সাংবাদিকতা ও ইসলাম

হুমায়ুন সিকদার

সাংবাদিকতা হল বিভিন্ন ঘটনাবলী, বিষয়, ধারণা, ও মানুষ সম্পর্কিত প্রতিবেদন তৈরি ও পরিবেশন, যা উক্ত দিনের প্রধান সংবাদ এবং তা সমাজে প্রভাব বিস্তার করে। এই পেশায় শব্দটি দিয়ে তথ্য সংগ্রহের কৌশল ও সাহিত্যিক উপায় অবলম্বনকে বোঝায়। মুদ্রিত, টেলিভিশন, বেতার, ইন্টারনেট, এবং পূর্বে ব্যবহৃত নিউজরিল সংবাদ মাধ্যমের অন্তর্গত।

সাংবাদিকতার যথোপযুক্ত নিয়মের ধারণা ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন রকম হয়ে থাকে।

সাংবাদিক —

সংবাদদাতা বা সাংবাদিক (ইংরেজি: Journalist) বিভিন্ন স্থান, ক্ষেত্র, বিষয় ইত্যাদিকে ঘিরে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সংবাদ সংগ্রহসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহপূর্বক সংবাদ কিংবা প্রতিবেদন রচনা করে সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রেরণ করে থাকেন। পেশাজীবি হিসেবে একজন সাংবাদিকের কাজই হচ্ছে সাংবাদিকতায় সহায়তা করা। বিভিন্ন বয়সের পুরুষ কিংবা নারী এ সাংবাদিকতাকে অন্যতম মর্যাদাসম্পন্ন পেশারূপে বেছে নিচ্ছেন।

তিনি প্রতিবেদক হিসেবেও চিহ্নিত হয়ে থাকেন। যথাযথ গবেষণালব্ধ তথ্য, লেখনী এবং প্রতিবেদন রচনা করে তিনি গণমাধ্যমে উপস্থাপন করেন। মুদ্রিত মাধ্যমরূপে সংবাদপত্র, সাময়িকী; ইলেকট্রনিক মাধ্যম হিসেবে টেলিভিশন, রেডিও, প্রামাণ্যচিত্র এবং ডিজিটাল মাধ্যমরূপে অনলাইন সাংবাদিকতায় নিজস্ব সংবাদ প্রচার কিংবা নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গীতে নিরপেক্ষভাবে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে থাকেন। একজন প্রতিবেদক তৃণমূল পর্যায় থেকে তথ্যের উৎসমূল অনুসন্ধান করেন, প্রয়োজনে সাক্ষাৎকার পর্ব গ্রহণ করেন, গবেষণায় সংশ্লিষ্ট থাকেন এবং অবশেষে প্রতিবেদন প্রণয়নে অগ্রসর হন। তথ্যের একীকরণ সাংবাদিকের কাজেরই অংশ, যা কখনো কখনো রিপোর্টিং বা প্রতিবেদন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকে।
সাংবাদিকতার প্রকারভেদ

সংবাদ সংগ্রহ থেকে শুরু করে কলাম লেখা – বিভিন্ন ধরনের কাজ করেন সাংবাদিকরা।

সাংবাদিকতার প্রকারভেদ

# ব্রডকাস্ট সাংবাদিকঃ টিভি, রেডিও, ইন্টারনেটে প্রচার সংক্রান্ত কাজ করেন।

# ফটোসাংবাদিকঃ আলোকচিত্র তোলেন।

# ফ্রিল্যান্স সাংবাদিকঃ স্বাধীনভাবে নিজের মতামত প্রকাশ করেন।

# ক্রীড়া সাংবাদিকঃ খেলাধুলা সংক্রান্ত লেখা লেখেন।

# অপরাধ সাংবাদিকঃ অপরাধবিষয়ক লেখা লেখেন।

# কলামিস্টঃ সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয় বিশ্লেষণ করে প্রবন্ধ লেখেন।

# নাগরিক সাংবাদিকঃ নাগরিক দায়িত্ববোধ থেকে নাগরিক সমস্যা নিয়ে লিখে থাকেন

# বিনোদন সাংবাদিকঃ বিনোধনধর্মী বিষয় যেমন তারকাদের জীবন, স্ক্যান্ডাল, রাশিফল – এসব নিয়ে লিখে থাকেন।

# ব্যাকপ্যাক সাংবাদিকঃ তিনি নিজেই রিপোর্টার, ভিডিওগ্রাফার, আলোকচিত্রী এবং প্রযোজক।
সাংবাদিকতা এক মহান, মহৎ, মর্যাদাশীল ও দায়িত্বপূর্ণ পেশা। সত্য প্রকাশে আপোসহীনতাই একজন আদর্শ সাংবাদিকের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। নতজানু সাংবাদিক দেশ, জাতি ও গণমাধ্যমের বড়শত্রু।
সাংবাদিকতা’ শব্দটি এসেছে সংবাদ থেকে, যার ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো নিউজ এবং আরবি প্রতিশব্দ হলো খবর, হাদিস, কিসসা বা নাবা।

