আন্দোলন বিএনপিকে কোথায় নিবে

BNP_thereport24.com
মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

 প্রায় আড়াই মাসেরও অধিককাল ধরে একনাগাড়ে অবরোধ এবং প্রায় সমানতালে হরতালের মতো কঠিন কর্মসূচি চলছে বলা না গেলেও, বিএনপি-জামায়াতসহ ২০-দলীয় জোটের ঘোষণায় আছে। পেট্রলবোমার মতো মারণাস্ত্র দ্বারা টার্গেট করে নিরীহ অসহায় সাধারণ পথচলা মানুষকে যেভাবে অগ্নিদগ্ধ ও হত্যা করা হয়েছে, তাতে শুরু থেকে এ অবরোধ-হরতাল রাজনৈতিক আন্দোলনের সব বৈশিষ্ট্য হারিয়ে সন্ত্রাস ও নাশকতামূলক কর্মকা- হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সুতরাং শুরুতেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বোদ্ধাদের কাছে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, এই মানুষ মারা কর্মসূচি দ্বারা বিএনপি কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারবে না। চলমান অবরোধ-হরতাল, পেট্রলবোমার আক্রমণে প্রায় একশ নিরীহ মানুষকে অগ্নিদগ্ধ ও মৃত্যু, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি প্রসঙ্গে পক্ষ-বিপক্ষের যুক্তিতর্ক, বক্তব্য-প্রতিবেদন, প্রবন্ধ-নিবন্ধ সম্পর্কে এখন সবাই অবহিত। তাই সেসব প্রসঙ্গে আজ আর কিছু লিখছি না। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সর্বশেষ সাংবাদিকদের ডেকে তার গুলশান কার্যালয় কাম আবাসিক ভবনে যে ভাষণ দিয়েছেন, সরাসরি সেখান থেকে আজ শুরু করব। কিন্তু তার আগে একটি কথা না বলে পারছি না। একনাগাড়ে অবরোধ এবং বেছে বেছে এসএসসি পরীক্ষার দিন হরতাল আরোপ করার জন্য ১৫ লাখ শিক্ষার্থীর কোমল মনে যে ঘৃণার জন্ম হলো তার কুফল সংশ্লিষ্ট দল ও তার নেতা-নেত্রীদের বহুকাল বহন করতে হবে। খেসারত দেওয়া লাগবে। ১৩ মার্চ বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ ৪০ মিনিটের ভাষণে নতুন কোনো কথা ও বক্তব্য ছিল না। তিনি আপসহীন কঠোর ভাবমূর্তি বজায় রেখে আগের জায়গায় অনড় আছেন। তবে সবার চোখে একটি বিষয় বিশেষভাবে ধরা পড়েছে। তাহল পেট্রলবোমায় অগ্নিদগ্ধ হয়ে মর্মান্তিক যন্ত্রণা ভোগ করে যেসব সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ মারা গেছেন, তাদের সম্পর্কে ওই দীর্ঘ ভাষণে একটি কথাও বলা হয়নি এবং সামান্য সহানুভূতিও প্রকাশ করা হয়নি। যদিও কথিত আন্দোলনে বিএনপির ভাষায় যেসব নেতাকর্মী এবং মানুষ পুলিশের জেলজুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তাদের আগামীতে মূল্যায়ন করা এবং ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে বিএনপি চেয়ারপারসন তার ওই ভাষণে উল্লেখ করেছেন। দেশের মানুষ এবং আমার ধারণা বিএনপির নেতা-কর্মীরাও প্রত্যাশা করেছিল বেগম খালেদা জিয়া প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল ও সরকারকে মোকাবিলা করার জন্য একনাগাড়ে দীর্ঘদিনের ধাক্কায় ইতিমধ্যে মৃত্যু হওয়া অবরোধ-হরতালের পরিবর্তে নতুন চমক সৃষ্টিকারী আরও কৌশলী ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন কর্মসূচি দিবেন। কিন্তু ভাষণ শোনার পর সবাই হতাশ হয়েছেন। সর্ব পেশা ও স্তরের মানুষ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত ও অকার্যকর অবরোধ-হরতাল অনির্দিষ্টকালের জন্য অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন। বাস্তবে অস্তিত্বহীন, কিন্তু কেতাবি এ কর্মসূচির কার্যকারিতা শুধু এতটুকু যে, মানুষের মধ্যে একটা অজানা ভয় ও আতঙ্ক এখনো বিরাজ করছে। সময়ের ব্যবধানে সেটাও চলে যাবে। কারণ, অনেক প্রতিকূলতা এবং স্বাধীনতার পর গত ৪৪ বছরের ঘটনা প্রবাহের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় ১৬ কোটি মানুষের মধ্যে একটা সহজাত সামষ্টিক শক্তি সৃষ্টি হয়েছে।
