অবরোধ-আমজনতার অভিমত: ‘তারা আছে ক্ষমতার তালত্’

Cox pix
শাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন:

আবু ছিদ্দিক (৫০)। ভাড়ায় ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক চালিয়ে ৫ সন্তানের পড়ালেখা খরচসহ ৭ সদস্যের পরিবারের ভরণপোষণ চালান তিনি। পর্যটক আধিক্য কক্সবাজার শহরে সারাদিন ইজিবাইক চালিয়ে গাড়ি ভাড়া দিয়ে যা অবশিষ্ট থাকতো তা দিয়ে ভালোই চলে তার সংসার। কিন্তু অবরোধ নামে ‘অভিশাপ’টি তাকে এখন শূন্যে বসিয়ে দিয়েছে।
তার ভাষায়, ‘অবাজি কি হইতাম আর। বেইন্না (সকাল) আটটাত্তোন ধরি রাইতর ১২ টা পর্যন্ত গাড়ি চালাইয়েরে গাড়ির ভাড়াগুন ঠিকমতন ন ওডের। এবালা বউ-পোয়ারে কি হাবাইয়ুম।’
তিনি জানান, তার এক সন্তান ইন্টারমিডিয়েট, আরেক সন্তান এসএসসি পরীক্ষার্থীসহ সবাই পড়া-লেখা করছে। বিগত ২২ দিনের অবরোধে ভাড়া কম হওয়ায় অনেক সময় গাড়ির ভাড়া উঠেনি। তাহলে কিভাবে চলছে সংসার? শুনুন তার ভাষায়- ‘বউদ্দিন ধরি কিছু কিছু টেয়া জমাইলাম। এই হয়েক দিনে সব শেষ। গাড়ি ভাড়া পর্যন্ত গাউত্তোন দেয়া পরে; তইলে টেয়াকি টান ধরে?’ না টেয়া গাছত্ ধরে?
অবরোধের জন্য কে দায়ী, হাসিনা-না খালেদা? প্রশ্নটার জন্য হয়তো তিনি প্রস্তুতি ছিলেন না। তবুও তার উত্তর-‘অবরোধের লাই হারে পেলাই হারে দোষ দিবা তুই? হাসিনা-খালেদা দু’জনই সমান দায়ী। খালেদা ক্ষমতাত্ যাইবল্লাই আর হাসিনা আজীবন ক্ষমতাত্ তাইবল্লাই এই যুদ্ধ গরের। তারা হনকেয়া আঁরা গরিপর হতা না ভাবের। সব মিলাইয়েরে দরহার হাসিনা-খালেদারে মাইনাস গরন।’
শ্রমজীবি সিদুল কান্তি দে (২৫)। কক্সবাজার শহরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা এবং যাওয়া মালামাল উঠানামার কাজ করেন। অভ্যাসগত ভাবে এখনো প্রতিদিন প্রতিক্ষণ শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে অপেক্ষা করেন শ্রম বিক্রির আশায়। কিন্তু এই অবরোধে তার আশার সাথে পাওয়ার সঙ্গতি মিলছে না।
তিনি বললেন, ‘অবরোত্ এন হারাপ জিনিস আগে ন জাইনতাম। এক্খান মালর গারি ন জার- ন আঁইয়ের। ইবা হন্ডিল্লা বাজিত্ পরগি?’ তার প্রশ্ন এড়াতে অন্য প্রসঙ্গ টানলাম। আচ্ছা দেশে কেন অবস্থা চলছে বলতে পারেন? ‘খালেদা অবরোত্ ডাইক্কে; এতেল্লাই বলি আঁরার আজিইয়া এ দশা অঁইয়েদে। খালেদা বোমা মারিয়েরেও মানুষ মারের আর কিছু অইলে না হাইয়েরেও মানুষ মরিব।’
আব্দুল করিম (৩৫)। কক্সবাজার শহরের পাড়াততলীতে স্ত্রী আর তিন সন্তান নিয়ে বাস করে সে। ঘূর্ণিঝড়ে বাস্তুহারা হয়ে ১৯৯৯ সাল থেকে গ্রামের বাড়ি ছেড়ে কক্সবাজারে শহরের এ পাহাড়ি এলাকায় বসবাস তাদের। পরিবারের ভরণপোষণের দায় থেকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে কলা ফেরি করে ঝালমুড়ি বিক্রি তার পেশা। ঝালমুড়ি বিক্রি করে যা পায় তা চলে সংসার। কিন্তু অবরোধে তার ব্যবসা এখন পুরোপুরি বন্ধ।
তিনি বলেন, ‘অবরোত্ আইস্যে লতি ওগ্গা পর্যটকও নওয়ায়ে। কি গরি বেচাকিনা গরগইম হন? তবুর পেডের দায়ে কলা লই বিচ্চত আইয়্যি। কিন্তু বেচা নয়।’
রাজনীতি কি না বুঝলে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, জাতীয়পার্টির নাম ভালো করেই জানেন করিম। তার ক্রোধান্বিত অভিব্যক্তি ‘ইতারাইতো আঁরারে পথত্ বোঁয়ায়ে। এক্কুদ্দি তারা ক্ষমতার লড়াই গরের। এন্দি আঁরা নহাই মরির। ইতিরাত্তোন আঁরার হবর নাই।’ তারা আছে ক্ষমতার তালত্।
আলী আসগর (৪০)। দেশের বৃহত্তম শুটকি উৎপাদন স্থান নাজিরারটেক শুটকি মহালের মৎস্য ব্যবসায়ী। মৎস্য থেকে শুটকি দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করেন। অবরোধে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় তার ব্যবসা এখন একেবারে বন্ধ।
তিনি বলেন, ‘নাজিরারটেকে শুটকি তৈরি করে রপ্তানি করা আমার একমাত্র ব্যবসা। আমার নিয়ন্ত্রণে আরো ৫০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করে। সবাই এ পেশার উপর নির্ভর জীবিকা নির্বাহ করছে। উৎপাদিত শুটকি রপ্তানি করতে না পারায় কোন শ্রমিককে মজুরি দিতে পারছি না। যার কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দেয়ার উপক্রম হয়েছে।’
দেশে চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘দেশ এখন গভীর সংকটে পড়ে গেছে। তারপরও দু’পক্ষের কারও কোন নরম অনুভূতি দেখতে পাচ্ছি না। বরং একের অপরের ফাজলামির আকারে কূৎসা রটাচ্ছে; যা আমজনতা নিয়ে তামাশার মতো।’


শেয়ার করুন