অাজ রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের এক বছর

মানবিক সংকট হিসেবে শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে ভূরাজনৈতিক সংকটে রূপ নিচ্ছে রোহিঙ্গা ইস্যু। এ সংকটের মাত্রা এত ব্যাপক যে এখন আর এর দ্রুত সমাধানের পূর্বাভাস দিতে পারছেন না কোনো বিশ্লেষকই। বিশ্বের বড় ক্ষমতাধর দেশগুলো যখন সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে তখন ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দেওয়ার মতো মহানুভবতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। তবে ঢাকা এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জোর দিয়ে বলছে, আশ্রয় দেওয়ার কারণে বাংলাদেশকে যেন উল্টো ক্ষতিগ্রস্ত হতে না হয়। রোহিঙ্গাদের জন্য আরো জমি বরাদ্দ, অন্যত্র স্থানান্তর, অধিকার দেওয়াসহ আরো অনেক প্রয়োজনীয়তার কথা বাংলাদেশকে বলছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। অথচ রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের ক্ষেত্রে মিয়ানমার এখনো তেমন কিছুই না করা সত্ত্বেও সে বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ততটা সোচ্চার নয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার জন্য চাওয়া মূলত দুটি। এগুলো হলো তাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব ও সুরক্ষা। এ ছাড়া তাদের ওপর যে নিপীড়ন হয়েছে তার বিচারও চায় তারা। কিন্তু মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও সুরক্ষার বিষয়ে আগ্রহী নয়। আর মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা রোহিঙ্গা গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞের অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।

রোহিঙ্গা নিপীড়নের জবাবদিহি নিশ্চিত করার উদ্যোগের অংশ হিসেবে মিয়ানমার বাহিনীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কানাডা। তবে এখনো রোহিঙ্গা গণহত্যার জোরালো অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ নেওয়ার প্রশ্নে একমত হতে পারেনি পরাশক্তিগুলো।

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর নিধনযজ্ঞের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতে (আইসিসি) বিচারের মুখোমুখি করতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পাঁচ দেশের ১৩২ জন আইন প্রণেতা। এক যৌথ বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, রোহিঙ্গাসহ অন্যান্য সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ওপর নিপীড়ন এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকার এবং দেশটির সেনাবাহিনীর ওপর চাপ বাড়াতে হবে।

বিবৃতিদাতা আইন প্রণেতারা ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর ও পূর্ব তিমুরের পার্লামেন্ট সদস্য। তাঁদের মধ্যে ২২ জন আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস ফর হিউম্যান রাইটসের (এপিএইচআর) সদস্য। রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের এক বছর পূর্ণ হওয়ার আগের দিন এপিএইচআরের ওয়েবসাইটে ওই যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়।

এপিএইচআরের চেয়ারপারসন ও মালয়েশিয়ার পার্লামেন্ট সদস্য চার্লস সান্তিয়াগো বলেছেন, ‘রাখাইনে মিয়ানমার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞ শুরু হওয়ার পর এক বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা এখনো দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা দেখছি না। মিয়ানমার এর তদন্ত করতে অনিচ্ছুক ও অসমর্থ হওয়ায় আমরা এমন একটি পর্যায়ে পৌঁছেছি যখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই এর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে।’ আইসিসিকে দিয়ে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের তদন্তের উদ্যোগ নিতে নিরাপত্তা পরিষদ সদস্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মিয়ানমারের যারা এসব অপরাধের জন্য দায়ী তাদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্য তাদের এভাবে ছাড় দেওয়া যাবে না।

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের বৃহত্তম অংশকে দেশছাড়া করার পর মিয়ানমার এখন প্রত্যাবাসনে রাজি হয়েও সময়ক্ষেপণের কৌশল নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ভৌগোলিকভাবে মিয়ানমার বাংলাদেশের সীমান্ত লাগোয়া। অথচ বাস্তবতার নিরিখে দুই দেশের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থান বহুদূরে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক সময়ে দুইবার মিয়ানমার সফর করেছেন। বাংলাদেশের অব্যাহত আমন্ত্রণ সত্ত্বেও মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি বা উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের কেউ এ দেশে আসেন না। তাঁরা বাংলাদেশবিদ্বেষী মনোভাব পোষণ করছেন।

