অগ্নিযুগের বিপ্লবী জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ

কালাম আজাদ :

জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী অগ্নিযুগের অন্যতম বিপ্লবী। চট্টগ্রাম জেলার রাউজানের কোয়েপাড়া গ্রামের রত্মেশ্বর চক্রবর্তী মোক্তার ও শান্তিবালা দেবীর ঔরুসজাত সন্তান। জন্ম: ৭ সেপ্টেম্বর ১৯০৬, কোয়েপাড়া, রাউজান, চট্টগ্রাম। পিতা রত্নেশ্বর চক্রবর্র্তী ময়মনসিংহ আদালতে ওকালতি শুরু করলে জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তীর লেখাপড়া শুরু হয় ময়মনসিংহে। অতঃপর পিতার ইচ্ছানুযায়ী ১৯১৮ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপালিটি স্কুলে ভর্তি হন। ভর্তির ৩ বছর পর অর্থাৎ ১৯২১ সালে চট্টগ্রাম মিউনিসিপালিটি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পরীক্ষার্থী থাকা অবস্থায়  অধ্যয়নকালে অসহযোগ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন এবং ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিতে পারেন নি। দেশে যখন প্রবলভাবে অসহযোগ আন্দোলন চলছে তখন ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে খদ্দরের চাদর গায়ে দিয়ে গ্রামে গ্রামে কংগ্রেসের সদস্য সংগ্রহ ও ফাণ্ডের জন্যে চাঁদা সংগ্রহ করার কাজে লেগে যান। এই দিকে তার পিতা রত্মেশ্বর চক্রবর্তীও কক্সবাজার মহকুমায় কংগ্রেসের পক্ষে অসহযোগ আন্দোলন সংগঠিত করার লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে কক্সবাজারে আসেন।

এ সময় পরিবারের আর্থিক দুর্গতি লাঘবের লক্ষ্যে ১৯২২ সালে ঠাণ্ডাছড়ি চা বাগানে কেরানির চাকরিতে যোগদান করে ১৯২৫ সাল পর্যন্ত ওই চা বাগানে চাকুরি করেন। ১৯২৬ সালে প্রাইভেট পরীক্ষার্থী হিসেবে রাঙ্গুনিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিপিন চৌধুরীর অনুপ্রেরণায় প্রাইভেট পরীক্ষার্থী  হিসেবে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে স্টার মার্কসহ প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ  হন। ইতোমধ্যে তার পিতাও অসহযোগ আন্দোলন শেষে  কক্সবাজার মহকুমা আদালতে আইন পেশা শুরু করেন এবং কক্সবাজারে বসতি গড়েন।

