সামাজিক বনায়ন নিধন করে বালু লুট, পরিবেশ অধিদপ্তরের অভিযান

এ কে এম ইকবাল ফারুক, চকরিয়া:
চকরিয়ায় সামাজিক বনায়নের বৃক্ষ নিধন করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা লুট করে নেয়ার স্থানে যৌথ অভিযান চালিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ।

বুধবার (১৬ সেপ্টেম্বর ) দুপুর থেকে একটানা বিকাল পর্যন্ত এ অভিযান চালানো হয়। কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদার নেতৃত্বে বন বিভাগের লোকজন এ অভিযান চালায়। এ সময় বালু লুটকারীরা পালিয়ে গেলেও অবৈধ বালু উত্তোলন কাজে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি ড্রেজার মেশিন উদ্ধার করা হয়। কিন্তু পরবর্তীতে ওইসব ড্রেজার মেশিন রহস্যজনক কারণে জব্দ তালিকায় উল্লেখ করা হয়নি বলে জানা গেছে।

কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের অধিন খুটাখালী বনবিটের সংরক্ষিত বন্ঞ্চলের পাগলির বিল হারগাজা ছড়ার (খাল) মাথা নামক এলাকায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা লুট করে নেয়ার অভিযোগ উঠে একটি প্রভাবশালী ভূমিদস্যু চক্রের বিরুদ্ধে। দিবারাত্রি ২০/২৫টি ড্রেজার মেশিন প্রভাবশালী ওই ভূমিদস্য চক্রটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এসব বালু উত্তোলনের পর নির্দিষ্ট স্থানে মওজুত করে তা ডাম্পার গাড়ি দিয়ে বিভিন্ স্থানে তা পাচার করে দিলেও সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ রহস্যজনকভাবে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করে চলছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, বালু লুটের স্থানটি খুটাখালী বনবিট ও ডুলাহাজারা সাফারী পার্কের অংশে পড়ায় সংশ্লিষ্ট দু’পক্ষই বালুদস্যুদের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে এ বালু লুটের সুযোগ করে দিলেও এর দায় নিচ্ছিলেন না কেউ। ফলে বালুদস্যদের কবলে পড়ে একদিকে যেমন পরিবেশের মারত্নক বিপর্যয় ঘটে তেমনি সরকারও লাখ লাখ টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়। এ ব্যাপারে প্রতিকার চেয়ে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের পক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ এক উপকারভোগী ও স্থাণীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন বাদী হয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে বুধবার দুপুর থেকে একটানা বিকাল পর্যন্ত বালু লুটকৃত স্থানে অভিযান চালায়। এ সময় ডুলাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলামসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের লোকজন উপস্থিত ছিলেন।

সামাজিক বনায়নের উপকারভোগী ও ক্ষতিগ্রস্থ বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন বলেন, গত ২০১১-১২ সনে ডুলাহাজার ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা পরিষদের নামে খুটাখালী মৌজার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ৫০ একর জায়গা বরাদ্ধ নিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ গাছ রোপন করে বাগান সৃজন করেন তারা। কিন্তু একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বালুরচর এলাকার মৃত বাহার উল্লাহ’র ছেলে মো. সাইফুল ইসলাম পুতু (৩৫), একই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নতুন পাড়া এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেরে আয়াত উল্লাহ (৩৭), একই এলাকার আবুল খায়েরের ছেলে বেলাল উদ্দিন ড্রাইভার (৪০) ও হেলাল উদ্দিন (৩২) ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব নতুন পাড়া এলাকার মৃত আবুল হোসাইনের ছেলে আমিন উদ্দিন (৪০) এবং আরো অন্যান্য লোকজন দূর্লোভের বশীভ’ত হয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় উপকারভোগীদের বাগান জবর দখল করে বাগানের সম্পূর্ণ বৃক্ষ নিধন করে উজাড় করে ফেলে। পরবর্তীতে ওই চক্রটি বাগান ভুমিতে বালি কাটার ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের পর তা নির্দিষ্ট স্থানে স্থুপ করে একের পর ডাম্পার গাড়ি দিয়ে লুট করে নিয়ে যায়। বর্তমানেও ওইসব ব্যক্তিরা সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদের বাগান নিধন করে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু লুট করে যাচ্ছে।

বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আরও অভিযোগ করেন, এসব বালু লুটকারীদের এ অনৈতিক কাজের ব্যাপারে আমারা উপকারভোগীরা বাঁধা দিলে তারা আমিসহ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের অন্যান্যদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণ নাশের হুমকী দিয়ে ধাওয়া করে। এ সময় প্রভাবশালী বালুদস্যুরা তাদের এ অনৈতিক কাজে আবারো কেউ বাঁধা দিলে তাকে গুলি করে হত্যার পর লাশ গুম করে ফেলার হুমকি প্রদান করেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে আমরা বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এখন চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগছি।

স্থানীয় বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্থ উপকারভোগী দাবী করেন, প্রভাবশালী ভ’মিদস্যুদের বালু লুটের স্থানটি খুটাখালী বনবিট ও ডুলাহাজারা সাফারী পার্কের অংশে পড়ায় সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম ও খুটাখালী বিট কর্মকর্তা রেজাউল করিম বালুদস্যুদের কাছ থেকে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রকাশ্যে এ বালু লুটের সুযোগ করে দিয়েছেন।

তবে খুটাখালী বিট কর্মকর্তা রেজাউল করিম বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সামাজিক বনায়নে অবৈধ ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে ইতিপূর্বে ডিএফও স্যারের নির্দেশে সেখানে অভিযান চালানো হয়। অভিযানকালে ঘটনাস্থলে বালুর বিশালাকার একটি স্থুপ পাওয়া গেলেও কোন ড্রেজার মেশিন ও বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত কাউকে পাওয়া যায়নি। বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের বিষয়টি সঠিক নয় বলেও জানান তিনি।

অপরদিকে সাফারী পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের অধিন খুটাখালী বনবিটের সংরক্ষিত বন্ঞ্চলের পাগলির বিল হারগাজা ছড়ার (খাল) মাথা নামক এলাকায় ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে তা লুট করে নেয়ার অভিযোগ পেয়ে যৌথ অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ। এসময় বালু লুটকারী পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা যায়নি। তিনি আরও বলেন, বালু উত্তোলনের স্থানটি সাফারী পার্কের নিয়ন্ত্রনাধীন নয়। সুতরাং বালু উত্তোলনকারীদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টিও সঠিক নয় ।


শেয়ার করুন