জেলা বিএনপির হস্থক্ষেপ কামনা

অন্ত:কোন্দলে ভুগছে বাইশারীর বিএনপি

bnp flag- CTNনাইক্ষ্যংছড়ি থেকে মুফিজুর রহমান :
১৯৮০ সালের শেষের দিকে যখন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতা, বহুদলীয় গনতন্ত্রের প্রবক্তা, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার দূর্ঘম জনপদ বাইশারীতে আগমন ঘটে তখন সাধারন খেটে খাওয়া হাজার হাজার জনতা তাকে সাদরে গ্রহন করে নিয়েছিল। সেই সময় জিয়াউর রহমান সাধারন জনতার মাঝে ধানের শীষের যে বীজ রোপন করে দিয়েছিলেন সেই রোপিত বীজকে বুকের গহীনে লালিত করে দুই দশকেরও অধিক সময় পার করে সাধারন বিএনপি প্রেমী জনতা। কিন্তু সেই স্বপ্ন এখন শুধুই স্বপ্ন। নেতৃত্ব শূণ্যের কারণে আজ বিএনপির মরা অবস্থা। কাউন্সিল হচ্ছে না দেড় দশক ধরে। যার কারণে নতুন নেতৃত্ব আসার পথ অনেকটাই রুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
দুই হাজার সাল। তখন বিএনপির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। অন্য দল করার লোকই তখন ছিল না। তখনই দলের হাল ধরতে বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল হক মনুকে সভাপতি এবং মির্জা এনামুল হককে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষনা করা হয়। পরে সভাপতির সাথে কোন্দলে পড়ে সাধারন সম্পাদকের পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন মির্জা এনামুল হক। তখন উপজেলা নেতৃবৃন্দদের সাথে দ্বন্দে জড়িয়ে এক প্রকার বাধ্য করে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসাবে সভাপতির আস্থাভাজন ও নিকটতম আত্বীয় ছিদ্দিকুর রহমানকে দায়িত্ব দেয়া হয়। আশা ছিল তাদের মাধ্যমে বিএনপির জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যাবে। কিন্তু না! সেই আশায় বালি ছিটিয়ে দিয়ে তাদের দূর্ব্যবহার ও দলীয় অন্ত:কোন্দলে বিএনপি এখন নেতৃত্ব শূণ্য। যার দ্বায় এড়াতে পারে না সভাপতি এবং সম্পাদক থেকে শুরু করে অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দরাও। এসব দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছে উপজেলা ও জেলার সিনিয়র নেতৃবৃন্দ।
দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতৃবৃন্দদের সাথে আলাপকালে তারা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে জানায়, কমিটি হওয়ার পর মাঝে চলে গেল তের বছর। কি পেলাম আর কি দিলাম হিসাব করলে দেখা যাবে আমরা বিএনপিকে কিছুই দিতে পারিনি। সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক কর্তৃক নেতাকর্মীদের দূর্ব্যবহার, অবমূল্যায়ন, নানা রকম হয়রানী এবং কমিটিতে আত্বীয়করণের ফলে ওয়ার্ড থেকে শুরু করে ইউনিয়নের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা অস্যংখ্য ত্যাগী নেতা আওয়ামীলীগ ও জামায়াতে যোগদান করে। এর মধ্যে আছে সেই সময়ের তুখোড় নেতা সাবেক ইউনিয়ন সাধারন সম্পাদক নুরুল হাকিম চেয়ারম্যান, সাধারন সম্পাদক মির্জা এনামুল হক, যুবদল সাধারন সম্পাদক বর্তমান ৮নং ওয়ার্ড মেম্বার আজিজুল হক, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক রমজান আলম, ৯নং ওয়ার্ড সভাপতি ছৈয়দ হোছন, ৮নং ওয়ার্ড সভাপতি ইসহাক জমাদ্দার, শ্রমিকদলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বেলাল উদ্দিন (মাঝি), সাধারন সম্পাদক নুরুজ্জামান, বিএনপি নেতা নুরুল হাকিম কারবারী, নারিচবুনিয়া বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইদ্রিছ, যুবনেতা সব্বির আহমদ, ছাত্রনেতা বেলাল, মোতাহের আহমদ সহ শত শত নেতাকর্মী।