তার পিতা কক্সবাজার মহকুমা আদালতে ওকালতি শুরু করলে জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী চা বাগানের চাকুরি ছেড়ে দিয়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯২৮ সনে ওই কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে এফ এ  (বর্তমানে এ্ইচ এস সি) এবং ১৯৩০ সালে ইংরেজীতে  বিএ (সম্মান) পাশ করে পটিয়া এ.এস.রাহাত আলী হাই স্কুলে শিক্ষকতায় যোগ দেন। এর মধ্যে তার বাবা ওকালতির সূত্রে কক্সবাজারে বসতি স্থাপন করেন। পটিয়া এ এস রাহাত আলী হাই স্কুলে শিক্ষকতা করার সময় মাস্টারদা সূর্যসেনের সাথে পরিচিত হন। এ সময় তিনি বিপ্লবী অনেক ছাত্রদেরকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করতেন।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার আক্রমণ এবং পটিয়ার ধলঘাট যুদ্ধের পর মাস্টার সূর্যসেন পটিয়া অবস্থানকালে সূর্যসেনের বিপ্লবের প্রভাবে ডিআইবি পুলিশের নজরবন্দী হন। ১৯৩১ সালের ১৭ ডিসেম্বর পটিয়া এ এস এ রাহাত আলী হাইস্কুল থেকে গ্রেফতার করে বৃটিশ ডিআইবি পুলিশ। ১৯৩৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন ডিটেনশন ক্যাম্পে কারান্তরীন শেষে ১৯৩৮ সালে কক্সবাজারে ফিরে ওকালতি শুরু করেন। এর পর বিভিন্ন বাংলার বিভিন্ন আন্দোলনে শরীক হয়েছিলেন তিনি। তার ছোট ভাই শৈলেশ্বর চক্রবর্তীও অগ্নিযুগের একজন শহীদ বিপ্লবী। জন্ম বাবার চাকুরি সূত্রে ময়মনসিংহে। ১৯১০ সালে। ডাক নাম শৈল। শৈল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আই এ পাশ করে কলকতা বিদ্যাসাগর কলেজে ইংরেজি বিভাগে অনার্স-এ ভর্তি হন। কিন্তু পড়া তার শেষ হয়নি। ১৯২৬ সালের দিকে কক্সবাজারে এসে বাবা রত্মেশ্বর চক্রবর্তী ও বড় ভাই জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী, বিধু সেনের মাধ্যমে কক্সবাজারে বিপ্লবী গ্রাম সংগঠনে যোগ দেন। পরে মাস্টারদা সূর্যসেনের সাহচর্যে চলে আসেন চট্টগ্রামে। ১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল সংঘটিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম সাহসী সৈনিক এবং ২২ এপ্রিল জালালাবাদ যুদ্ধে যে ৫২ জন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রী ফৌজ সদস্য অংশ নেন তার মধ্যে অন্যতম তিনি।

মাস্টারদা সূর্য সেনের নির্দেশে ২০ বছরের তরুণ কর্মী শৈলেশ্বর চক্রবর্তী দুই বার পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের নেতৃত্ব দেন। প্রথমবার ব্যর্থ হয়ে দ্বিতীয় বার ১৯৩২ সালের ১০ আগস্ট  ইউরোপিয়ান ক্লাবে এক বড় অনুষ্ঠান হবে এমন খবর পেয়ে মাস্টারদা সুর্যসেন শৈলেশ্বর চক্রবর্তীকে নেতা করে ৫ সদস্যের একটি বিপ্লবী দলকে ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণের নির্দেশ দেন (৫ বিপ্লবীর অন্যরা হলেন, কালীকঙ্কর দে, মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল চক্রবর্তী ও বীরেশ্বর রায়)। পড়ৈকোড়া গ্রামের রমনী চক্রবর্তীর বাড়ি কুন্তলা ছিল বিপ্লবী দলের গুপ্ত শিবির। এই গুপ্ত শিবিরে মাস্টারদা সুর্যসেন ও প্রীতিলতাকে রেখে তারাকেশ্বর চক্রবর্তী (ফুটুদা), কালিকঙ্কর দে ও শৈলেশ্বর চক্রবর্তী পাহাড়তলী ক্লাবের নিকটস্থ গ্রাম কাট্টলী চলে আসেন। কাট্টলী শিবির থেকে আক্রমণে অংশগ্রহণের জন্য রওয়ানা হন তারা। তারাকেশ্বর চক্রবর্তী (ফুটুদা) বোমা, রিভলবার, রাইফেল ও তরবারিতে সজ্জিত বিপ্লবী দলকে যাত্রা করিয়ে দেন বলে ওই ইউরোপিয়ান ক্লাবের আক্রমণে অংশগ্রহণকারী বিপ্লবী সৈনিক বীরেশ্বর রায় (১৯১৩-১৯৯১) ‘পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ’ নামক স্মৃতিকথায় উল্লেখ করেছেন। এ ক্লাবের অতি কাছের ঢালে আড়াল নেয় বিপ্লবীরা। তাদের উপর নির্দেশ ছিল নিচ থেকে সবুজ সংকেত পার সঙ্গে আক্রমণ করার। কিন্তু ওই দিন রাত নটা পর্যন্ত অপেক্ষা করেও কোনো ধরনের সবুজ সংকেত না আসায় সবাইকে ব্যর্থ মনোরথে ফিরে যেতে হয় শহরের কাট্টলী গ্রামে। এই ব্যর্থতার আঘাত সহ্য করতে না পেরে ক্ষোভে সমুদ্র তীরবর্তী কাট্টলী গ্রামের বিপ্লবী ঘাটিতে পটাশিয়াম সানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন

