অবরোধের দুই মাস: নিহত ১৪৩, গ্রেপ্তার ২০,০০০

নিউজ ডেস্ক:

ঢাকা: টানা ৬০ দিন ধরে চলছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটের লাগাতার অবরোধ। অবরোধের সঙ্গে প্রতি সপ্তাহে দুই দফায় পাঁচ দিন করে পালিত হচ্ছে হরতাল।

গত ৫ জানুয়ারি শুরু হওয়া এ আন্দোলনে প্রতিদিনই ঘটছে সহিংস ঘটনা। বিরোধী জোটের আন্দোলন কর্মসূচি ও সরকারের কঠোর অবস্থানে তৈরি হয়েছে এক দমবদ্ধ পরিস্থিতি।

বিপর্যস্ত জনজীবন। বিগত দুই মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘ট্রাকচাপা’, প্রতিপক্ষের গুলি-নির্যাতনে ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মীসহ ৮১ জন নিহত হয়েছেন।

এই সময়ে সারা দেশে ২০-দলীয় জোট নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে প্রায় দেড় হাজার। গ্রেপ্তার হয়েছে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মী। নিহতদের মধ্যে ৫৫ জন রয়েছেন ২০-দলীয় জোটের নেতাকর্মী। ২৬ জন রয়েছেন নির্দলীয় লোক।

এই ২৬ জনই ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। ২০-দলীয় জোটের নিহত ৫৫ জনের মধ্যে বিএনপির ৪২ জন রয়েছেন। এর মধ্যে ক্রসফায়ারে ১৫ জন, গাড়িচাপায় চারজন এবং সরকারদলীয় সমর্থকদের গুলি ও অজ্ঞাত গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৮ জন।

পাঁচজন নিহত হয়েছেন সরাসরি পুলিশের গুলি ও নির্যাতনে। নিহতদের মধ্যে জামায়াতের রয়েছেন ১৩ জন। এর মধ্যে দুজন ট্রাকচাপায়, একজন নির্যাতনে এবং বাকি ১০ জন ‘ক্রসফায়ার’ ও ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। যারা বিভিন্ন সময় নিহত হয়েছেন তাদের অনেকের বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।

এদিকে, এই সময়ে পেট্রোল ও ককটেল-বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন ৬২ জন। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক। আহতদের মধ্যে এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন অর্ধশতাধিক, যার মধ্যে বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গত ৫ জানুয়ারি নাটোরের তেবাড়িয়া মোড়ে নিহত হন ছাত্রদল নেতা রাকিব মুন্সি এবং ছাত্রদলকর্মী রায়হান আলী। পুলিশের উপস্থিতিতে সরকারদলীয় লোকজন বিএনপির মিছিলে গুলিবর্ষণ করলে তারা নিহত হন বলে ২০-দলীয় জোট সূত্র জানায়।

৫ জানুয়ারি রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে বিএনপির মিছিলে গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিএনপিকর্মী মজির উদ্দিন নিহত হন। একই দিন চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে নিহত হন জামশেদ আলী নামে এক বিএনপিকর্মী।

৭ জানুয়ারি নোয়াখালীর চৌমুহনীতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বেগমগঞ্জ উপজেলার ছাত্রদলকর্মী মহসীন উদ্দিন। একই স্থানে নিহত হন সেনবাগ উপজেলা যুবদলকর্মী মিজানুর রহমান রুবেল।

১৫ জানুয়ারি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ি উপজেলায় যুবলীগ সমর্থকদের গুলিতে নিহত হন ছাত্রদল নেতা মোরশেদ আলম পারভেজ।

১৪ জানুয়ারি চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় কাভার্ড ভ্যানের চাপায় নিহত হন জোবায়ের নামে এক শিবিরকর্মী।

গত ১৬ জানুয়ারি চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাট এলাকায় র্যা বের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন ছাত্রদল নেতা মতিউর রহমান (৩০)। ঘটনার পর র্যাচব-৫-এর চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের ইনচার্জ মেজর কামরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, বিশেষ অভিযানে মতিউরসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সে নাশকতার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

পরে তাকে নিয়ে র্যাাব অভিযানে বের হলে মতিউরের সহযোগীরা র‌্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এ সময় র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে মতিউর গুলিবিদ্ধ হন। তবে মতিউরের পরিবারের দাবি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

