অসময়ে কক্সবাজারে সমুদ্র সৈকত

Coxs-Bazar-Seabech_19

নিরিবিলিতে সমুদ্র সৈকত ঘুরে আসতে চাইলে যেতে হবে ‘অফ সিজন’য়ে। কারণ এ সময় পর্যটকদের ভিড় থাকে কম। এ সুযোগে কম খরচে ঘুরেও আসা যেতে পারে।

এই বছর সাপ্তাহিক বন্ধ ও পহেলা বৈশাখের ছুটি মিলয়ে তিনদিন বন্ধ পাওয়ায় ১৬ তারিখ পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকদের ভরা জোয়ার ছিল।

তারপর থেকেই পর্যটকদের ভাটা শুরু হয়ে গেছে।

কক্সবাজার ভ্রমণে পটু এরকম কয়েকজনের পরামর্শে জানা গেল, এই সময়ে আগে থেকে ঠিক না করে বরং কক্সবাজারে পৌঁছে হোটেলের কক্ষ দেখে দরদাম করলে বেশ কম খরচে থাকার ব্যবস্থা করা যায়।

এমনিতেও ‘অফ সিজন’য়ে শতকরা পঞ্চাশ ভাগ ছাড় দেয় হোটেলগুলো। দর কষাকষিতে পটু হলে এই অর্ধেক দাম থেকেও মূল্য কমিয়ে ফেলা সম্ভব। আর এই সময়ে পর্যটক কম থাকায় বেশিরভাগ হোটেলই থাকে ফাঁকা। তাই হোটেল পাওয়া না পাওয়া নিয়ে চিন্তিত হওয়ারও কিছু নেই।

সেই কারণেই এবার কক্সবাজার যাওয়া হল ১৮ তারিখ। দুদিনের এই ভ্রমণে ‘অফ সিজন’য়ে কক্সবাজারে বেড়ানোর বেশকিছু তথ্য জানা গেল।

সৈকতের কাছাকাছি হোটেলে থাকতে চাইলে যেতে পারেন সুগন্ধা পয়েন্ট, লাবনী ও কলাকতী সৈকতের কাছাকাছি হোটেলগুলোতে। সৈকতের কাছাকাছি হোটেলগুলোর রুম ভাড়া কিছুটা বেশি। তাই আরও কিছু টাকা বাঁচাতে চাইলে থাকতে পারেন ভিতরের দিকের হোটেলগুলোতে।

এবার আসা যাক খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে। এই মৌসুমে খাওয়া দাওয়া নিয়ে একটু ঝামেলা পোহাতে হতে পারে। বিশেষত যদি লাবনী পয়েন্টের হোটেলগুলোতে থাকেন তবে প্রতিবেলার খাবার খেতে যেতে হবে সুগন্ধা পয়েন্টে অথবা কলাতলী রাস্তায়।

কক্সবাজারের একটি রিসোর্ট। এই দুই জায়গায় বেশ কিছু রেস্তোরাঁ রয়েছে যেখানে সুলভে ভালো মানের খাবার পাওয়া যাবে। নিরিবিলি, ঝাউবন, পউশী এই তিনটি কক্সবাজারের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্তোরাঁ। স্থানীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া যাবে এই রেস্তোরাঁগুলোতে। সামুদ্রিক মাছ যেমন- লইট্টা, রূপচাঁদা, টুনা ইত্যাদি ভাজা বা তরকারির স্বাদ নিতে পারবেন। পাবেন নানান পদের শুঁটকি।
তবে কক্সবাজার শহরের সায়মন রোডের শেষ মাথায় রয়েছে পউশী রেস্তোরাঁর পুরাতন শাখা। দুপুরের খাবার খেতে গেলে সেখানে পাবেন নানা পদের ভর্তা, শাক ও শুটকি দিয়ে সাজানো থালি।

কক্সবাজারে ঘোরা ও যাতায়াতের জন্য এখন রিকশার চাইতে ব্যাটারি চালিত অটোরিকশার জনপ্রিয়তা বেশ। সামনে পেছনে মিলিয়ে সাতজন অনায়াসে বসা যায়। তবে দরদাম করে উঠতে ভুলবেন না। কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে লাবনী পয়েন্ট পর্যন্ত যেতে অটোরিকশাওয়ালারা যত ভাড়াই বলুক না কেনো ৪০ থেকে ৫০ টাকার বেশি খরচ হবে না।

শুধু অটোরিক্সাই নয় সাধারণ রিক্সা, চাঁন্দের গাড়ি, সিএনজিসহ যে কোনা বাহনে ওঠার আগে খোঁজথবর নিয়ে ভাড়া সম্পর্কে জেনে নেবেন। এরপর চালকের সঙ্গে কথা বলে ভাড়া ঠিক করবেন। আর অটো চালকের উপর ছেড়ে না দিয়ে নিজেই খোঁজ খবর নিয়ে খাবার ও ঘোরার জায়গা নির্ধারণ করে নিলে অনেক উটকো ঝামেলা এড়ানো সম্ভব হবে।

এই সময়ে দুপুরে থাকে কড়া রোদ। তাই সকালে কক্সবাজার পৌঁছে দুপুর পর্যন্ত হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে বিকালে দিকে বালুকাবেলায় যেতে পারেন।

