অবরোধের ৬০ দিন : প্রশ্নের মুখে গণতন্ত্র

hortal-strike-oborodh-logo_54824

সিটিএন ডেস্ক:
খান মোহাম্মদ হোসাইন : টানা অবরোধের ৬০ তম দিন আজ। অনির্দিষ্টকালের এই অবরোধের আগুনে দগ্ধ হয়ে এরই মধ্যে ঝরে গেছে শতাধিক প্রাণ। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে কাতরাচ্ছেন কয়েকশ মানুষ। অন্যদিকে ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের অর্থনীতি, শিক্ষা, পরিবহন ও চিকিৎসার মতো সেবা খাতগুলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলমান সহিংস রাজনীতির কারণে দেশ একদিকে যেমন ‘ইমেজ সংকটে’ তেমনি ‘গণতন্ত্র’ আজ প্রশ্নের মুখে।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে এই ধরনের পরিস্থিতি থাকার জন্য অর্থনীতির যে চক্র রয়েছে সেই চক্রটি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যে হিসেবটি রয়েছে যে, প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ২৭০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে সেই হিসেবটি শুরুর দিকে যতটুকু জোড়ালো ছিল এই হিসেবটি এখনও একই রকম কি না সেটি দেখবার বিষয়, যেহেতু পরিস্থিতির বেশ কিছু উন্নতি হয়েছে।’

অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের গণতন্ত্রও। তাই সমাধানের কোনো বিকল্প নেই।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কেন্দ্রিক একটা গণতন্ত্রের মধ্যে রয়ে গেছি এবং সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ পেলেই মনে করি সব কিছু বুঝি করে ফেলতে পারি। কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ পাচ্ছি হয়তো পঞ্চাশ শতাংশ ভোট বাকি পঞ্চাশ শতাংশ তো আমার সাথে নেই।’

তার মতে, এমন সহিংস কর্মসূচিতে প্রতিদিন যে পরিমাণ ক্ষতি তা খুব সহজেই পুষিয়ে উঠা সম্ভব নয়। আর তাই, রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের মুখ ফিরিয়ে নেবার আগেই জনগণের বিশ্বাস ও আস্থা ধরে রাখা জরুরি বলে মনে করেন এই বিশিষ্ট জন।

জানুয়ারি প্রথম সপ্তাহে ডাক এসেছিল অবরোধের। শুরু থেকেই এই কর্মসূচির সঙ্গে সমান তালে চলতে থাকে নাশকতা। দিন পেরিয়ে সপ্তাহ গড়িয়ে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি মাস শেষে মার্চের ৬ তারিখে দুই মাস পূর্ণ হলো অস্বস্তিকর সময়ের।

টানা এই অবরোধে রাজনৈতিকদলগুলো কতটুকু লাভবান হয়েছে তা বলা না গেলেও যে দেশ গড়ার নামে এই রাজনীতি সেই প্রিয় স্বদেশ পিছিয়ে পড়ছে ক্রমাগতই।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স ইন্ডাস্ট্রি-ডিসিসিআই এর হিসেব মতে, অবরোধের কারণে ১৬ টি খাতে দৈনিক ক্ষতির পরিমাণ ২২৭৭ কোটি টাকা। তবে দু’মাস আগে অবরোধ ও হরতালের যে চিত্র ছিল তা এখন অনেকটাই নেই। শঙ্কা আছে, ঝুঁকি আছে কিন্তু জীবন চলছে জীবনের নিয়মে।

সাধারণ মানুষ বলছেন, যেকোনো সময় গাড়িতে পেট্রল বোমা মারতে পারে এই রকম আশঙ্কার মধ্যে বের হই। টাকার দরকার, এখন যদি ঘরে বসে থাকি তাহলে তো আর চলে না। রাজনীতি আমাদের দেখার জিনিস না। আমরা মনে করি গরিব মানুষ কাজ করি, ভাত খাই।’

এফবিসিসিআই’র সহ-সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘আপনি একবারও বললেন না আমি কিভাবে খাবো, আমি কিভাবে কর্মস্থলে যাবো। তার কোনো দিকনির্দেশনা আপনি আমাকে দিলেন না। আপনি আপনার মতো করে হরতাল অবরোধ দিতেই থাকলেন। তো আপনি আমার বিষয়টি বিবেচনা করলেন কখন।’

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশের মতো খেটে খাওয়া মানুষের একটি দেশে দীর্ঘদিন কর্মহীন থাকা প্রায় অসম্ভব।

বিভিন্ন পত্রিকার পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখা গেছে, গত দু’মাসে পেট্রলের আগুনে পুড়ে নিহত হয়েছেন ১১৬জন মানুষ। আর আহত কয়েক’শ পোড়া মানুষ কাতরাচ্ছে বার্ন ইউনিটে। যাদের বেশিরভাগই রাজনীতির বাইরের মানুষ। সহিংসতা আর নাশকতার তালিকা থেকে বাদ যায়নি রেল, নৌপথ কিংবা সড়ক পথ। অবরোধের আঘাতে পড়েছে দেশের অর্থনীতির মেরুদ-। সময় টিভি


শেয়ার করুন