আইনজীবীদের ওপর ভর করে চলছে বিএনপি

www.bonikbarta5

ডেস্ক রিপোর্ট : দীর্ঘদিন কারাভোগের পর দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এখন বিদেশে। অনেকটা নিষ্ক্রিয় অন্য জ্যেষ্ঠ নেতারাও। বন্দি দিন কাটাচ্ছেন সহযোগী সংগঠনগুলোর অনেক নেতাকর্মী। সব মিলিয়ে কোনো কর্মসূচি সফল করার মতো অবস্থা নেই বিএনপির। এ অবস্থায় দলীয় আইনজীবীদের ওপর ভর করেই চলছে বিএনপির কার্যক্রম।
মিছিল আর সমাবেশের পাশাপাশি কারাগারে থাকা দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের পক্ষে আইনি লড়াইয়েও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন আইনজীবীরা। সর্বশেষ দলের মুখপাত্র শামসুজ্জামান দুুদুকে জামিনে মুক্ত করতে সক্ষম হন তারা। এর আগে আইনজীবীদের চেষ্টায় দীর্ঘ সাত মাস কারাগারে থাকার পর আপিল বিভাগ থেকে জামিনে মুক্ত হন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন বিএনপির তিন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী— সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দুই সাবেক সভাপতি এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উদ্দিন খোকন।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে বিএনপি। এজন্য বিভিন্ন সময় সভা-সমাবেশে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের কথা ঘোষণা দিয়েও সফলতা পাইনি দলটি, বরং পাল্টা চাপের মুখে দলীয় সব কর্মসূচিতে ভাটা পড়েছে। সরকারের বাধার মুখে মূল দল ও অঙ্গসংগঠনগুলোর মধ্যে স্থবিরতা এলেও অনেক দিন ধরে সক্রিয়ভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের সংগঠন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সারা দেশের জেলা শহরগুলোয় তাদের কার্যক্রম জোরেশোরে চলছে বলে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে।
সর্বশেষ গত সপ্তাহে শনিবার রাতে গুলশানে নিজের কার্যালয়ে রাজশাহী জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ সময় জেলা আইনজীবী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি অ্যাডভোকেট নাজমুস শাহাদাত, সহসভাপতি অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান এবং জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশাসহ জেলার আইনজীবী নেতারা খালেদা জিয়াকে পরবর্তী আন্দোলনের ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি আগের বছরের ২৯ ও ৩০ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচির ডাক দিয়ে মাঠে থাকতে পারেনি। কিন্তু ওই সময়েও সুপ্রিম কোর্টে সমবেত হন দলীয় আইনজীবীরা। ২৯ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরে আইনজীবীদের সমাবেশে বহিরাগতদের হামলার ঘটনা ঘটে। এতে আশিফা আশরাফি পাপিয়াসহ অনেকেই আহত হন। একইভাবে বর্তমান সরকারের বর্ষপূর্তি ঘিরে গুলশান কার্যালয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনকে অবরুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে চলতি বছর ৫ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে বিক্ষোভ করে বিএনপি আইনজীবীরা। এ সময় পুলিশ বিক্ষুব্ধ আইনজীবীদের লাঠিচার্জ করলে অন্তত তিন আইনজীবী আহত হন। উভয় ক্ষেত্রেই রাজধানীতে আইনজীবী ও বিএনপি সমর্থিত সাংবাদিকরা ব্যতীত কেউই কোনো ধরনের জমায়েত করতে পারেননি। তবে রাজধানীর বাইরে জনসমাগম ঘটাতে সক্ষম হয় দলটি। এখনো যেকোনো কর্মসূচিতে জনসমাগম ঘটাতে পারছে কেবল আইনজীবীরাই।
অন্য অঙ্গসংগঠনের নিষ্ক্রিয়তার বিষয়ে খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘যে পর্যন্ত দল পুনর্গঠন না হবে, তত দিন আন্দোলন করে
অযথা নির্যাতিত হতে চান না বিএনপি চেয়ারপারসন ও তার দলের নেতাকর্মীরা। উনি (খালেদা জিয়া) ইতিবাচক আন্দোলন করবেন। অযথা আন্দোলন করে নেতাকর্মীরা মামলা খাক— এটা তিনি চান না। এজন্য আপাতত সক্রিয় আন্দোলন বন্ধ রেখেছেন তিনি।’
তিনি আরো বলেন, আইনজীবীরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন, তাই ঝুঁকি নিয়েও অনির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছেন। আইনজীবীরা উপলব্ধি করেছেন দেশে গণতন্ত্র নেই। গণতন্ত্র ছাড়া শান্তি নেই, জনগণ তা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। ভুলভ্রান্তি থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের আন্দোলন সফল করা হবে। রাস্তায় নামলে আইন-শৃক্সখলা বাহিনী তাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এ মুহূর্তে রাস্তায় নামতে ইচ্ছুক নন তারা। সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরে আইনজীবীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বিএনপির এ নেতা বলেন, কতটা নিচে নামতে পারলে আইনজীবীদের ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। তবে এ ধরনের সন্ত্রাসী হামলায় আমরা কোনো শঙ্কা বোধ করি না।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, র‌্যাব-পুলিশসহ আইন-শৃক্সখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য দিয়ে পুরো রাজধানীকেই একটি ‘শো-কেস’ করে রেখেছে সরকার। সরকারের বিরুদ্ধে কেউ রাস্তায় নামলেই তারা নির্যাতন চালাচ্ছে। তবে দেশব্যাপী চলমান অত্যাচার-নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণ দ্রুতই রাস্তায় নামবে। আইনজীবীরাও তাদের সঙ্গে থাকবেন। তখন ‘শো-কেস ‘ ভেঙে গণতন্ত্রের বিজয়ের মধ্য দিয়ে এ অনির্বাচিত সরকারের পতন হবে।
বিএনপি সূত্র জানায়, বর্তমানে দলের অধিকাংশ নেতাই জেলে, বাকিরা আত্মগোপনে। এছাড়া তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও পলাতক। কাজেই এ মুহূর্তে সক্রিয় আন্দোলনের কোনো বাস্তবতা দলটির নেই।
এ বিষয়ে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলনের চেয়ে দল পুনর্গঠন এখন সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে।’বণিকবার্তা


শেয়ার করুন