রোহিঙ্গাদের কারণেই মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক এত শীতল বলে জানান ঢাকার এক জেষ্ঠ্য কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘মিয়ানমারের এক বন্ধু আমাকে বলেছে, এদের (রোহিঙ্গা) নিয়ে নাও। কাল থেকে তোমরা আমাদের সবচেয়ে ভালো বন্ধু হয়ে যাবে। সমস্যা হলো রোহিঙ্গারা মূলত মুসলমান। ওরা যদি মুসলমান না হয়ে অন্য কোনো ধর্মানুসারী, এমনকি নাস্তিক হতো তাহলে মিয়ানমার তাদের সমাজের অংশ করে নিত।’ তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়ার পেছনে মানবিক কারণ নয়, বরং ধর্মীয় পরিচয়ই মুখ্য বলে মনে করে মিয়ানমার।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের প্রতি বিদ্বেষের পেছনে ধর্মীয় কারণ সম্পর্কিত প্রায় একই ধরনের তথ্য মেলে যুক্তরাষ্ট্রের ধর্মীয় স্বাধীনতাবিষয়ক বিশেষ দূত স্যাম ব্রাউনব্যাকের বক্তব্যে। গত মে মাসে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনের পর তিনি বলেন, ধর্মীয় কারণেই রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে নিপীড়নের শিকার।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের জার্নাল পলিটিকোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গা গণহত্যাকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করবে কি না তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। কারণ ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করলে যুক্তরাষ্ট্রকে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সামরিক ব্যবস্থা নিতে হবে। বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এটি সম্ভব কি না তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।

এদিকে বাংলাদেশ মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মিয়ানমার একসময় বাংলাদেশকে বহুপক্ষীয় ফোরামে না যাওয়ার অনুরোধ করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুকে বহুপক্ষীয় ফোরামে নেওয়ার পাশাপাশি মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনার দরজা খোলা রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সংকট সমাধানের বিষয়ে জাতিসংঘে পাঁচ দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।

সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশ যে আন্তর্জাতিক ফোরামে এতটা করবে তা মিয়ানমারের ভাবনায় ছিল না। তারা হয়তো ভেবেছিল, অতীতের মতো দু-এক বছর পরই এ ইস্যু শেষ হয়ে যাবে। নতুন ইস্যু আসবে। কিন্তু বাংলাদেশ রোহিঙ্গা নিপীড়নের জবাবদিহি নিশ্চিত করার অঙ্গীকারের অংশ হিসেবে আইসিসিতে পর্যবেক্ষণ জমা দিয়েছে। তাতে বাংলাদেশ বলেছে, এ দেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের ওপর আইসিসির পূর্ণ এখতিয়ার আছে। আইসিসি চাইলে বাংলাদেশ তাকে সহযোগিতা করতে সানন্দে রাজি আছে।

ওই কর্মকর্তা বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এ বিষয়ে কাজ করছে। আগামী ২৮ আগস্ট রোহিঙ্গা ইস্যুতে সেখানে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা নিপীড়ন তদন্তে সিরিয়ার মতো ‘আইআইআইএম’ অর্থাৎ আন্তর্জাতিক নিরপেক্ষ ও স্বাধীন কাঠামো সৃষ্টির জন্য যুক্তরাজ্য, কানাডার মতো দেশগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলে আসছে যে রোহিঙ্গা সংকট রাজনৈতিক। এর সমাধানও রাজনৈতিক হতে হবে। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, আরসা বলে সংকট আড়াল করা যাবে না।

এদিকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস থেকে শুরু করে মানবাধিকার পরিষদের প্রতিনিধিরা রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বেশ সরব রয়েছেন। জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ সতর্ক করে বলেছে, রোহিঙ্গা শিশুদের একটি প্রজন্ম হতাশায় ডুবতে বসেছে।

অন্যদিকে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের বার্ষিকী উপলক্ষে যুক্তরাজ্য গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে দীর্ঘ মেয়াদে রোহিঙ্গাদের প্রতি সহযোগিতা করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়ন মন্ত্রী পেনি মরডন্ট বলেন, ‘বর্বরতার এই বার্ষিকীতে মিয়ানমার সরকার যাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করে, তা নিশ্চিত করতে আমাদের অঙ্গীকার করা উচিত।’ তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও মিয়ানমারের কী করা উচিত তা এখন স্পষ্ট। এই লোকজনের (রোহিঙ্গা) তাদের জীবন ও অধিকারের নিশ্চয়তা প্রয়োজন।’

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে তখন রাখাইন রাজ্যে অতিরিক্ত সেনা উপস্থিতির খবর দিচ্ছে কূটনৈতিক সূত্রগুলো। এখন কাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার লড়াই করবে সে প্রশ্নও তুলছেন কূটনীতিকরা। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর দুটি ইউনিটের সবার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বেশ চাপে পড়েছে মিয়ানমার। পরিস্থিতিকে অন্য রূপ দিতে আগ্রাসনের আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তাঁরা।