যে রাতে শৈল ব্যর্থতার দায়ভার সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছিলেন  সে রাত ছিলো মহররমের রাত। কাট্টলীস্থ বঙ্গোপসাগরের তীরে বালি খুড়ে গভীর গর্ত করা হলো। গর্তের মধ্যে পাতা হল শৈল’র শেষ শয্যা। বিপ্লবী দলের জাতীয় পতাকায় ঢেকে দেওয়া হলো তার দেহ। বিপ্লবী সাথীরা শবদেহ ফুলে ফুলে ঢেকে ফেললেন।

শৈলশ্বর চক্রবর্তীর দাদা (বড় ভাই) জ্যোতিশ্চর চক্রবর্তী তখন বিপ্লবী দলে যুক্ত থাকার অপরাধে দেউলি ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি ছিলেন। দেউলি ক্যাম্পে চট্টগ্রামের সুরেশ সেনসহ আরো কয়েকজন বিপ্লবী তার সঙ্গে কারা জীবন করছিলেন ওই সময়। একদিন চট্টগ্রামে যারা বিভিন্ন বিপ্লবী কার্যকলাপ সম্বন্ধে আলাপ-আলোচনা করছিলেন এমন সময় জ্যোতিশ্চর চক্রবর্তী সেখানে উপস্থিত হলেন। কথা প্রসঙ্গে শৈলশ্বর চক্রবর্তীর আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ল। এই মর্মান্তিক ঘটনা শুনে শোকাহিভূত হয়ে পড়লেন জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী।

১৯৩১ সালে গ্রেফতার হওয়ার হুগলি, রহমতপুর, ফরিদুপুর সহ বিভিন্ন জেলে ডিটেনশনে ছিলেন।  আটক থাকাকালীন সময়ে ডিটেনশনে থেকেই ১৯৩৩ সালে ইংরেজি সাহিত্যে এম.এ, এবং ১৯৩৫ সালে ‘বি এল’ ( বর্তমানে এলএলবি) ডিগ্রি লাভ করেন। অবশেষে হুগলি ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে ফরিদপুরের কোটলী পাড়া থানায় নিয়ে আসা হয় এবং ১৯৩৬ সাল পর্যন্ত (অক্টোবর) পর্যন্ত সেখানে অন্তরীন রেখে পরে তার বাবার কক্সবাজাস্থ বাসায় পুলিশ হেফাজতে নিয়ে আসা হয় এবং ১৯৩৭ সালে অন্তরীনের মেয়াদ শেষ হয়। ১৯৩৮ সালে কক্সবাজারে ফিরে ওকালতি শুরু করেন। এরপর পুরোদমে কংগ্রেসের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন এবং বৃটিশ আন্দোলনে শরীক হন ফের।

১৯৪৭ সালের ৩ জুলাই Indian Independence Act ১৯৪৭ এর মাধ্যমে ১৪ ও ১৫ আগস্ট ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্ব মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে। পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরদিন কক্সবাজারের কাছারী পাহাড়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করা হয়। জাতীয় কংগ্রেস কক্সবাজার মহকুমা সভাপতি মণিন্দ্র লাল চৌধুরী মোখতার এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে কংগ্রেস নেতা হিসেবে এডভোকেট জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তীও উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানি পতাকা উত্তোলন করেন কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসক আবুল খায়ের আই.সি.এস। ওই সময় উপস্থিত ছিলেন অগ্নিযুগের বিপ্লবী পুর্ণেন্দু দস্তিদার (ওই সময় তিনি কক্সবাজার মহকুমা আদালতে ওকালতি করতেন), অগ্নিযুগের বিপ্লবী এডভাকেট সুরেশ চন্দ্র সেন, মুসলিম লীগের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মোমতাজুল হক ।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর পরই ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর এবং ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনে শুরু হলে কক্সবাজারেও এর প্রভাব পড়ে। অন্যান্যের সহায়তায় তিনিওি এ আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের কক্সবাজারের ছাত্ররদের আন্দোলনে শরীক হয়েছেন।