যার ফলে অযৌক্তিক, হঠকারী ও মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক কর্মসূচি দিয়ে শুধু বিএনপি নয়, কোনো দলই আর জনসমর্থন তো পাবেই না, মানুষকে আর দাবিয়েও রাখতে পারবে না। মানুষ সেটা মানবে না। বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগে মানুষ এখন আল্ট্রা সুপারসনিক গতিতে চলছে। তাই সময়ের চাহিদা এত দ্রুত বদলাচ্ছে যে, বিংশ শতকের শেষ কোয়ার্টারের কর্মসূচি একবিংশ শতাব্দীর প্রথম কোয়ার্টারে এসে তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবী ধাক্কায় আউটডেটেড ও বস্তাপচা হয়ে গেছে। এটাকেই বলে প্রগতি। সুতরাং প্রগতিশীল না হয়ে অন্ধের মতো পুরনো পরিত্যক্ত পথে চললে এগোনো যাবে না, বরং পিছিয়ে থাকবে। তাই অবরোধ-হরতাল অব্যাহত রেখে রাজনৈতিক কোনো ফায়দা কেউ আদায় করতে পারবে না। যুবদলের এক কেন্দ্রীয় নেতা মীর নেওয়াজের লালবাগের বাড়ি থেকে গত ১৮ মার্চ বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জামাদি উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিবিরের শক্ত ঘাঁটি চট্টগ্রামের সরকারি কলেজে শিবিরের আস্তানায় পাওয়া গেছে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র। এতে আশঙ্কা হয় পেট্রলবোমায় ব্যর্থ হয়ে অবরোধ-হরতালকারীরা বড় আকারের নাশকতা ও হত্যাকা- ঘটাতে পারে। কিন্তু সে রকম ঘটলে তাতে বিএনপির কোনো রাজনৈতিক লাভ হবে না। বরং বিশ্ব দরবারে সন্ত্রাসী দল হিসেবে চিহ্নিত হবে।
১৩ মার্চ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যের ধারা দেখে মনে হয়েছে ইতিহাসের একটি ভুল ও ব্যর্থ উদাহরণের পথে হেঁটে বিএনপি যেন কোথায় আটকা পড়ে গেছে। বের হতে পারছে না। ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পশ্চিম রণাঙ্গনে ভারতের ওপর বিমান আক্রমণ চালিয়ে আক্রমণকারী হিসেবে পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। পাকিস্তানি জেনারেলদের মূল্যায়ন ছিল, আনুষ্ঠানিকভাবে দুদেশের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও জাতিসংঘের চাপে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছার আগেই সেই যুদ্ধ বন্ধ হবে এবং যুদ্ধ বিরতির শর্তানুযায়ী বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে ভারত সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হবে। তারপর যে কোনোভাবে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক জগাখিচুড়ির একটা সমাধান করে দিতে পারলে এ যাত্রায় পাকিস্তান রক্ষা পাবে। কিন্তু ফল হয়েছিল হিতেবিপরীত, যা আমরা সবাই জানি। বিএনপি হয়তো ভেবেছিল, অবরোধ-হরতালের ছদ্মবেশে ও আড়ালে ব্যাপক আকারে সাধারণ মানুষের জীবনহানি হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে সরকার বিএনপির সঙ্গে সংলাপে বসতে বাধ্য হবে এবং তাতে বিএনপির রাজনৈতিক দাবির যৌক্তিকতা প্রতিষ্ঠিত হবে। আর সরকার সন্ত্রাসের কাছে একবার নত হলে আগামীতে আরও বড় আকারের সন্ত্রাস করে বিএনপি তাদের মূল দাবি নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা বিএনপির সুবিধা অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকারের দাবি আদায় করতে পারবে এবং মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে সরকার বাধ্য হবে। কিন্তু বিএনপির হিসাবে ভুল হয়েছে যে, তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণে কেউ সন্ত্রাস-নাশকতা