সমুদ্র সৈকতে পর্যটক দেখবেন অনেক। তবে মনে হবে না বাজার বসে গেছে। দেখেশুনে দরদাম করে চেয়ার ভাড়া নিয়ে আরামসে শুয়ে সমুদ্রের ঢেউ ভাঙা দেখতে পারবেন সৈকতে। চাইলে সমুদ্রের নোনাজলে হুটোপুটিও করতে পারেন।

গরম কমই লাগবে। কারণ বাতাস অনেক।

তবে অবশ্যই জোয়ার-ভাটার বিষয়টা মাথায় রাখতে হবে। ভাটার সময় সমুদ্রে নামা নিষেধ। সাঁতার না জানলে হাঁটু পানির বেশি না নামাই ভালো। আর অবশ্যই সাঁতার জানে এমন কাউকে পাশে রাখুন।

সৈকতে রয়েছে উদ্ধারকর্মী। এছাড়া সমুদ্রের ঢেউয়ে ভাসতে চাইলে রয়েছে টিউব। সৈকত থেকেই টিউব ভাড়া নিয়ে নিতে পারবেন। প্রতি ঘণ্টায় ভাড়া ৫০ টাকা। উদ্ধারকর্মীরা আছেন এমন জায়গাতেই পানিতে নামা উচিত। আর পানিতে নেমে পাড়ে থাকা উদ্ধারকর্মীদের নির্দেশনা অনুসরণ করতে হবে।
সমুদ্রস্নান শেষে হোটেলে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবারও বের হয়ে যেতে পারেন কাঁকড়া খাওয়ার উদ্দেশ্যে।

সাধারণত সুগন্ধা বিচ রোডের পাশে সারিবদ্ধ তিন থেকে চারটি দোকানে কাঁকড়া ও বিভিন্ন সাম্রদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। কাঁকড়া, স্যামন, টুনা মাছ, রূপচাঁদা, চিংড়ি, স্কুইড ইত্যাদিসহ আরও বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যাবে এসব দোকানে। মাছ ভেজেই দেওয়া হয়। সঙ্গে লুচি এবং খাওয়ার পানিও পাবেন।

তবে মাছ কেনার আগে অবশ্যই দরদাম করতে হবে। কাঁকড়ার দাম নির্ভর করে আকৃতির উপর। আর স্কুইড বিক্রি হয় প্রতি শুঁড় হিসেবে। গরমে কাঁকড়া একসঙ্গে বেশি না খাওয়াই ভালো। বুঝেশুনে খেতে হবে।

বড় আকারের কাঁকড়া কিনতে সাধারণত গুনতে হবে প্রতিটি ১শ’ থেকে দেড়শ টাকা। এছাড়া মাঝারি আকারের টুনা মাছের দাম নেবে ৩শ’ টাকা।

সুগন্ধা সৈকতের আশপাশেই আছে বার্মিজ মার্কেটে। পাবেন বার্মিজ আচার, স্যান্ডেল, টুপি, শামুক ও ঝিনুকের তৈরি বিভিন্ন মালা, অলঙ্কার, ক্লিপ এবং ঘর সাজানোর অনুষঙ্গ। তবে যেকোনো কিছু কেনার আগে দরদাম করতে ভুলবেন না।

এভাবেই বিক্রি হয় কাঁকড়া, স্যামন কিংবা গলদা। এরপর সমুদ্র সৈকতে বসে উপভোগ করতে পারেন রাতের সৌন্দর্য। রাতের দিকেও সমুদ্র পাড়ের আরাম কেদারাগুলো ভাড়া দেওয়া হয়। তবে বেশি রাত না করাই ভালো। কারণ পর্যটক কম বলে রেস্তোরাঁগুলো বেশি রাত পর্যন্ত খাবার পাওয়া যায় না। আর নিরাপত্তার বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে।
দুই দিনের কক্সবাজার ভ্রমণে দ্বিতীয় দিনে যেতে পারেন ইনানী। এই মৌসুমে যাওয়া আসার জন্য অটোরিক্সা ভাড়া করা হলে খরচ পড়বে ৭শ’ থেকে ৯শ’ টাকার মতো।

ইনানী যাওয়ার পথে হিমছড়ি পার হওয়ার পর হাতের ডান পাশেই সৈকতের একটি অংশে প্যারাসেইলিং করতে পারবেন। তবে তা নির্ভর করবে জোয়ার ভাটার উপর। কারণ ভাটার সময় প্যারাসেইলিংয়ের ব্যবস্থা থাকে না।

ইনানী পৌছে ঘুরে দেখতে পারেন ছড়ানো ছিটানো প্রবালে ভর্তি সৈকত। এখানে সৈকত ভ্রমণের জন্য পাবেন চার চাকার বাইক। দূরত্ব হিসেবে ১শ’ থেকে ৩শ’ টাকার মতো ভাড়া ধরেন চালকরা।

সৈকতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে, যেখানে সেখানে ময়লা ফেলা উচিত নয়। এতে প্রকৃতি দূষিত হয়। আর যেহেতু এখন গরম বেশি তাই বেড়ানোর সময় সঙ্গে পানি ও স্যালাইন রাখা উচিত। সঙ্গে ছাতা, টুপি, সানগ্লাস, সানস্ক্রিন ইত্যাদি নেওয়ার কথা ভোলা যাবে না।


শেয়ার করুন