অর্থাভাবে ঝুলে আছে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্প

শাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন:
ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের ৪ বছর পূর্ণ হলেও অর্থাভাবে ঝুলে আছে দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর বহুল প্রত্যাশিত দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প। প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প হয়েও বাজেটে বরাদ্দ সংকট দেখিয়ে এ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পটিকে বার পিছিয়ে দিচ্ছে রেল মন্ত্রণালয়। এ কারণে কক্সবাজারসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের বিপুল মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে। সেই সাথে এতদ্বঞ্চলের উন্নয়ন কাঠামোও স্থিমিত অবস্থায় থেকে যাচ্ছে।
জেলা ভূমি অধিগ্রহণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, গত ২৮ জানুয়ারী কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক বরাবারে রেল মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো লিখিত এক পত্রে (স্মারক ন-৫৪.০০.০০০০.০০৩.০১৪.০২২০১৩-২৮৫) জানানো হয়, অর্থ সংকটের কারণে ২০১৪-২০১৫ অর্থ বছরে মাত্র ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। এ স্বল্প বরাদ্দ হতে ভূমি অধিগ্রহণ ব্যয় মেটানো সম্ভব নয়। তাই ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পত্রে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের জেলা প্রশাসককে রেললাইনের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ কাজ স্থগিত রাখতে আদেশ দেয়া হয়। তবে প্রকল্পটি আনুসাঙ্গিক কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে ওই পত্রে জানানো হয়। একই ভাবে ২০১১-১২ অর্থ বছরে মাত্র ২২ লাখ টাকা এবং ২০১২-১৩ অর্থ বছরে মাত্র ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ওই দু’ অর্থবছরেও প্রকল্পটি স্থগিত ঘোষণা দেয়া হয়েছিল।
জেলা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা এম.এম মাহমুদুর রহমান জানান, দোহাজারি-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। তাই গত বছরের শেষের দিকে জেলা প্রশাসক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেন। ওই চিঠির জবাবে প্রকল্পটি স্থগিত ঘোষণা করে চিঠি পাঠানো হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত সরকারের মেয়াদের মধ্যেই বাস্তায়নের লক্ষ্য নিয়ে ২০১০ সালে এই প্রকল্পটি একনেকে গৃহীত হয়েছিল। এর প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার শহরের ঝিলংজায় এই প্রকল্পের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। কিন্তু এর ১৯ মাস পর ভূমি অধিগ্রহণ কাজ বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন সরকার। সেই থেকে আজ পর্যন্ত স্থগিতই রয়েছে। সরকারি সিদ্ধান্তে কার্যত পুরো প্রকল্পটিই অনিশ্চয়তার মুখে পতিত হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্র মতে, ২০০৮ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর দোহাজারী থেকে রামু, কক্সবাজার ও ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন বা মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণের একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। এই প্রকল্পটি ২০১০ সালের ৬ জুলাই একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি) অনুমোদন লাভ করে। ১২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রেলপথ বাস্তবায়নে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৪ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল ‘দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন’ নামের এই প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই সরকারের মেয়াদের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমি অধিগ্রহণ করতে গিয়ে বরাদ্দ সংকটে বিপাকে পড়েন সংশ্লিষ্টরা। শেষ পর্যন্ত এই কারণে দীর্ঘ চার বছরেও প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি।
ভূমি অধিগ্রহণ শাখার তথ্য মতে, দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কক্সবাজার জেলার উখিয়া উপজেলার ১২৬ দশমিক ৫৪৭ একর, কক্সবাজার সদর উপজেলার ১১৮ দশমিক ৫২০৬ একর এবং চকরিয়া উপজেলায় কমবেশি ৪২২ দশমিক ৯৮ একর জমি অধিগ্রহণের লক্ষে যথাক্রমে এলএ মামলা নং ৬/১০-১১, এলএ মামলা নং ৭/১০-১১ এবং এলএ মামলা নং ৮/১০-১১ রুজু করে তা অনুমোদনের জন্য একটি প্রস্তব ২০১১ সালের ১২ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু ভূমি মন্ত্রণালয় প্রস্তাবের সাথে যথাযথ কাগজপত্র দাখিল না করায় উক্ত প্রস্তাব অনুমোদন না দিয়ে ওই বছরের ১৮ ডিসেম্বর ফেরত পাঠিয়ে দেয় । তবে পরবর্তীতে তা সংশোধন করে ২০১২ সালের মার্চ মাসে শুধুমাত্র উখিয়া ও কক্সবাজার সদরের ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন চেয়ে আবারও ভূমি মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়। প্রস্তাবটি অনুমোদন থাকায় অবস্থায় বরাদ্দ সংঙ্কটের কারণে প্রকল্পটি শেষ পর্যন্ত স্থগিত করা হয় এবং স্থগিত অবস্থায় রয়েছে। এতে কার্যত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক আলী হোসাইন বলেন, ‘প্রকল্পটি বাস্তবায়নের আমরা খুবই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে প্রকল্পের কাজ আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।’


শেয়ার করুন