২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নটি অমিমাংসিত রেখে পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থা পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করে ফের পূর্ব পাকিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী নুরুল আমিন বাংলা ভাষার বিরুদ্ধে বক্তব্য এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি সোমবার পুলিশ জন নিরাপত্তা আইনে এমএলএ মাওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, খয়রাত হোসেন, গোবিন্দ লাল ব্যানার্জি, মনোরঞ্জন ধর, অবিভক্ত বাংলার মুসলিম লীগের শেষ সাধারণ সম্পাদক, খেলাফত রাব্বানী পার্টির আবুল হাশিম, হামিদুল হক চৌধুরীসহ আটজনকে গ্রেফতার করার পর সারাদেশ উত্তাল হয়ে উঠে। সারাদেশের ন্যায় ২৪ ফেব্রুয়ারি ও ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের সর্বত্র হরতাল পালিত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি বিকালে কক্সবাজারে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে আরো জোরদার করতে ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে তথা ১৯৪৮ সালের ৬ জানুয়ারি বাংলার দাবিতে সরকারি থেকে পদত্যাগকৃত অধ্যাপক ও সাবেক ডাকসু ভিপি ফরিদ আহমদ এর নেতৃত্বে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় অগ্নিযুগের বিপ্লবী সুরেশ সেন (১৯০৫-১৯৮১), এডভোকেট জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী (১৯০৬-১৯৯৯) প্রমুখের উপস্থিতিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি রুমালিয়ারছড়ায় এক জন সমাবেশের সিদ্ধান্ত এবং সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা কমিটি আহুত ৫ মার্চ শহিদ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

ঢাকা সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির ডাকা ৫ মার্চ শহিদ দিবস সারাদেশের ন্যায় কক্সবাজারে পালিত হয়। ভাষা আন্দোলনে শহিদদের স্মরণে খতমে কোরআন, ছাত্র ধর্মঘট, সব দোকান পাট বন্ধ, কোর্ট-অফিস বন্ধ ছিল সেই দিন। কক্সবাজার উচ্চ বিদ্যালয়, চকরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, রামু খিজারী বিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রধর্মঘট পালনের পাশাপাশি রাষ্ট্রভাষার দাবিতে মিছিল করে। কক্সবাজার শহরে কাছারী পাহাড়ে ১৯৩০ সালে সংঘটিত চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ ও জালালাবাদ যুদ্ধের সাহসী সৈনিক সুরেশ সেন, মৌলভী ফরিদ আহমদ, আয়ুব আলী, বদিউল আলম প্রকাশ বদু মাস্টারের পরামর্শে ছাত্র নেতা খালেদ মোশাররফ, আবদুল মাবুদ এখলাছি, আমিরুল কবির চৌধুরী এর নেতৃত্ব এক প্রতিবাদী মিছিল নিয়ে কাছারী পাহাড়ে হাজারো ছাত্র জনতার সমাবেশ হয়। ওই সমাবেশে সরকারি দমন পীড়নের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানোনা হয়। মো. আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সুরেশ সেন, জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তীও। ওই সময়ের ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বকারী বিচারপতি আমিরুল কবির চৌধুরী সর্ব বিষয়ে জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তী এডভোকেট,পরামর্শ দিতেন বলে একটি লেখায় উল্লেখ করেছেন। সুরেশ সেন, জ্যোতিশ্চর চক্রবর্তী প্রমুখের সহায়তায় কক্সবাজার থাকাকালে ১৯৫৩ ও ১৯৫৪ সালে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে সকলের জন্য কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিলের ব্যবস্থা করা হতো বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন।