১৭ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পূর্ব টিমের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মতিঝিলের এজিবি কলোনি এলাকায় নিহত হয়েছেন নড়াইল পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার ইমরুল কায়েস (৩৪)। তিনি ওই ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি ছিলেন। ইমরুলের স্ত্রী জান্নাতুল বলেছেন, তার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করেছেন। পুলিশের দাবি কায়েসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে।

১৮ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা সদরে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয় সাবেক ইউপি মেম্বার ও বিএনপি নেতা সিরাজুল ইসলামকে।

১৯ জানুয়ারি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রিসিকুল ইউনিয়ন ১ নম্বর ওয়ার্ড যুবদল সভাপতি মোহাম্মদ এসলাম পুলিশ হেফাজতে ট্রাকচাপায় নিহত হন।

২০ জানুয়ারি রাজধানীর খিলগাঁও জোড়পুকুরপাড় থেকে উদ্ধার করা হয়েছে খিলগাঁও থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুজ্জামান জনির (৩০) লাশ। নিহতের বাবা ইয়াকুব আলী জানান, তার ছেলেকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মহানগর পুলিশের দাবি, জনির বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ রয়েছে।

২২ জানুয়ারি লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা জিসান দাউদকান্দিতে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন।

২২ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় যুবদল কর্মী জিল্লুর রহমান ভাণ্ডারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন।

ঝিনাইদহের শৈলকুপার কুসুমবাড়ি গ্রামের হাশেম আলী বিশ্বাসের ছেলে সুলতান বিশ্বাস ৩৫ দিন নিখোঁজ থাকার পর ২৬ জানুয়ারি র‌্যাবের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন। ওইদিনই ক্রসফায়ারে আবুল কালাম নামে আরও একজন নিহত হন।

লক্ষ্মীপুর জেলা ছাত্রদলের সাবেক নেতা জিসান ২২ জানুয়ারি দাউদকান্দি এলাকায় র‌্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হন।

২২ জানুয়ারি মাহবুবুর রহমান বাপ্পি বোমা হামলায় নিহত হন।

২৭ জানুয়ারি সাতক্ষীরার তালায় রফিকুল ইসলাম নামে একজনকে ডাকাত সন্দেহে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পরে ‘ক্রসফায়ারে’ তার মৃত্যু হয়।

২৭ জানুয়ারি ইসলামী ছাত্রশিবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখার সভাপতি আসাদুল্লাহ র‌্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর র‌্যাব হেফাজতে থাকা অবস্থায় ট্রাকচাপায় নিহত হন।

২৭ জানুয়ারি রাজশাহীর বিনোদপুরে জামায়াত নেতা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম শাহীনকে আটকের পর ক্রসফায়ারে তার মৃত্যু হয়।

২৭ জানুয়ারি ভোলার চরফ্যাশন ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রদলের সভাপতি হারুন অর রশিদ মারা যান। ২৬ জানুয়ারি সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা তাকে কুপিয়ে আহত করে।

২৮ জানুয়ারি ময়মনসিংহের নান্দাইলে ছাত্রদল নেতা আসিফ পারভেজ টুকুনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

২৯ জানুয়ারি রাজশাহী মহানগর বিএনপি নেতা আইনুর রহমান মুক্তাকে পুলিশ আটক করে নির্যাতন করায় তার মৃত্যু হয় বলে দলীয় সূত্র জানায়।

২৯ জানুয়ারি সাতক্ষীরায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ রফিকুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হন।

গত ২০ জানুয়ারি চট্টগ্রামে শিবিরকর্মী সাকিবুল ইসলামকে পুলিশ আটক করে। পরে পুলিশি নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৯ জানুয়ারি তার মৃত্যু হয়।

২৯ জানুয়ারি সদরঘাটের লঞ্চ থেকে সাদা পোশাকের লোকজন নিজেদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য পরিচয়ে ছাত্রদল নেতা আরিফুল ইসলাম মুকুলকে তুলে নিয়ে যায়। পরদিন ৩০ জানুয়ারি তার লাশ পাওয়া যায় রূপনগর এলাকায়।

