আত্মশুদ্ধির অন্যতম মাধ্যম ইতিকাফ 

imgres13আজ ২১ রমজান। গতকাল বুধবার সূর্যাস্তের পর থেকে শুরু হয়েছে মুক্তির দশক। শুরু হয়েছে আধ্যাত্মিক আমল ইতিকাফ। ইতিকাফ বলতে বোঝায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের বুকভরা আশা নিয়ে আল্লাহর ঘর মসজিদে অবস্থান করা। ইতিকাফ একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল।
একদিনের ইতিকাফে দোজখ তিন খন্দক দূরে সরে যায়। এক খন্দকের পরিমাণ হলো আকাশ ও জমিনের দূরত্বের সমান। ইতিকাফ তিন ধরনের হয়ে থাকেথ নফল, ওয়াজিব ও সুন্নত। নফল ইতিকাফ বছরের যে কোনো দিন করা যায়। নিজের সুযোগমতো খুব সামান্য সময়ের জন্যও ইতিকাফ করার সুযোগ আছে। শুধু তা-ই নয়, একজন মুসল্লি যখন জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের জন্য মসজিদে প্রবেশ করেন, তখনও তিনি নফল ইতিকাফের নিয়তে মসজিদে প্রবেশ করতে পারেন। তাহলে যতক্ষণ তিনি মসজিদে অবস্থান করবেন, ততক্ষণ ইতিকাফ করার সওয়াব পাবেন। মসজিদে প্রবেশের পাঁচটি সুন্নতের একটি হলো ইতিকাফের নিয়ত করে মসজিদে প্রবেশ করা।
ইতিকাফ ওয়াজিব হয় মান্নতের কারণে। বছরের যে কোনো সময় এ ধরনের ইতিকাফ করার সুযোগ আছে। তবে এর জন্য ন্যূনতম পরিমাণ হলো এক রাত ও এক দিন। শুরু করতে হবে সূর্যাস্তের পূর্বে, শেষ করতে হবে পরের যে কোনো দিনের সূর্যাস্তের পর। ওয়াজিব ইতিকাফের জন্য ইতিকাফে থাকার পাশাপাশি তাকে রোজাও রাখতে হয়।
রমজানের শেষ দশক ইতিকাফ করা নবীজির (সা.) বরকতময় সুন্নত। তিনি হিজরত-পরবর্তী মাদানি জীবনের প্রতিবছর পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। সুন্নত ইতিকাফ করার জন্য ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্বে মসজিদে প্রবেশ করতে হয়। ইতিকাফ থেকে বের হতে হবে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা যাওয়ার নিশ্চিত সংবাদপ্রাপ্তির পর। এ সময়ের ভেতর প্রস্রাব, পায়খানা, অজু ও ফরজ গোসলের জন্য শুধু মসজিদের বাইরে বের হওয়া যাবে। খাবার মসজিদে পৌঁছে দেওয়ার মতো কোনো লোক যদি না থাকে, তবে খাবার নিয়ে আসতেও যাওয়া যাবে। এসব প্রয়োজনে মসজিদের বাইরে গেলেও অবশ্যই সময়ের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। প্রয়োজন পূরণের অতিরিক্ত একমুহূর্তও দেরি করা যাবে না। তুলনামূলক নিকটে প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা থাকলে দূরে যাওয়া যাবে না। উপরোক্ত প্রয়োজনগুলো ছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজনে বাইরে গেলে ইতিকাফ ভেঙে যাবে। আবার উপরোক্ত প্রয়োজনে বাইরে গিয়ে অযথা বেশি সময় দেরি করলেও ইতিকাফ ভেঙে যাবে। চিকিৎসার জন্য, জানাজার নামাজের জন্য, কোনো বিপদগ্রস্ত মানুষকে সাহায্য করার জন্য বাইরে গেলেও ইতিকাফ ভেঙে যাবে। কোনো কারণে ইতিকাফ ভেঙে গেলে বা ভাঙতে হলে পরে রোজাসহ একদিনের ইতিকাফ কাজা করতে হবে।
ইতিকাফ অবস্থায় একেবারে চুপ থাকা অনুচিত। অনেককে দেখা যায় ইতিকাফের সময়গুলো অহেতুক গল্পগুজব করে শেষ করে দেন। এটা হবে চরম ভুল কাজ। খুব গুরুত্বের সঙ্গে কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, তাসবিহ, নফল নামাজ, দোয়া, এস্তেগফার ইত্যাদির মাধ্যমে ইতিকাফের সময় কাটানো বুদ্ধিমানের পরিচয়। বিশেষভাবে ইশরাক, চাশ্ত, আওয়াবিন ও তাহাজ্জুদ নামাজের অধিক পাবন্দি করা দরকার। সালাতুত তাসবিহ নামক নামাজ প্রতিদিন একবার করে পড়া যেতে পারে। সকাল-সন্ধ্যা জিকিরের জন্য খুব উপযোগী সময়।
নারীরাও ইতিকাফ করতে পারবেন। তবে তাদের জন্য মসজিদে ইতিকাফ না করে বাড়ির নামাজঘরে ইতিকাফ করাই শ্রেয়। কারও বাড়িতে যদি নির্দিষ্ট নামাজঘর না থাকে, তবে একটি ছোট কামরাকে বা বড় কামরার এক কর্নারকে ইতিকাফের জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়ে ইতিকাফ করা যাবে।সমকাল


শেয়ার করুন