আঙুলের ছাপ নিয়ে বিপত্তি

203968_1-400x266সিটিএন ডেস্ক:
ঢাকার সিদ্দিক বাজারের এম তানভীর আদনানের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ২৬৯৪০৭০২১০২৫৮। ২০০৮ সালের ৯ ফেব্র“য়ারি তাঁকে এই পরিচয়পত্র দেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী তিনি আঙুলের ছাপ দিয়ে ছবি তুলে সে সময় জাতীয় পরিচয় নিবন্ধনসহ ভোটার হয়েছিলেন। এই পরিচয়পত্র ব্যবহারে গত আট বছর কোনো সমস্যায় পড়েননি তিনি। কিন্তু গত মাসের মাঝামঝি তাঁর মোবাইল ফোনের সিম নিবন্ধনের বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন বা আঙুলের ছাপসহ যাচাই করাতে গিয়ে জানতে পারেন ভোটার হওয়ার সময় তিনি যে আঙুলের ছাপ দিয়েছিলেন তা জাতীয় পরিচয় বা এনআইডির তথ্যভা-ারে নেই।

মোবাইল ফোন অপারেটরদের বায়োমেট্রিক মেশিনে তানভীর যতবারই আঙুলের ছাপ দিয়েছেন ততবারই ‘ডিড নট ম্যাচ’ বার্তা এসেছে। এ অবস্থায় তাঁকে বলা হয়েছে এনআইডি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগে আঙুলের ছাপের সমস্যার সমাধান করে আসতে। কিন্তু তানভীর নিজের ব্যবসার কাজ ফেলে নির্বাচন কমিশনের এনআইডি উইংয়ে যাওয়ার সুযোগ করতে পারেননি। এ ছাড়া তিনি শুনেছেন, এনআইডি উইংয়ে গেলেও বিশেষ সুপারিশ ছাড়া কাজ হয় না।

এ ধরনের সমস্যা অনেকের। মোবাইল ফোন অপারেটররা যেসব ব্র্যান্ড প্রমোটরের মাধ্যমে বায়োমেট্রিক নিবন্ধনের কাজ করাচ্ছে তাদের কয়েকজনের কাছ থেকে জানা যায়, এনআইডির তথ্যভা-ারে যাদের আঙুলের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না বা মিলছে না তাদের সংখ্যা কম নয়। তাদের কেউ কেউ ঝামেলা এড়াতে ভাই-বোন বা অন্য কোনো নিকটাত্মীয়র নামে সিম নিবন্ধন করিয়ে নিচ্ছে।

এ ছাড়া গত দুই বছরে নতুন ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়া যে এক কোটির মতো নাগরিককে জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি তাদের সিম নিবন্ধনের বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনেও সমস্যা হচ্ছে। যারা এনআইডির জন্য আবেদন করেছে অথচ এখনো পায়নি, এমন গ্রাহকদের ক্ষেত্রে আবেদনের রসিদের সাহায্যে অনলাইনে এনআইডি নম্বর বের করে ভেরিফিকেশনের নির্দেশ রয়েছে বিটিআরসির। এ বিষয়ে কাস্টমার কেয়ারে গ্রাহককে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু মোবাইল অপারেটরদের ব্র্যান্ড প্রমোটররা জানান, তাঁরা এ সুবিধা দিতে সক্ষম নন। এ ধরনের সহায়তার জন্য কাস্টমার কেয়ারেই যেতে হবে।

এনআইডি রেজিস্ট্রেশন উইংয়ের ওয়েবসাইট থেকে নিজের চেষ্টায়ও এনআইডি নম্বর জেনে নেওয়া সম্ভব। ওই ওয়েবসাইটে এনআইডি অনলাইন সার্ভিসেসে ক্লিক করলেই ২০১৩-১৪ সালে যারা ভোটার হয়েও এনআইডি পায়নি তাদের নম্বর জেনে নেওয়া যায়। এ ক্ষেত্রে ভোটার ফরমের নম্বর ও জন্ম তারিখ জানাতে হবে। কিন্তু ইন্টারনেটে এ সুবিধা নেওয়ার সুযোগ অনেকেরই নেই। ভিড়ের কারণে কাস্টমার কেয়ারেও অনেকে যেতে চায় না। আবার ভোটার রসিদের মাধ্যমে এনআইডি নম্বর জেনে নিয়ে তা ব্যবহারের সুযোগ সম্পর্কেও বেশির ভাগ ভোটারই অবগত নয়। এসব কারণে ভোটার হয়েও যারা এনআইডি পায়নি তাদের বড় একটি অংশ এখনো বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের বাইরে রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের ধারণা।

