অচল কস্তুরাঘাট

???????????????????????????????
শাহেদ ইমরান মিজান, সিটিএন: 
এক সময়ের প্রাণ চঞ্চল কক্সবাজার-মহেশখালী-কুতুবদিয়া নৌ-রুটের ঐতিহ্যবাহী কস্তুরাঘাট জেটি অচল হয়ে পড়েছে। ঘাট নিয়ে দু’পক্ষের কোন্দলে সৃষ্ট রশি টানাটানির রোষানলে পড়ে এ করুণ দশা সৃষ্টি হয়েছে ঘাটটির। যার ফলশ্রুতিতে এ নৌ-ঘাটটি ঐতিহ্য হারানোর পাশাপাশি যাত্রীরা পড়ছেন চরম দুর্ভোগে। এই নিয়ে ক্ষুব্ধও যাত্রীরা। তাই তারা ঘাটতি সচল করতে কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবী জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঐতিহ্যবাহী কস্তুরাঘাট জেটি অচল হয়ে পড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে বোট সংকট। বতর্মানে মাত্র ৫ টি স্পীড বোট রয়েছে এ ঘাটের নিয়ন্ত্রণে। কাটের বোট নেই একটিও। নেই কুতুবদিয়ার বড় সার্ভিস ট্রলার। চাহিদা মোতাবেক বোট না থাকায় যাত্রীরা ফেরত এসে ৬ নং ঘাটে যেতে বাধ্য হচ্ছে। এ কারণে কস্তুরাঘাট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে যাত্রীরা।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, মহেশখালী পৌরসভার মেয়র মুকছুদ মিয়া ও তার চাচা পরিবেশ বিজ্ঞানী ড. আনচারুল করিমের দ্বন্দ্বের রোষানলে পড়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়েছে কস্তুরাঘাট জেটি। বিগত এক বছর আগে বিশেষ কৌশলে অধিকাংশ স্পীড বোট ও কাটের বোট কব্জায় নিয়ে নেন মহেশখালী পৌর মেয়র মকছুদ মিয়া। তাই নিয়ে দীর্ঘদিন অকেজো পড়ে থাকা ৬নং জেটি ঘাট চালু করেন তিনি। অন্যদিকে সে সময় শুধু মাত্র ৩টি কাটের বোট ও ২০ টির মতো স্পীড বোট নিয়ে ড. আনচারুল করিম অনুসারীরা কস্তুরাঘাট জেটি সচল রাখে। কিছু বোট সংকটের কারণে হঠাৎ অচল হয়ে পড়ে কস্তুরাঘাট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘকাল ধরে কক্সবাজার-মহেশখালী-কুতুবদিয়া নৌ-রুটের কক্সবাজার পয়েন্টের একমাত্র ঘাট ছিল কস্তুরাঘাট। এ ঘাট দিয়েই তিন অঞ্চলসহ বিপুল সংখ্যক লোকজনজন যোগাযোগ করে আসছিল। এছাড়া সাগরে মাছ ধরার নৌকার মাঝি-মাল্লাদের যোগাযোগে মাধ্যম ছিল এ ঘাটটি।
মহেশখালী-কক্সবাজার নৌ-রুটের অধিকাংশ যাত্রী মহেশখালীর। আর এসব যাত্রীর অধিকাংশই মামলা সংক্রান্ত কাজসহ বিভিন্ন জরুরী কাজে কক্সবাজার আসে। তাদের প্রয়োজনীয় অফিস ও আদালত ভবনসহ অন্যান্য দপ্তরগুলো কস্তুরাঘাটের নাগালের বললেই চলে।
মহেশখালীর নতুনবাজার এলাকার আবদুর রহিম বলেন, ‘কস্তুরাঘাট জেটি আমাদের মহেশখালীর লোকজনের জন্য সহজবোধ্য এবং হেঁটেই বোটে উঠা যায়। কিন্তু বোট সংকটের কারণে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে হয়। সে কারণে ২০/৩০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়েও ৬ নং জেটি দিয়ে যেতে বাধ্য হই।’ তবে কক্সবাজার আসতে ৬ নং ঘাট দিয়ে উঠলে জটিলতা সৃষ্টি হয় বলে জানান তিনি। তার মতো অনেকে এ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তারা পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিয়ে বিপুল কষ্ট দেয়ার জন্য ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেন।
রোববার সন্ধ্যায় সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘাটে কোন সচল কোন স্পীড নেই। ডাঙায় দুটি স্পীড অকেজো অবস্থায় পড়ে রয়েছে। টোল বিহীন যাত্রী সেবা দেয়া হলেও মিলছে না যাত্রী। শূন্য পড়ে আছে যাত্রী ছাউনি ও ঘাট কর্তৃপক্ষের কার্যালয়। কার্যালয়ে খোঁজ করে দায়িত্বশীল কাউকে পাওয়া যায়নি।
বোট সংকট ছাড়াও আরো কয়েকটি সমস্যা রয়েছে কস্তুরাঘাট জেটির। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, মুল সড়ক থেকে ঘাটের দূরত্ব। তার জন্য নেই গাড়ি যোগাযোগ ব্যবস্থা। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ কাঠের জেটি ও নড়বড়ে যাত্রী ছাউনির কারণেও যাত্রীরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন এ ঘাট থেকে। ইজারা বিহীন হওয়ায় অবকাঠামো মেরামতে জটিলতা হয় বলে জানিয়েছিলেন কক্সবাজার পৌরসভার নিয়োগকৃত এক সময়কার ঘাটের কর্মকর্তা ফজলুল করিম।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, ‘কস্তুঘাট জেটির উন্নয়নে কয়েকটি পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। তার মধ্যে কাঠের জেটি পর্যন্ত গাড়ির যোগাযোগের ব্যবস্থা করা, কাঠের জেটি ও যাত্রী ছাউনি মেরামত করা এবং প্রচার-প্রচারণা চালানো। শিগ্গিরই সব কিছু বাস্তবায়ন করা হবে।’


শেয়ার করুন