আজ রাতেই পাকিস্তানের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচ

 

অবশেষে সেই বহুল প্রতিক্ষীত সময়টি এসেছে। পাকিস্তানে আবারো ফিরতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। আজ সন্ধ্যা ৭টায় লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের শেষ টি-২০ ম্যাচটি লড়তে যাচ্ছে পাকিস্তান।
২০০৯ সালে লাহোরে শ্রীলঙ্কার জাতীয় ক্রিকেট দল বহনকারী বাসের উপর হামলার পর থেকে পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট নিষিদ্ধ ছিল। ওই দিন গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দলের ছয়জন খেলোয়ার আহত হন। নিহত হন ছয়জন পুলিশ সদস্য এবং দু’জন সাধারণ মানুষ।
এর পর থেকে পাকিস্তান বেশিরভাগ আন্তর্জাতিক ম্যাচ দুবাইতে আয়োজন করছে।
এর আগে ২০১৫ সালে জিম্বাবুয়ে এবং টেস্ট খেলুড়ে দেশগুলো পাকিস্তানে খেলতে অস্বীকৃতি জানায়।
শ্রীলঙ্কা দলও সেখানে খেলতে না যাওয়ার আবেদন করেছিল। কিন্তু বোর্ড তাতে সারা দেয়নি। তবে দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ইচ্ছাকৃতভাবে পাকিস্তান সফর থেকে নিজেদের বিরত রেখেছেন।
এদিকে এই ম্যাচকে ঘিরে পাকিস্তানে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
কারণ বেশ কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান চাচ্ছে তাদের দেশে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে।
আজ রোববার সকালে পাকিস্তান দল লাহোরে পৌঁছালে কঠোর নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে।
খবরে জানা যাচ্ছে, শ্রীলঙ্কা দলটি আবুধাবি থেকে লাহোরে আল্লামা ইকবাল বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর তাদেরকে হোটেল পর্যন্ত একটি বোমা-নিরোধক বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয়।
যে রাস্তা দিয়ে সফরকারী দলটির বাস যাবে সেই রুট পুরোটা ভারী অস্ত্রসহ পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
একজন প্রেসিডেন্টের জন্য যে ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয় ঠিক তেমনটা নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা হয়েছে তাদের অবস্থান এবং চলাচলের জায়গা।
আজকের ম্যাচটি সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড মরিয়া হয়ে আছে।
কারণ ২০০৯ সালের হামলার পর তারা যে আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে পারে সেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে।
সেই লঙ্কানদের হাত ধরেই পাকিস্তানে ফিরছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট
সন্ত্রাসী হামলার শিকার হওয়া শ্রীলঙ্কা দলের হাত ধরেই আবারো পাকিস্তানের মাটিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরছে। ২০০৯ সালে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামের কাছে শ্রীলঙ্কা দল বহনকারী বাসে হামলার পর থেকেই পাকিস্তানে নিষিদ্ধ রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট।
দুই দলের মধ্যকার চলমান টি-২০ সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচটি দিয়ে পাকিস্তানের মাটিতে ফিরবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় ম্যাচকে সামনে রেখে আইন-শৃংখলা বাহিনীর দশ হাজারের বেশি সদস্য নিয়োগ করবে পাকিস্তান।
সন্ত্রাসী হামলা অব্যাহত থাকায় নিরাপত্তা নিয়ে কোনো কোনো মহল শঙ্কা প্রকাশ করায় প্রধান কোচ নিক পোথাসসহ লঙ্কান দলের বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা এ ম্যাচ খেলতে পাকিস্তান সফরে যাচ্ছেন না।
তবে স্টেডিয়ামের ভিতরে-বাইরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করায় ২০০৯ সালের বন্দুক হামলায় বেঁচে যাওয়া তৎকালীন খেলোয়াড় ও বর্তমানে লঙ্কান দলের ম্যানেজার ও ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করা আসাঙ্কা গুরুসিনহা এবং হাসান তিলকারত্নে দলের সাথে পাকিস্তান সফর করছেন।
রিজার্ভ আম্পায়ার হিসেবে ২০০৯ সালের ৩ মার্চ হামলায় আহত হওয়া পাকিস্তানের আহসান রাজাও আগামীকালের ম্যাচে ফিল্ড আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করবেন। কাপুরুষোচিত সে হামলায় রাজার ফুসফুস ও যকৃতে তাৎক্ষণিকভাবে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছিল।
