হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে খামার; ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন

বিশেষ প্রতিনিধি:

গহীন বনে হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে ১৫ একরের খামার গড়ে তোলার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন, বন বিভাগ ও পরিবেশ অধিদফতর। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থার পাশাপাশি দখল উচ্ছেদ করে হাতির অভয়ারণ্য ফিরিয়ে দেয়ারও কাজ করছে প্রশাসন।

এ বিষয়ে গতকাল (সোমবার) রাতে অনলাইন ও স্হানীয় পত্রিকায় ‘হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে ১৫ একরের খামার’ শিরোনামে তথ্যভিত্তিক সচিত্র সংবাদ প্রকাশিত হলে এ উদ্যোগ নেয়া শুরু করে প্রশাসন।

সোমবার রাতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন জানিয়েছেন, হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংস করে খামার স্থাপন খুবই মর্মান্তিক। এবিষয়ে বন বিভাগকে চিঠি দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য এডিএমকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মোহা. শাজাহান আলি জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বন বিভাগকে চিঠি ইস্যু করা হয়েছে। অপরদিকে পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক শেখ মো. নাজমূল হুদা জানিয়েছেন, হাতির অভয়ারণ্য ধ্বংসের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের কক্সবাজার রেন্জ কর্মকর্তা তারেকুর রহমান বলেন, ‘দখলদারের বিরুদ্ধে ইতিপূর্বে মামলা হয়েছে। এখন উচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছে।’

প্রকাশিত সংবাদটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-

হাতির অভয়ারণ্যের ঝিরিতে (হাতির ডেরা) পাহাড় কেটে দেয়া হয়েছে বিশাল আকারের বাঁধ। সেখানে করা হচ্ছে মাছের চাষ। হাতি হত্যা ও দখল পাকাপোক্ত করতে রাখা হয়েছে ১০/১২ জনের একটি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী বাহিনী। গড়ে তোলা হয়েছে হাঁস-মুরগী, গরু, ছাগল ও মহিষের খামার। বিস্তীর্ণ বন কেটে লাগানো হচ্ছে বিভিন্ন ফলজ গাছ। স্থাপন করা হয়েছে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল, টিউবওয়েলসহ অনেক স্থাপনা।এভাবে বনের ১৫ একরের বাগান কেটে প্রায় এক বছর ধরে হাতির অভয়ারণ্য (হাতির ডেরা) ধ্বংস করে নিজস্ব খামারবাড়ি গড়ে তুলছেন একটি ভূমিদস্যু চক্র।

কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের লিংকরোড বনবিটের মনুরঘোনা এলাকায় প্রকৃতি ধ্বংসের এই ভয়াবহ কর্মযজ্ঞ চলছে প্রকাশ্যেই। এটি হিমছড়ি জাতীয় উদ্যান এর অন্তর্ভুক্ত লতাগুল্ম সম্বলিত গভীর ও ঘন বন। কিন্তু স্থানীয় বনবিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজসে ভূমিদস্যুরা এসব অপকর্ম করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। শুধু তাই নয়, স্থানীয় বনবিট কর্মকর্তাকে বার বার মৌখিক অভিযোগ করেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

৭/৮ মাস আগে দখল কাজের শুরুতে বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে একবার অভিযান চালিয়ে একটি মামলা দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। এরপরই মূলতঃ স্থানীয় বনবিট কার্যালয়ে কর্মরতদের সাথে যোগসাজশ করে দখল প্রক্রিয়া জোরদার করা হয়। স্থানীয়রা জানান, মহুরীপাড়া এলাকার দিদারুল আলম খোকন ও আবু ছৈয়দের নেতৃত্বে একটি ভূমিদস্যু দল ওই কাজে জড়িত।

গত ৫/৬ মাসে সেখানে অন্তত ৫ হাজার গাছ কেটে নেয়া হয়েছে। এছাড়াও আরো বেশ কয়েকটি পয়েন্টে চক্রটি সরকারী ভূমি দখল অব্যাহত রেখেছে। সরেজমিন দেখা গেছে, ২০১৪-১৫ এর সামাজিক বনায়নের মনুরঘোনা এলাকায় ১০/১৫ জন শ্রমিক দিয়ে বিস্তীর্ণ বনের গাছ কেটে পরিষ্কার করে ফেলা হয়েছে। সেখানে হাতির ডেরার একটি পাহাড়িঝিরিতে পাহাড় কেটে বাঁধ দেয়া হয়েছে। বাঁধ দিয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি গরু, ছাগল, মহিষ, হাঁস, মুরগীর খামার গড়ে তোলা হয়েছে।

স্থাপন করা হয়েছে সৌরবিদ্যুতের প্যানেল, টিউবওয়েলসহ বিভিন্ন স্থাপনা। শ্রমিক দিয়ে একের পর এক পাহাড় দখল করে বনের গাছগাছালি পরিষ্কার করে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ফলজ গাছ রোপন করা হচ্ছে। এতে বনের জমি দখলের পাশাপাশি হাতির অভয়ারণ্য, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’ এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, দখলবাজ চক্র যেহারে জীববৈচিত্র্য লতাগুল্ম সমৃদ্ধ গভীর ঘন বনজঙ্গল দখল করে পাহাড়-গাছ ইত্যাদি কেটে নিয়ে বনের জমি দখল করে বাণিজ্যিক কার্যক্রম গড়ে তুলছে, তাতে ওই অঞ্চলের হাতির অভয়ারণ্য, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল ধ্বংস হচ্ছে। লোকালয়ে হাতির আক্রমনের এটিও একটি অন্যতম কারণ উল্লেখ করে তিনি এসব অবৈধ দখল উচ্ছেদ করে হাতিসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের আবাসস্থল ফিরিয়ে দেয়ার দাবী জানান।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোঃ হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘এটি আমার জানা ছিল না। দ্রুত অভিযান চালিয়ে দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’


শেয়ার করুন