৩০ জানুয়ারি যশোরের চৌগাছা উপজেলা বিএনপিকর্মী সামাদ মোল্লার লাশ উদ্ধার করা হয়। আগের দিন ২৯ জানুয়ারি তিনি অপহৃত হন।

৩০ জানুয়ারি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে যুবদল নেতা ইমাম হোসেন রুবেলকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।

১ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সাইদুল ইসলাম নামে এক জামায়াত নেতা পুলিশের গুলিতে আহত হন। পরদিন তিনি মারা যান। ১ ফেব্রুয়ারি ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকার শাহআলী থানা সভাপতি এমদাদ উল্লাহ পুলিশের ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন।

৩ ফেব্রুয়ারি যশোরের মনিরামপুর থেকে যুবদলকর্মী লিটনকে বোমা হামলাকারী সন্দেহে আটক করা হয়। পরে পুলিশ হেফাজতে ‘ট্রাকচাপায়’ তার মৃত্যু হয়।

৩ ফেব্রুয়ারি মনিরামপুরের যুবদলকর্মী ইউসুফকে বোমা হামলাকারী সন্দেহে পুলিশ আটক করে। পরে পুলিশ হেফাজতে ‘ট্রাকচাপায়’ তার মৃত্যু হয়।

৪ ফেব্রুয়ারি খুলনা বিএল কলেজের ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করা হয় ছাত্রদল নেতা আবু সাইদের লাশ।

৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন সাখাওয়াত হোসেন রাহাত নামে এক যুবক। একই স্থানে নিহত হন মুজাহিদুল ইসলাম জাহিদ নামে আরও একজন।

গত ৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ অজ্ঞাত (২৩) এক যুবক নিহত হন।

৪ ফেব্রুয়ারি ভাসানটেক থানা এলাকা থেকে আল আমিন (৩০) নামে এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।

৪ ফেব্রুয়ারি ভাসানটেক এলাকা থেকে বিএনপির সাবেক মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ভাগ্নে গাজী মোহাম্মদ নাহিদের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।

৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে বন্দুকযুদ্ধে মনির হোসেন নামে এক যুবক নিহত হন।

৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন কাটাখালী বাজারে শিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য গবেষণা সম্পাদক শাহাবুদ্দিন, বিনোদপুর আবাসিক মেস শাখার সভাপতি মফিজুর রহমান ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ হবিবুর রহমান হল সভাপতি হাবিবুর রহমান বন্ধুর বাড়িতে দাওয়াত খেতে যান। সেখান থেকে ফিরে মোটরসাইকেলে কাটাখালী পৌরসভার সামনে পৌঁছলে মতিহার থানা পুলিশ তাদের আটক করে। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। রাত আড়াইটার দিকে পুলিশ গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার শাহাবুদ্দিনকে মৃত ঘোষণা করেন।

৬ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা ছাত্রশিবির সভাপতি সাহাব পাটওয়ারী (২৪) পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। নিহতের মা ছাকিনা বেগম বলেছেন, তার ছেলেকে ৫ ফেব্রুয়ারি সাদা পোশাকধারী পুলিশ ধরে নিয়ে যায়। সকালে হাসপাতালে তার লাশ পাওয়া যায়।

৬ ফেব্রুয়ারি যশোরে পুলিশের গুলিতে নিহত হন শহিদুল ইসলাম নামে এক জামায়াতকর্মী। তবে পুলিশ বলেছে, শহিদুলকে আটকের পর তিনি পুলিশের গাড়ি থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। তখন বন্দুকযুদ্ধে শহিদ নিহত হন।

৭ ফেব্রুয়ারি বাচ্চু নামে এক জামায়াতকর্মী ক্রসফায়ারে নিহত হন বলে জানা যায়।

৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় জসিম উদ্দিন নামে এক শিবির নেতা পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। ওইদিন কুমিল্লায় নিহত হন স্বপন মিয়া নামে এক বিএনপি নেতা।

৮ জানুয়ারি যশোরে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন রাজু নামে এক যুবক। ৮ ফেব্রুয়ারি পটুয়াখালীর কলাপাড়ার চাকাইমা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম তালুকদারকে হত্যা করা হয়।

৯ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাঠেরপুল এলাকায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয় বিএনপি সমর্থক রাসেল সরদার।