এরপর বাংলার বিভিন্ন আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন তিনি। প্রায় ৫৫ বছর কক্সবাজার আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। চল্লিশের দশকে কিছুকাল কলকাতার আনন্দবাজার এবং দি স্টেটসম্যান পত্রিকার জেলা সংবাদদাতা হিসেবে সাংবাদিকতা করেন। ১৯৪০-৬০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত কক্সবাজার পাবলিক ইন্সটিটিউটের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৬২ সালে শিক্ষাব্যবস্থায় অনগ্রসর কক্সবাজার মহকুমাকে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে নেয়ার জন্যে এবং কক্সবাজারে কলেজ প্রতিষ্ঠার অনুপ্রেরণায় গঠিত হয় কক্সবাজার মহকুমা শিক্ষা উন্নয়ন কমিটি। তৎকালিন কক্সবাজার মহকুমা প্রশাসক (এসডিও) হারুন অর রশিদ সিএসপিকে আহ্বায়ক এবং স. আ. ম শামসুল হুদা  চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে গঠিত মহকুমা শিক্ষা উন্নয়ন কমিটিতে জ্যোতিশ্বর চক্রবর্তীও একজন সদস্য ছিলেন। এ কমিটির সিদ্ধান্ত ক্রমে যাত্রা শুরু হয় কক্সবাজার কলেজের( কক্সবাজার সরকারি কলেজ)।

১৯৬০ সালে কক্সবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ১৯৬৩ সালে রাউজান কোয়েপাড়া বালিকা বিদ্যালয় প্রভৃতি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি কক্সবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন এবং সরকারীকরণের পূর্ব দিন পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন। কক্সবাজার কলেজ প্রতিষ্ঠার পরে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক মোশতাক আহমদ অন্যত্র চলে গেলে তিনি অবৈতনিক অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির একাধিকবার সভাপতি, কক্সবাজার জেলা বাস্তবায়ন পরিষদ সদস্যসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে জড়িত ছিলেন। সমাজসেবায় অবদানের জন্য কক্সবাজার জেলা প্রশাসন পদক ২০০৪ (মরণোত্তর) লাভ করেন। মৃত্যু. ১ সেপ্টেম্বর ১৯৯৯।

 

দোহাই

 ১.    মালিক সোবহান, কক্সবাজার চরিত-কোষ, জুলাই ২০০৭, কক্সবাজার : কক্সবাজার সাহিত্য একাডেমী।

২.    বীরেশ্বর রায়, পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব আক্রমণ, শেখ রফিক সম্পাদিত ‘প্রীতিলতার আত্মকথা’, ১০ ডিসেম্বর ২০১৩।

৩.    রূপময় পাল, চট্টগ্রাম বিদ্রোহের শহীদ ও বীরবৃন্দের সংক্ষিপ্ত জীবনী’, উদ্ধৃতি-শরীফ শমসির সম্পাদিত ‘ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রাম চট্টগ্রাম বিদ্রোহ ও বিপ্লবী মহানায়ক সূর্যসেন’। ফেব্রুয়ারি ২০১১, ঢাকা : অনিন্দ্য প্রকাশ।

৪.    আনন্দ দাশগুপ্ত, চট্টগ্রাম বিদ্রোহের কাহিনী, বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশ, বিপ্লবীদের কথা প্রকাশনা ২০১৪।

৫.    কালাম আজাদ, ‘ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার’, ফেব্রুয়ারি ২০১৫, চট্টগ্রাম : তৃতীয় চোখ।

৬.    অধ্যাপক নুর আহমদ, কক্সবাজারের ইতিহাস, ২০০৫।

লেখক : কবি-সাংবাদিক। সর্বশেষ প্রকাশিত গ্রন্থ :‘ভাষা আন্দোলনে কক্সবাজার ’

 


শেয়ার করুন