অনুষ্ঠিত হলো রিভার ডিফেন্ডার্স ই-কনভেনশন ‘নদী ও জলাভূমি’ মন্ত্রণালয় গঠনের দাবী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ 

সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় নদী নিয়ে কাজ করা নদীকর্মীদের নিয়ে গতকাল অনুষ্ঠিত হলো রিভার ডিফেন্ডারস্ ই-কনভেনশন। উক্ত কনভেনশনে ৫১টি জেলার প্রতিনিধি অংশ গ্রহণ করে নিজ জেলার নদ-নদীর সংকট ও সমাধানে তাদের মতামত তুলে ধরেন। উক্ত কনভেনশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান এ এস এম আলী কবীর। প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সভাপতিত্বে বিশেষ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো. মোশারফ হোসেন ও সেক্রেটারি জেনারেল প্রকৌশলী মো. হাবিবুর রহমান।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ এস এম আলী কবীর বলেন, ‘কমিশন ও নদীভিত্তিক সংস্থাসমূহ সকলে মিলে একটা বৃহত্তর পরিবার এবং আমাদের উদ্দেশ্য নদী সুরক্ষা ও সংরক্ষণ এবং নদ-নদীর সংহত ব্যবস্থাপনা। এর জন্য আমাদের সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা কমিশন থেকে উদ্যোগ নিয়েছি নদীবান্ধব সংস্থাগুলোকে নিয়ে একটি সম্মেলন করার। তিনি আরো বলেন, যেহেতু বাংলাদেশ নদীমাতৃকদেশ তাই নদী ও জলাভ’মি বিষয়ক পৃথক একটি মন্ত্রণালয় গঠন করা যেতে পারে।’

সভাপতির বক্তব্যে প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা যেমন এক আত্মা হয়েছিলাম ঠিক তেমনি নদী ও প্রকৃতি রক্ষার জন্যও আমাদের এক হতে হবে। এ কাজে তরুণদের এগিয়ে আসতেও আহবান জানান তিনি। মুকিত মজুমদার বাবু আরো বলেন, নদী ও জলাভ’মি থেকে আমরা ইকোসিস্টেম সার্ভিস নিবো বিনিময়ে নদীকে ময়লার ভাগাড় বানাবো তা হতে পারে না।’

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চেয়ারম্যান ও হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়কারী প্রফেসর ড. মো. মনজুরুল কিবরীয়া চট্টগ্রাম বিভাগের নদ-নদীগুলোর সংকট তুলে ধরে বলেন, ‘পাহাড়ী এলাকার নদীগুলোকে বাঁচাতে হলে অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলন বন্ধ করতে হবে, বন্ধ করতে হবে তামাক চাষ। বন্ধ হওয়া ঝিরি -ঝরনাগুলো আবার সচল করতে হবে।’ বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ মনির হোসেন বলেন, ‘নদীকেন্দ্রিক বা নদীর অববাহিকায় সকল উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান করতে হবে। শিল্পঘন জেলাসমূহে যেমন গাজীপুর, হবিগঞ্জ,নারায়ণগেঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয় স্থাপন করা জরুরী। পানি আইন ২০১৩ প্রতিপালনে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থাকে সারা দেশের নদীর ফোরশোর চিহ্নিত করে দিতে হবে।’ রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টারের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘নদী রক্ষায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী ও স্বাধীন করতে হবে। তাড়াহুড়া করে গ্রহণ করা স্বল্পমেয়াদী কোন পরিকল্পনা নদী রক্ষায় কল্যাণ বয়ে আনবে না।’ রিভার ডিফেন্ডারস্ ই-কনভেনশন যৌথভাবে আয়োজন করেন বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দল, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশন, হালদা রিভার রিসার্চ ল্যাবরেটরি-চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়, রিভার এন্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার এবং পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশন। কনভেনশনের মিডিয়া পার্টনার চ্যানেল আই, কালের কন্ঠ, সময়ের কাগজ ও নদীবার্তা ডটকম।

নদী ও জালাভ’মি শিরোনামে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন, জাতীয় নদী দিবস প্রবর্তন,জাতীয় নদী ঘোষণা, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী ও স্বাধীন করা, নদীকেন্দ্রিক বা নদীর অববাহিকায় যেকোন উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনায় জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের ছাড়পত্র নেওয়ার বিধান করা, শিল্পঘন জেলাসমূহে যেমন গাজীপুর, হবিগঞ্জ,নারায়ণগেঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয় স্থাপন করা, পানি আইন ২০১৩ প্রতিপালনে পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থাকে সারা দেশের নদীর ফোরশোর চিহ্নিত করে দেওয়া, পাহাড়ী নদীগুলো রক্ষায় অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলন বন্ধ করা এবং তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করা, জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভায় স্ব স্ব জেলার নদীকর্মীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাসহ নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী-খালগুলো রক্ষায় বেশকিছু সুপারিশ উপস্থাপন করা হয় উক্ত কনভেনশনে।


শেয়ার করুন