অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় টেকনাফের ভূমিকা

মোজাম্মেল হকঃ
টেকনাফের অবস্থান: টেকনাফ বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা। এটি বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে নাফ নদী পরিবেষ্টিত ও বঙ্গোপসাগেরর উপকূলে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা সদর থেকে এ উপজেলার দূরত্ব প্রায় ৮২ কি:মি। এ উপজেলার উত্তরে উখিয়া উপজেলা পূর্বে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশ এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত।
আয়তন: টেকনাফ উপজেলার আয়তন ৩৮৮.৬৮ বর্গ কি:মি।
প্রশাসনিক এলাকা: ১৯৩০ সালে টেকনাফ থানা গঠিত হয় এবং ১৯৮৩ সালে এরশাদ সরকারের আমলে থানাকে উপজেলায় রুপান্তর করা হয়। এ উপজেলায় ১টি পৌরসভা ও ৬টি ইউনিয়ন রয়েছে। পৌরসভা: টেকনাফ। ইউনিয়ন সমূহ হচ্ছে ১। হোয়াইক্যং ২। হ্নীলা ৩। টেকনাফ সদর ৪। সাবরাং ৫। বাহার ছড়া ৬। সেন্টমার্টিন।
জনস্যখ্যা: ২০১১ সালের পরিসংখ্যান মতে টেকনাফ উপজেলার জনসংখ্যা ২,৬৩,৩৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৩২,৮৫৭ জন এবং মহিলা ১,৩০,৫৩২ জন। মোট জনসংখ্যার ৯৭.২% মুসলিম ১.৩% হিন্দু ১.৪% বৌদ্ধ এবং ০.১% খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
শিক্ষা: টেকনাফ উপজেলার বর্তমান স্বাক্ষরতার হার ৬৫%। এ উপজেলায় ১টি স্নাতক (পাস) কলেজ, ১টি কামিল মাদ্রাসা, ১টি উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ, ২টি আলিম মাদ্রাসা, ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (২টি বালিকাসহ), ৮টি দাখিল মাদ্রাসা (৩টি বালিকাসহ), ৮টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এ ছাড়া দাওরায়ে হাদিসসহ বেশ কয়েকটি কওমী মাদ্রাসা রয়েছে অত্র উপজেলায়। ফোরকানিয়া মাদ্রাসা বা মক্তব রয়েছে অসংখ্য অগণিত।
যোগাযোগ ব্যবস্থা: টেকনাফ উপজেলার যোগাযোগের প্রধান সড়ক হচ্ছে কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কটি। এছাড়া মেরিন ড্রাইভ সড়ক দিয়েও সব ধরনের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়।
অর্থনীতি: টেকনাফ উপজেলা পর্যটন এলাকা হওয়ায় দেশ বিদেশ থেকে ঢাকা-চট্রগ্রাম-টেকনাফ রুটে এই উপজেলার সীমান্তবর্তী সেন্ট মার্টিন দ্বীপে প্রতি বছর প্রচুর পর্যটকের আগমণ ঘটে। এ ছাড়া টেকনাফ স্থল বন্দর, নাফ নদী, বঙ্গোপসাগর থেকে মূল্যবান মাছ আহরণ, খনিজ লবণ, পান-সুপারি ইত্যাদি অর্থ উপার্জনের প্রধান মাধ্যম। পাহাড়, নদী ও সাগর ঘেরা টেকনাফে রয়েছে শত শত মৎস্য খামার। টেকনাফ স্থল বন্দর থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা রাজস্ব আয় হচ্ছে যা জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছে। টেকনাফের জালিয়ার দ্বীপ ও সাবরাং ট্যুরিজম জোন চালু হলে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় টেকনাফ উপজেলা একটি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে সক্ষম হবে।
দর্শনীয় স্থান: টেকনাফ উপজেলায় অনেক গুলো দর্শনীয় স্থান রয়েছে। যা পর্যটকদের মুহূর্তেই আকর্ষণ করতে পারে। যেমন প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, ছেড়া দ্বীপ, শহপরীর দ্বীপ, মথিনের কূপ, নেটং পাহাড়, টেকনাফ বন্যাপ্রাণী অভয়ারন্য, তৈঙ্গা চূড়া, সাবরাং ট্যুরিজম পার্ক, বাংলাদেশ মায়ানমার ট্রানজিট জেটি ঘাট, শিলখালী চিরহরিৎ গর্জন বাগান, মারিশ বনিয়া সৈকত ও টেকনাফ সমুদ্র সৈকত।
উক্ত দর্শনীয় স্থান সমূহ আরো উন্নত ও আকর্ষনীয় করে গড়ে তোলা গেলে বিপুল পরিমাণ পর্যটকদের আকৃষ্ট করা সহজতর হবে। যত বেশি পর্যটক আকৃষ্ট করা যাবে তত বেশি অর্থনৈকিত সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি অর্জনে সক্ষম হবে টেকনাফ উপজেলা এবং জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ধরণের অবদান রাখতে সক্ষম হবে। এমনটাই মনে করেন স্থানীয় রাজনীতিবীদ, সমাজপতি ও অর্তনীতিবীদরা।

প্রভাষক
রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগ
টেকনাফ সরকারি কলেজ।


শেয়ার করুন