অনুবাদ গল্প : স্মৃতিসৌধ

 

shajahanমূল: সি.আয়াপ্পন

অনুবাদ: মোহাম্মদ শাহজাহান

[ সি. আয়াপ্পন ভারতের মালয়ালম ভাষার অনন্য প্রতিভাধর কথাশিল্পী। দলিত সম্প্রদায়ের পক্ষে ও মুখোশ-ধারী অত্যাচারী শাসককূলের বিরুদ্ধে মসি-যুদ্ধ চালিয়েছেন আজীবন। ১৯৪৯ সালে জন্ম। মৃত্যু ২০১১ সালে। এখানে তাঁর মূল মালয়ালম থেকে ‘দি মেমোরিয়াল’ শিরোনামে ইংরেজিতে অনুদিত ছোটগল্পটির বাংলা অনুবাদ পত্রস্থ করা হলো।]

ওই ঘটনাটির কথা মনে পড়লে আমরা আজও হাসি আর ক্রোধ সামলাতে পারি না। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত ঘটে-চলা রাজনৈতিক প্রতারণারই একটি ছিলো ঘটনাটি। আমাদের এলাকায় তিন রাস্তার মোড়ে স্থাপিত গান্ধীর ভাষ্কর্যটিই ছিলো সেই প্রতারণার মূল কারণ। সত্যি বলতে কি, ভাষ্কর্যটি নয়, বরং গুটি কয়েক কাকই সমস্যাটি তৈরি করেছিলো। দেশপ্রেমহীন এই কাকগুলো গান্ধীজির ন্যাড়া মাথায় হাগু করে দিয়েছিলো। এই ঘটনাটিকে ঘিরেই সমস্যার ডালপালা বিস্তার শুরু করেছিলো।

আমরা এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরস্পর-বিরোধী দুটি উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়লাম। প্রথম উপদল বললো, কাকের গু থেকে জাতির জনকের মাথা রক্ষার্থে কাউকে নিয়োগের দাবীতে তাৎক্ষণিক একটি নতুন আন্দোলন অবশ্যই শুরু করতে হবে। দ্বিতীয় উপদলের মতে, গান্ধীর ভাষ্কর্যটি বরং টেনে নামিয়ে ভেঙ্গে-চুরে অবশ্যই গঙ্গাজলে নিক্ষেপ করতে হবে-কারণ, গান্ধীকে ভাষ্কর্যে নয়, বরং পরম ভক্তিতে মনের গভীরেই লালন করতে হবে। কাকেরা তো কারও মনের উপর হাগু করতে পারে না আর, তাই না?

আমরা এ নিয়ে বিতর্কে মশগুল থাকাকালেই পূর্বদিক থেকে ক’জন সপ্রতিভ তরুণ এলো। ওদের কথাবার্তা শুনে হেসে ফেললাম আমরা। আমাদের মধ্য থেকে কেউ কেউ বলেই ফেললো, ” আসল রাজনীতিকেরা এসে পড়লো বলে! ” আমাদের দুই উপদলকে নিজেদের দলে ভেড়ানোর জন্যে ওরা কী বললো, জানেন?বলছি, দাঁড়ান। তারা যা বললো, তার সারমর্ম এই:

গান্ধীর ভাষ্কর্যটিকে আরও একশ’ বছর ধরে এভাবে অবশ্যই দন্ডায়মান থাকতে দিতে হবে। আবার হাগু-করা কাকগুলোকেও তাড়ানো যাবে না।অতীতকে তার প্রতিশোধ নিতে দিতে হবে। কাকেরা যে আসলে মৃতদের আত্মা তা তো আমরা জানিই।

মোহাম্মদ শাহজাহান: অনুবাদক, কলামিষ্ট ও আইনজীবী।


শেয়ার করুন