করে তার দোষ অন্যের ওপর চাপানোর দিন শেষ। অনেকের ধারণা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বেগম খালেদা জিয়ার আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা রিয়াজ রহমানের ওপর বিএনপির পক্ষ থেকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে নকল আক্রমণের মহড়া করা হয়েছে। সরকারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হয়েছে এমন কথা প্রচারের জন্য মার্কিন কংগ্রেস সদস্যদের নকল বিবৃতি বিএনপির পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়। ভারতের বিজেপিপ্রধান অমিত শাহের ফোন সম্পর্কিত মিথ্যা খবর প্রচারের উদ্দেশ্য ছিল একই। আইএস সমতুল্য ধর্মান্ধ জঙ্গিদের প্রশ্রয়দাতা জামায়াতের সঙ্গ এবং ২০০১-২০০৬ মেয়াদে ভারতের রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান ও কার্যকলাপের ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিএনপি কার্যত নিঃসঙ্গ। সুতরাং বলা যায় অবরোধ-হরতালের নামে যতই সন্ত্রাস ও নাশকতা চালানো হোক না কেন, সরকার তার কাছে নতি স্বীকার করবে না এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কোনো সমর্থনও বিএনপি পাবে না। এখানে আরেকটি কথা না বললে প্রাসঙ্গিক আলোচনাটি অসম্পূর্ণ থাকবে। আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক সমীকরণের খেলায় বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিন্ন চিন্তা থাকলেও ভারত-মার্কিন সম্পর্কের সমীকরণে আঞ্চলিক ইস্যুতে ভারতই শেষ কথা বলবে। এ হিসাবটি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে আরেকটি অলীক স্বপ্ন কাজ করে। তারা ভাবে সন্ত্রাস-নাশকতা চালিয়ে যদি প্রমাণ করা যায় জনজীবন রক্ষায় সরকার ব্যর্থ হয়েছে, তাহলে সেনাবাহিনী এগিয়ে আসবে এবং যে কোনো একটি ব্যবস্থায় বর্তমান সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা চলে যাবে। তাই দেখা যায়, ২০১৩ সালের ২৪ মার্চ বগুড়া-জয়পুরহাটের জনসভায় নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করার জন্য বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘সেনবাহিনী নীরব দর্শক থাকতে পারে না, সময় মতো দায়িত্ব পালন করবে সেনাবাহিনী’ (সমকাল ও যুগান্তর ২৫ মার্চ ২০১৩)। ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের নামে বিশৃক্সখলা সৃষ্টির পরিকল্পনা এবং ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতের ধ্বংসযজ্ঞে বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থোকে সমর্থন প্রদানের আহ্বান করা হয় একই উদ্দেশ্যে। সম্প্রতি একটি বহুল প্রচারিত গোপন টেলিফোন আলাপ প্রকাশিত হয়ে পড়ায় বোঝা যায় এ ধরনের ষড়যন্ত্রের পরিকল্পনা এখনো অব্যাহত আছে। তবে আগের কথা বাদই দিলাম, ২০০৬ সালে যে অবস্থায় ছিল তার থেকেও সেনাবাহিনী আজ পেশার প্রতি অত্যন্ত বেশি অনুগত, সুসংগঠিত, সুশৃক্সখল এবং চেইন অব কমান্ড খুবই শক্তিশালী। তাই এসব অপপ্রচার ও উস্কানিতে কোনো কাজ হবে না। আন্দোলন করে কাবু করা বা সরকারের পতন ঘটানোর মতো সাংগঠনিক ক্ষমতা বর্তমান বিএনপির নেই। সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিএনপির অভিজ্ঞ সিনিয়র নেতাদের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আবার আগে রাষ্ট্র পরিচালনার রেকর্ডে তাদের খাতায় আকর্ষণীয় কোনো কৃতিত্ব এবং সুনামও নেই। তারপর জনগণের সরাসরি উপকার হয় এমন কোনো ইস্যুও এখন বিএনপির হাতে নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠিক হয়নি, এ কথা বলে জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা বিএনপির পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ মানুষের কাছে সোজা হিসাব আরেকটি মধ্যবর্তী নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন কোনো সরকার এলে জনগণের জীবনঘনিষ্ঠ বিষয় যেমন- বিদ্যুৎ, কৃষি, খাদ্য, বস্ত্র, যোগাযোগ, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি ইত্যাদি খাতে অতিরিক্ত উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন কি আনতে পারবে? গত এক বছর ধরে এসব ক্ষেত্রের সব সূচকই আছে ঊর্ধ্বমুখী। তা ছাড়া বিএনপির রেকর্ড তো মানুষের মনে আছে। খাত অনুযায়ী একবার তুলনা করলেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রের অনেক জায়গায় এখনো প্রচুর ঘাটতি রয়েছে এবং তার অগ্রায়নের পথে অনেক বাধাও বিদ্যমান। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, ১৯৯১-এর পর থেকে বিগত ২২ বছরে পরপর বিএনপি-আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গণতন্ত্রের বিভিন্ন উপাদানের সূচক যেখানে ছিল তা থেকে গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো উপাদানের কি কখনো অবনতি হয়েছে? তাই গত নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করেনি, শুধু এ কারণে তাদের আন্দোলনের সঙ্গে মানুষ সম্পৃক্ত হবে কেন? এখানে জনগণের স্বার্থ ও কল্যাণ কোথায়? সুতরাং আজকের প্রবন্ধের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, অবরোধ-হরতালের আড়ালে সন্ত্রাস-নাশকতায় কাজ হবে না, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়া যাবে না, ষড়যন্ত্র বা সেনাবাহিনীকে উস্কে দিয়ে কোনো লাভ হবে না, আন্দোলন করার মতো কোনো যৌক্তিক ইস্যু বা সাংগঠনিক ক্ষমতা বিএনপির নেই। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠবে বিএনপি তাহলে এখন কোন দিকে যাচ্ছে। আমার মনে হয় বিএনপির জন্য দুটি রাস্তা এখনো খোলা আছে। প্রথমত, নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ রাজনীতির অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে বিএনপিকে প্রজ্ঞা ও মেধা ব্যবহার করে কৌশলে সব কুল রক্ষা করে বর্তমান আটকা অবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সে কৌশল বের করা এখনো কঠিন নয় বলে মনে হয়।
তারপর ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের নামে ধ্বংসাৎদক কাজ করার দুরভিসন্ধি এবং হেফাজতের কর্মসূচিকে সমর্থন দেওয়ার মতো অন্ধকারের গলি থেকে বিএনপিকে বের হয়ে আসতে হবে। তাহলে সরকার তাদের প্রকাশ্যে সভা-সমাবেশ করার অনুমতিদানে বাধ্য হবে। হরতাল-অবরোধ বাদ দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ সংগ্রাম করে আগামী নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত হওয়া উচিত। আর দ্বিতীয়ত, বিএনপি যা করতে পারে তাহলো- বর্তমান হরতাল-অবরোধ জারি রেখে দ্রুত সরকার পতনের জন্য বর্তমান ও আগের ন্যায় বহুমুখী প্রকাশ্য ও গোপন তৎপরতা চালাতে পারে। কিন্তু এ পথের পরিণতি বিএনপির জন্য শুভকর হবে না, দেশের জন্যও মঙ্গল হবে না। দ্বিতীয় পথে অটল থাকলে পাকিস্তানের আইয়ুব, মোশাররফ, ফিলিপাইনের মার্কোস এবং চিলির অগাস্টো পিনোশে, এসব স্বৈরশাসকের গড়া রাজনৈতিক দল যেভাবে ইতিহাসের অতল গহ্বরে হারিয়ে গেছে, সব সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও সৃষ্টির ইতিহাস একই হওয়ায় বিএনপিও একদিন ইতিহাস থেকে হারিয়ে যাবে। বাংলাদেশ প্রতিদিন
লেখক : কলামিস্ট ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক


শেয়ার করুন