৯ ফেব্রুয়ারি দাউদকান্দিতে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হন চৌদ্দগ্রামের বিএনপি নেতা সোহেল মিয়া। কালসী এলাকার লোহার ব্রিজের পাশ থেকে গুলিবিদ্ধ এক যুবকের লাশ উদ্ধার করা হয়।

১৩ ফেব্রুয়ারি মিরপুর থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নূরী আলমের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয় গাজীপুর থেকে।

১৪ ফেব্রুয়ারি বরগুনার আমতলীতে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয় মোজাম্মেল নামে এক বিএনপি সমর্থক।

১৪ ফেব্রুয়ারি সীতাকুণ্ডে পুলিশের গুলিতে নিহত হন আরিফ নামে এক যুবদল নেতা। হাতকড়া পরিহিত অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার হয়।

১৫ ফেব্রুয়ারি মাগুরার শালিখা উপজেলার ছয়ঘরিয়ার মশিয়ার রহমান নামে এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়। তার শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে।

১৫ ফেব্রুয়ারি দিনাজপুর চিরিরবন্দরের রানীবন্দরে শিবিরনেতা মতিউর গুলিতে নিহত হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহে বিএনপি সমর্থক লিটন মিয়াকে গুলি করে হত্যা করে পুলিশ।

১৬ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জে বিএনপি সমর্থক মোহাম্মদ ইয়াছিরের লাশ পাওয়া যায়। ওইদিন রাতে গাইবান্ধার পলাশবাড়ীর বুড়িরঘরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শিবিরকর্মী মোস্তফা মঞ্জিল নিহত হন। তিনি গাইবান্ধার তুলসীঘাটে বাসে পেট্রোল বোমা হামলার আসামি।

১৬ ফেব্রুয়ারি ঝিনাইদহে র্যা বের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন রফিউল ইসলাম ওরফে রফি ওরফে তারেক নামে এক যুবক।

১৭ ফেব্রুয়ারি যশোরের মনিরামপুরে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন বিএনপি নেতা আবু সাইদ ও বজলুর রহমান।

১৮ ফেব্রুয়ারি টেকনাফে বিজিবির সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন হোসেন আহমদ নামে এক যুবক।

১৮ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন রফিকুল ইসলাম খোকন নামে এক ব্যক্তি।

১৯ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুরের যুবদল নেতা মাঈন উদ্দিন ওরফে বাবলুর গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ডেকে নিয়ে যাওয়ার পরদিন তার গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়।

২১ ফেব্রুয়ারি বরিশালের আগৈলঝাড়ায় পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন যুবদল নেতা কবির হোসেন মোল্লা ও তাঁতীদল নেতা টিপু হাওলাদার। ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করার পর বরিশালে তারা ক্রসফায়ারে নিহত হন।

২২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন শ্রমিকদল নেতা আব্দুল ওয়াদুদ। একই থানা এলাকা থেকে আরও তিনজনের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে সুমন ও রবিন নামে দুজনের পরিচয় মিলেছে। একজনের লাশ এখনো মর্গে পড়ে আছে।

ওইদিন ঝিনাইদহে গুলিতে নিহত হন এক বিএনপি নেতা ও ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ছেলে পলাশ এবং বিএনপিকর্মী দুলাল। পরিবার বলেছে, দুই দিন আগে তাদের আটক করা হয়েছিল।

২৪ ফেব্রুয়ারি মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহত হয়েছেন শাহীন নামে এক যুবক। পুলিশ বলেছে, শাহীনের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলার পর সেখানে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ শাহীন নিহত হন। একই দিন মাগুরায় নিহত হয়েছেন টাইগার দাউদ নামে এক যুবক।

২৬ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনে বন্দুকযুদ্ধে তিনজন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে সাদ্দাম ও সোহেল নামে দুজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। র‌্যাব জানিয়েছে তারা বনদস্যু।

২৭ ফেব্রুয়ারি চিরিরবন্দরে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন যুবদল নেতা রেজওয়ানুল ইসলাম। স্থানীয় সূত্র জানায়, রেজওয়ানুলের পিতা স্থানীয় বিএনপি নেতা হাবিবকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ সময় হাবিবের স্ত্রী স্বামীকে রক্ষার জন্য গেলে পুলিশ তার ওপর নির্যাতন শুরু করে। তখন মায়ের ওপর নির্যাতন নিয়ে ছেলে প্রতিবাদ করলে পুলিশ তার ওপর গুলি চালায়।

