই-কেউ নেই, আপনারা একটু উপলব্ধি করতে পারেন, অন্তত যারা স্বজন হারিয়েছেন তারা বুঝবেন যে কীভাবে আমাদের দিন কেটেছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রবাসে থাকতে হয়েছে, দেশে ফিরে আসতে পারনি। দেশে আসতে দেয়নি আমাকে। ছয় বছর পর আওয়ামী লীগ যখন আমাকে সভাপতি নির্বাচিত কবে, জনগণের সমর্থন নিয়ে জোর করে দেশে ফিরে এসেছিলাম।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসেছিলাম একটাই কারণে, সব শোক, সব ব্যাথা বুকে ধারণ করে শুধু বাংলার মানুষ, যে মানুষের জন্য আমার বাবা জীবন দিয়েছেন, যে মানুষের জন্য আমার মা জীবন দিয়েছেন, ভাইরা জীবন দিয়েছে, সেই মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তন করে, এই মানুষকে নিয়ে আমার বাবা যে স্বপ্ন দেখেছে, যে বাংলার দুঃখী মানুষ উন্নত জীবন পাবে, ক্ষুধার্থ মানুষ ক্ষুধার অন্ন পাবে, বিনা চিকিৎসায় কোনো মানুষ মারা যাবে না সে জন্য।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের মানুষ চিকিৎসা পাবে, প্রতিটি মানুষ গৃহ পাবে, প্রতিটি মানুষ উন্নত জীবন পাবে, ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মত মানুষ হবে। বাংলাদেশ বিশ্বসভায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হবে। তার (বঙ্গবন্ধু) সেই চিন্তা-চেতনাকে বাস্তবায়ন করার জন্য সেই শোক, সেই ব্যাথা বুকে নিয়েও আমি আপনাদের মাঝে ছুটে এসেছি শুধু আপনাদের কল্যাণ করার জন্য।

 


শেয়ার করুন