এ ছাড়াও বিগত ২০১৪ সালে যুবদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অন্ত:কোন্দলে পড়ে বিএনপির সভাপতি কর্তৃক মহান বিজয় দিবসে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা অর্ধনির্মিত অবস্থায় রেখে দলকে হাস্যরসে পরিণত সহ বিগত দিনের রমজান মাসের ইফতার মাহফিলে উপজেলা সভাপতিকে উপেক্ষা করে অনুষ্ঠানস্থল থেকে বের হয়ে যাওয়ার অভিযোগ এবং বিগত উপজেলা নির্বাচনে সাধারন সম্পাদক ছিদ্দিকুর রহমান বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনা না করে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনা করে দলকে প্রশ্নবিদ্ধ করলে তাদের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি বলেও অভিযোগ তুলেন এসব ত্যাগি নেতাকর্মীরা।
বিএনপির নাজুক অবস্থার ব্যাপারে সাবেক সভাপতি আজিজুল হক তালুকদারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিএনপির সমর্থক যথেষ্ট পরিমাণ থাকলেও দলের শীর্ষ পর্যায়ে কিছু স্বার্থনেষী ব্যক্তিকে পরিবর্তন করা না হলে চলমান অন্ত:কোন্দল চরমে চলে যাবে। তখন বিএনপির হাল ধরার মত কেউ থাকবে না। তিনি আরো বলেন, এক সময় বাইশারীতে বিএনপি ছাড়া অন্য দল করার লোকও খুজে পাওয়া যেত না। কিন্তু এখন বিএনপির কঠিন অবস্থায় দলীয় কর্মসূচি পালনের জন্য কোন নেতাকর্মীকে খুজে পাওয়া যায় না।
ছাত্রদল সভাপতি জসিম উদ্দিন, যুবদল সভাপতি এস.এম আক্তারুজ্জামান, শ্রমিকদল সভাপতি সব্বির আহমদ, স্বেচ্ছাসেবকদল সভাপতি আব্দুর রশিদের নিকট এই প্রতিনিধি জানতে চাইলে তারা একবাক্যে স্বীকার করেন, দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় নতুন ত্যাগি যুব নেতারা আশাবঞ্চিত হয়ে পড়েছে এবং বিএনপি সহ অঙ্গ-সংগঠনের বিভিন্ন কমিটিতে নিজেদের আত্বীয়-স্বজনদের পদে রাখার জন্য চাপ সৃষ্টি করে বিএনপিকে এক প্রকার জিম্মি করে রেখেছে। তাছাড়া বিগত দিনে সাধারন সম্পাদক কর্তৃক দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলেও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করতে পারেননি উপজেলা ও জেলা নেতৃবৃন্দরা। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই বাইশারী ইউনিয়ন বিএনপি নেতৃত্ব শূণ্য সহ জনপ্রিয়তা হ্রাস পাবে বলে আশঙ্কা করেন তারা।
বর্তমানে দলকে চাঙ্গা করার প্রত্যয়ে অঙ্গ সংগঠন ও দলের সিনিয়র নেতাদের না জানিয়ে বিএনপি কর্তৃক ওয়ার্ড ভিত্তিক কমিটি গঠনের নামে নিজেরদের মনগড়া পকেট কমিটিতে নিজেদের লোক বসিয়ে ত্যাগি নেতাদের পদ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে বলে জানান বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি ছৈয়দ নুর কারবারী, যুগ্ন সম্পাদক মঞ্জুর আলম সহ একাধিক অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীবৃন্দ।
সর্বশেষ দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা সহ শীগ্রই কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন নেতৃত্বকে বরণ করার জন্য জিয়াউর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাইশারী ইউনিয়নের হাজারো নেতাকর্মী ও সমর্থকরা বান্দরবান জেলা বিএনপির হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন


শেয়ার করুন