‘যারা আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে, অপরাধ করে—তারা মনে করে, পার তো পেয়ে গেছি। এখন কে আমাদের বিচার করবে? ইনশাআল্লাহ, এবার ন্যূনতম যেটা আমাদের দাবি, যে সাত দফা দাবি এগুলো সময় থাকতে মেনে নিন। কিন্তু, এটা অমান্য করলে বিচার হবে। ২০১৪ সাল থেকে সংবিধান লঙ্ঘন করার জবাবদিহিতা, সেটাও জনগণ আপনাদের থেকে আদায় করবে।’ শনিবার বিকালে চট্টগ্রামের কাজির দেউড়িতে অবস্থিত মহানগর বিএনপির কার্যালয় নসিমন ভবনের সামনে আয়োজিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের মানুষ আজ নিরাপদ নেই। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়নি। ওই নির্বাচন সংবিধানবিরোধী হয়েছে। তাই এবার সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি আদায়ের লক্ষে সাত দফা ঘোষণা করেছে ঐক্যফ্রন্ট। এই সাতদফা আদায় না হলে ঐক্যফ্রন্ট ঘরে ফিরবে না। এটা গণমানুষের দাবি।
সিলেটে গণরায় হয়েছে উল্লেখ করে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আজকে আপনারা জানিয়ে দিন, যারা ক্ষমতা আকড়িয়ে বসে আছে তাদের। হাত উঁচু করে বলুন, আপনারা সাত দফার পক্ষে আছেন কি না। আপনার রায় দিয়েছেন, এখানেও গণরায় হয়ে গেছে। এরপর আমরা রাজশাহীতে যাবো, শেষে ঢাকায় এটাকে আমরা সম্পন্ন করবো। এবার জনগণ যখন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। আপনারা জেনে রাখুন, এই চিটাগং থেকে জনসভা করে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। অর্থাৎ এটা অসম্ভব না। এটা সম্ভব।’
এ বক্তব্যেও ঐক্যফ্রন্টের পক্ষের দাবি ও দেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবির কথা তিনি শুরুতে বলেননি। এ সময় পাশ থেকে এক নেতা তাকে বিষয়টি মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়ার ব্যাপার নয়, এটা তো হওয়ার ব্যাপার। এটা আর কত চাওয়া হবে। চাইতে চাইতে তো মানুষ ক্লান্ত হয়ে গেছে। ওর মুক্তি অবশ্যই হোক।’
উল্লেখ্য, এর আগে গত ২৪ অক্টোবর সিলেটে প্রথম সমাবেশ করে ঐক্যফ্রন্ট। সেখানেও জনসভার শেষদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে অপর এক নেতা মনে করিয়ে দিলে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তো সাত দফার মধ্যেই আছে বলে মন্তব্য করেন ড. কামাল হোসেন।
এ জনসভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলটির সিনিয়র নেতারা এবং ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অন্য দলের নেতারা বক্তব্য রাখেন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন।
এর আগে দুপুর থেকে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলা থেকে মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দিতে থাকে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে কাজির দেউরি এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। সমাবেশকে ঘিরে ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
সমাবেশ শুরুর আগে সকাল ১০টায় গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ ঐক্যফ্রন্টের নেতারা চট্টগ্রাম পৌঁছান। এরপর তারা হজরত শাহ আমানত (রহ.) এর মাজার জিয়ারত করেন।