এদিকে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সূত্রে জানা যায়, এনআইডিতে আঙুলের ছাপ সমস্যাটি পাঁচ বছর আগেই আলোচিত ছিল। ২০১১ সালে ভোটার তালিকা হালনাগাদের পাইলট প্রকল্পে এ সমস্যা চিহ্নিত হয়। নওগাঁর পতœীতলা উপজেলার পতœীতলা ইউনিয়নে ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ পৌরসভায় ভোটার তালিকা হালনাগাদের প্রথম দফা পাইলট প্রকল্পের কাজ শেষে এ কাজে সফলতার অন্যতম বাধা হিসেবে সঠিকভাবে সবার আঙুলের ছাপ পাওয়া না যাওয়ার বিষয়টি ধরা পড়ে। প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তখন জানিয়েছিলেন, যারা হাতে নিয়মিত মেহেদি লাগায় অথবা রান্নার জন্য হলুদ বাটে তাদের হাতে এর দাগ বসে যায়। এ ছাড়া শ্রমজীবী যেসব মানুষকে হাতের কাজ বেশি করতে হয়, তাদের আঙুলের রেখাও নষ্ট হয়ে যায়। এই দুই ক্ষেত্রেই আঙুলের ছাপ নেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে।
ওই সময় ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদানে সহায়তা প্রকল্পের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, শুধু মেহেদি ও হলুদের রঙে সমস্যা হচ্ছে না, এর সঙ্গে শ্রমের বিষয়টিও রয়েছে। যাদের হাতের কাজ বেশি করতে হয়, তাদের ক্ষেত্রেই এ সমস্যা হচ্ছে। ব্যবহারযোগ্য ছাপ সবার ক্ষেত্রে পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যাদের নিয়ে এ সমস্যা হচ্ছে তাদের সংখ্যা ১ শতাংশেরও কম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০০৮ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ছবি ও আঙুলের ছাপ সংগ্রহসহ ভোটার তালিকা করার সময় এ ধরনের প্রায় ছয় লাখ ভোটারের আঙুলের ছাপ পাওয়া যায়নি। পরে এ সংখ্যা আরো বেড়ে থাকতে পারে।
এ বিষয়ে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের পরিচালক (অপারেশন্স) সৈয়দ মুহাম্মদ মুসা বলেন, ‘কত সংখ্যক নাগরিকের এনআইডিতে আঙুলের ছাপের সমস্যা রয়েছে তা আমাদের জানা নেই। তবে সিম নিবন্ধনের বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনের কারণে এ সংখ্যা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।’ তিনি বলেন, মেহেদি ও হলুদের রং এবং শ্রম সমস্যা ছাড়াও আগে ছাপ নেওয়া যন্ত্রের সমস্যার কারণেও এটা ঘটতে পারে। এখন ওই সমস্যা আর নেই। তিনি বলেন, ‘এনআইডিতে আঙুলের ছাপ নিয়ে যে সমস্যা রয়েছে, বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনে সে সমস্যার সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি। কারণ যাদের ছাপ পাওয়া যাচ্ছে না তারা নতুন করে ছাপ দিয়ে সমস্যাটির সমাধান করে নিচ্ছে। আমাদের উপজেলা অফিসগুলোতে এ বিষয়ে সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।’

কিন্তু ময়মনসিংহের শামসুন্নাহার নামের একজনের অভিযোগ, তিনি এ সহযোগিতা পাননি। বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশনে তাঁর আঙুলের ছাপ না মেলায় ময়মনসিংহ সদর উপজেলার নির্বাচন অফিসে যোগাযোগ করা হয়েছিল। ওই অফিস থেকে তাঁকে জানানো হয়েছে, ইউপি নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এনআইডিতে কোনো সংশোধন সংযোজন করা যাবে না।
এদিকে এনআইডি উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আঙুলের ছাপজনিত সমস্যা নিয়ে তাঁদের কাছেও প্রতিদিন অনেকে যাচ্ছে। তবে বিশেষ সুপারিশ নিয়ে যারা যাচ্ছে তাদের সমস্যার সমাধান হচ্ছে। এ ধরনের সুপারিশ পাওয়া যাচ্ছে প্রতিদিন ১৫-২০টি। কালের কণ্ঠ


শেয়ার করুন