সংশ্লিষ্ট এক কূটনীতিক বলেন, গত বছর রোহিঙ্গা ঢল শুরু হওয়ার পর ২৬ আগস্ট থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর ১৭ বার আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে মিয়ানমার। এর মধ্যে অ্যাটাক হেলিকপ্টারসহও এসেছে। এই উসকানিতে সাড়া দিলেই সংঘাত ছিল অনিবার্য। মিয়ানমার রোহিঙ্গা সংকটকে আড়াল করতে সীমান্তে সংঘাত চেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সে ফাঁদে পা দেয়নি। আগামী দিনেও বাংলাদেশ যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, চীন নিরাপত্তা পরিষদে রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত নয়। চীন, ভারত, জাপানের মতো দেশগুলো চায় এ সংকট এ অঞ্চলের মধ্যেই সমাধান হোক। মিয়ানমার এযাবৎ প্রত্যাবাসন চুক্তিসহ যেসব উদ্যোগ নিয়েছে, তা ওই দেশগুলোর চাপেই। তারাও চায়, মিয়ানমার দ্রুত রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিক। কিন্তু মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের ফেরার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করছে না। রাখাইন রাজ্যের অন্য সম্প্রদায়গুলোও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষে নয়।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের অবস্থান সম্পর্কে জানা যায়, মিয়ানমারের কর্মকর্তারা বলে থাকেন যে ‘রোহিঙ্গা’ বলে কোনো নৃগোষ্ঠী তাদের দেশে নেই। তারা ‘বেঙ্গলি’। এরপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলেন, ‘ফ্রম বাংলাদেশ’ (বাংলাদেশ থেকে সেখানে গেছে)। এখন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা নতুন করে বলা শুরু করেছেন, ‘বেঙ্গলিস আর অল এক্সট্রিমিস্টস, মুসলিমস।’ রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়নের সব খবরকে ‘মিথ্যা’ ও ‘বানোয়াট’ হিসেবে অভিহিত করে মিয়ানমারের কর্মকর্তারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বলে বেড়াচ্ছেন, সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারে এত আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যমকে আসতে দেওয়া হয়েছে বলেই এসব গল্প তৈরি হচ্ছে।

তবে এ সংকট নিয়ে কাজ করা কর্মকর্তারা বলেছেন, কেউ স্বীকার করুন আর না-ই করুন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকেন্দ্রিক ভূরাজনীতির প্রভাব হলো এই রোহিঙ্গা সংকট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ও জাপানি বাহিনীর মধ্যে লড়াইয়ের ‘ফল্ট লাইন’ গিয়েছিল তৎকালীন আরাকান (বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন) প্রদেশের ওপর দিয়ে। এক প্রান্তে ব্রিটিশ বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়েছিল রোহিঙ্গাসহ অনেক নৃগোষ্ঠী। অন্য প্রান্তে জাপানি বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় পুরো বার্মিজ বাহিনী। যুদ্ধ শেষে ব্রিটিশরা রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে আলাদা রাষ্ট্র গড়ার আশ্বাস দিয়েও তা পূরণ করেনি। মিয়ানমারের বেশির ভাগ নাগরিকও রোহিঙ্গাদের ওই ভূমিকা ভালোভাবে নেয়নি।

১৯৪৮ সালে মিয়ানমার স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৬২ সালে জেনারেল নি উইন ক্ষমতা দখল করেই ঘোষণা দেন, রোহিঙ্গাদের কে কী আশ্বাস দিয়েছে তা তাঁর বিবেচনার বিষয় নয়; রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ছাড়তে হবে। নি উইনের সেই উদ্যোগ থেকেই ১৯৮২ সালের নতুন নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিকত্বসহ সব ধরনের অধিকার হারায়। এরপর বিভিন্ন ছুতায় কয়েক বছর পর মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে। গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনে কথিত জঙ্গি হামলার অজুহাতে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ শুরু করার পর সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। ২৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

মিয়ানমারে অব্যাহত রোহিঙ্গা নিপীড়নের পেছনে যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধভিত্তিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট আছে তার সুস্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছিল গত বছর মিয়ানমারের সিনিয়র জেনারেলের বক্তব্যে। রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, তাঁরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অসমাপ্ত কাজটিই করছেন।


শেয়ার করুন