সংযুক্ত আরব আমিরাতে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের পর শেষ টি-২০টি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে লাহোরে। অবশ্য গত মাসে একই ভেন্যুতে বিশ্ব একাদশের বিপক্ষে তিন ম্যাচের একটি টি-২০ সিরিজও আয়োজন করেছিল পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)।
তালেবানরা কর্মকর্তা বহনকারী বাস লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে চালককে মেরে ফেলার সময় আহত হয়েছিলেন রাজা। তবে আরেকটি বাসের চালক নায়োকোচিতভাবে বাসটি চালিয়ে সকলকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি’কে রাজা বলেন,‘ লাহোরে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার এ ম্যাচে আম্পায়ারিং করাটা হবে দারুণ এক সম্মানের বিষয়।
‘তারা (শ্রীলঙ্কা) অনেক বড় সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছে এবং পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পুনরুজ্জীবিত করতে এ ম্যাচটি অনেক বড় প্রভাব ফেলবে।’
রোববারের টি-২০ খেলার জন্য বড় ধরনের সাহস নিয়েছে শ্রীলঙ্কা এবং এটি পাকিস্তানের জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। কারণ দেশের মাটিতে পাকিস্তানের ক্রিকেট ধ্বংস হবার পথেই ছিলো।
এক হাজারের মত নিরাপত্তা কর্মীর নিয়োগ থাকবে স্টেডিয়ামে। নিরাপত্তার চাদরে পুরো স্টেডিয়াম ঢেকে ফেলা হবে। এছাড়া আকাশে হেলিকপ্টারে মহড়ার পাশাপাশি সর্বদা টিভিতে মনিটরিং করবেন নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আরও একটি ইউনিট।
এটিকে ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িত করছেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান নাজাম শেঠি। এ ঐতিহাসিক ম্যাচের সাক্ষী হবেন পাকিস্তান ক্রিকেটের ভক্তরা। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্টেডিয়ামগুলো খালি রাখা হয়েছে। আরও ভালো করার জন্য বেশ কিছু পরিবর্তন করা হবে।
তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজ খেলতে আগামী মাসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পাকিস্তানে আনতে চাচ্ছে পিসিবি।
তবে এ সফরকে পুরোপুরি সমর্থন করেনি শ্রীলঙ্কা খেলোয়াড়রা। নিয়মিত অধিনায়ক উপুল থারাঙ্গা, লাসিথ মালিঙ্গা, নিরোশান ডিকবেলা, দুশমন্ত চামিরা এবং আকিলা ধনঞ্জয়া সফর থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। প্রধান কোচ দক্ষিণ আফ্রিকান পোথাস ছাড়া ফিজিওথেরাপিস্ট নির্মলন থানাবালাসিংগামও সফর বর্জন করেছেন।
সফর থেকে বিরত আছেন ২০০৯ সালের হামলায় আহত হওয়া সুরঙ্গা লাকমাল এবং চামারা কাপুগেদারাও।
বিশ্ব একাদশের হয়ে গত মাসে লাহোরে খেলে যাওয়া ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক থিসারা পেরেরা অবশ্য নিরাপত্তার আয়োজনে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছেন নিরাপত্তা বিষয়ে তার কোন শংকা ছিল না।
এএফপি’কে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা নিয়ে সত্যিই আমি সন্তস্ট, সুতরাং সেখানে আমি কোন সমস্যা দেখছি না।’
শ্রীলঙ্কা দলের লাহোরে ফেরার সিদ্ধান্তে বেশ খুশি দর্শকরাও। আগামীকালের ম্যাচের টিকেট পেতে পুরো সপ্তাহ জুড়েই লড়াই করতে হলেও কোন কষ্ট অনুভব করছেন না দর্শকরা।
লাহোরে বসবাসকারী এক মহিলা বলেন, ‘সত্যিই আমি অত্যন্ত খুশি কেননা আমি কেবল একার জন্য নয় পরিবারের অন্য সদস্যদের জন্যও টিকেট কিনতে পেরেছি। তিনি বলেন, নিজ মাটিতে দেশের খেলোয়াড়দের খেলা দেখতে পারার অনুভুতিটাই আলাদা।
২০০৯ সালে গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে হামলার সময় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচ দেখতে যাওয়ার পথে ছিলেন পাকিস্তানের খেলা দেখতে বিশ্ব ঘুরে বেড়ানো ‘চাচা ক্রিকেট’ হিসেবে পরিচিত সুফি জলিল (জলিল চাচা)।
শ্রীলঙ্কার সফর সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘তাদেরকে স্বাগতম।’
‘অতীতে যা কিছু ঘটেছে তা এখন ইতিহাস। এ ম্যাচ দিয়ে নতুন করে শুরু করবে এবং এ ব্যপারে আমরা সবাই ঔক্যবদ্ধ।’ (২৮-১০-১৭ প্রকাশিত সংবাদ)


শেয়ার করুন