৪ মার্চ ফেনীতে যৌথবাহিনীর অভিযানকালে আরিফ ফরায়েজী নামে এক ছাত্রদল নেতার পিতা মফিজ উদ্দিন মারা যান। পারিবারিক সূত্র জানায়, যৌথবাহিনীর সদস্যরা ছেলেকে ধরতে এলে তাকে না পেয়ে মফিজ উদ্দিনকে চড় থাপ্পড় মারে। এ সময় বৃদ্ধ মফিজ উদ্দিন হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

এদিকে, গত দুই মাসে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল বোমা, ককটেল ও বোমার আঘাতে নিহত হয়েছেন ৬২ জন। গত ১১ জানুয়ারি যশোরের মুরাদ আলী মোল্লা, ১৩ জানুয়ারি ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়েতে নিহত হন এনাম হোসেন, ১৪ জানুয়ারি রংপুরে নিহত হন রহিমা খাতুন, রহিম বাদশা, জেসমিন আক্তার, তাসিরন বেগম, অজ্ঞাত একজন, ১৫ জানুয়ারি ঢাকায় আবুল কালাম হাওলাদার, ১৫ জানুয়ারি গাজীপুরে তোফাজ্জল হোসেন, ১৮ জানুয়ারি বরিশালে সোহাগ বিশ্বাস, ২০ জানুয়ারি বিজিবি পাহারায় রংপুরে মনোয়ারা বেগম, ২২ জানুয়ারি সানজিদা ইসলাম, শাহজাহান মিয়া, ২৩ জানুয়ারি বগুড়ায় আব্দুর রহিম, ২৬ জানুয়ারি আব্দুল মালেক, ২৭ জানুয়ারি রংপুরে আব্দুর রশিদ, সিলেটে বকুল দেব নাথ, ৩০ জানুয়ারি সুমন হোসেন, ৩১ জানুয়ারি গনেশ দাস, ১ ফেব্রুয়ারি নূর-ই-আলম, ২ ফেব্রুয়ারি লিটন হোসেন লাকসামে, ৩ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় নূরজ্জামান পাপলু, মাইশা তাসনিম, আবু তাহের, মোহাম্মদ ইউসুফ, আসমা বেগম, মাহমুদুল হাসান, মো. ওয়াসিম, কামাল হোসেন, ৪ ফেব্রুয়ারি কুমিল্লায় রাশেদুল ইসলাম, ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় শামিম মিয়া, ৫ ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় শহিদুল ইসলাম, ৬ ফেব্রুয়ারি বগুড়ায় পলাশ হোসেন, ৭ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধায় শিলপা রানি, সুমন, হালিমা বেগম, সুজন, ৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে মুন্না, অজ্ঞাত একজন, ৮ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধায় সাজু মিয়া ও আবুল কালাম।

২৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন লুৎফর রহমান ও জাহাঙ্গীর হোসেন নামে দুজন। ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান কবির ও শাকিল নামে আরো দুজন। এছাড়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরও ১৫ জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিভিন্ন সময় মারা যান।

এদিকে, গত দুই মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত দেড় হাজার মামলা হয়েছে ২০-দলীয় জোট নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গ্রেপ্তার হয়েছেন ২০ হাজারের বেশি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক খুলনা মহানগরী এলাকায় প্রায় দুই হাজার, রংপুরে ৫৩৮, টাঙ্গাইলে ১০৭, রাজশাহী মহানগরীতে ৪৫০, সিলেটে ১৯৬, চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৫০০, নোয়াখালীতে ১৩০, ফেনীতে প্রায় ৪০০, বগুড়ায় ৮১৫, লক্ষ্মীপুরে ৬ শতাধিক, গাজীপুরে চার শতাধিক, যশোরে ২৭৭৫, চাঁদপুরে ৪২০, ভোলায় ১৩৬, সুনামগঞ্জে ৩২৫, গাইবান্ধায় ২৯০, দিনাজপুরে ২০০, কক্সবাজারে ৫৯৯, কিশোরগঞ্জে ৩৫০, ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রায় এক হাজার গ্রেপ্তার হয়েছেন।


শেয়ার করুন