এই নাবা থেকেই নবী। নবী শব্দের অর্থ সংবাদদাতা, সংবাদ বাহক, দূত ইত্যাদি। এই দৃষ্টিতে প্রত্যেক নবীই একেকজন সাংবাদিক তা বলা যায়। কোরআন ও হাদিসে ’নাবা’ শব্দটি অনেকবার এসেছে। ৩০তম পারার প্রথম সূরাটির নাম ‘আন-নাবা ’ তথা সংবাদ।

মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) এর যত বাণী রয়েছে সেগুলোকে খবর বা সংবাদ বলা হয়েছে। তিনি সাহাবিদের উপদেশ দিতে গিয়ে এভাবে উল্লেখ করেছেন, ‘আমি কী তোমাদেরকে এমন সংবাদ দিব না যার ওপর আমল করলে তোমরা জান্নাতে যেতে পারবে?’ যেহেতু প্রত্যেক নবী-রাসূল আল্লাহর দেয়া সংবাদ পৃথিবীর মানুষদের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন।

সাংবাদিকতা এক মহান, মহৎ, মর্যাদাশীল ও দায়িত্বপূর্ণ পেশা। ইসলামি সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি- ইসলামে সাংবাদিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। দাওয়াত তথা আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করা ইসলামের অন্যতম ইবাদত। আর সাংবাদিকতা কিছুতেই দাওয়াত বিমুক্ত হতে পারে না।

তাই ইসলামে সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি তিনটি-

১) ‘দাওয়াত ইলাল খাইর’ তথা কল্যাণের পথে আহ্বান।
(২) সৎ, সত্য ও ন্যায়ের আদেশ। (৩) অসৎ, অসত্য ও অন্যায় থেকে বাধা প্রদান।

ইসলামি সাংবাদিকতার নীতিমালা-

# আমানত বা বিশ্বস্ততা রক্ষা করা: ইসলামে সাংবাদিকতা একটি আমানত। আর এর দাবী হচ্ছে, যেকোনো তথ্য ও সংবাদকে বস্তুনিষ্ঠভাবে গণমাধ্যমে তুলে ধরা। নিজস্ব চিন্তা কিংবা দল-মতের রংচং মাখিয়ে সংবাদকে আংশিক বা পুরোপুরি পরিবর্তন করে উপস্থাপন করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ হারাম।

আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا
‘হে ইমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলো।’(সূরা আল আহজাব-৭০)

আমানতের খেয়ানত ইসলামে কঠোরভাবে নিষেধ আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَخُونُواْ اللّهَ وَالرَّسُولَ وَتَخُونُواْ أَمَانَاتِكُمْ وَأَنتُمْ تَعْلَمُونَ
‘হে ঈমানদারগণ! খেয়ানত করোনা আল্লাহর সঙ্গে ও রাসূলের সঙ্গে এবং খেয়ানত করো না নিজেদের পারস্পরিক আমানতে জেনে-শুনে। (সূরা আল আনফাল-২৭)

খবরের সত্যতা যাচাই: ইসলামে সততা ও সত্যবাদীতার গুরুত্ব অপরিসীম। মিথ্যা বলা মহাপাপ বা কবিরা গুনাহ। আনাস (রা.) বলেন, রাসূল (সা.)-কে কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, মা-বাবার অবাধ্য হওয়া। কাউকে হত্যা করা আর মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া। (বুখারি)

তাই সংবাদের তথ্য যাচাই ও সত্যতা নিরুপণ করা সাংবাদিকের অপরিহার্য কর্তব্য। শোনা কথা বা ব্যক্তি বিশেষের দেয়া তথ্যের ওপর নির্ভর করে সংবাদ পরিবেশন জায়েয নয়।

মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَأٍ فَتَبَيَّنُوا أَن تُصِيبُوا قَوْمًا بِجَهَالَةٍ فَتُصْبِحُوا عَلَى مَا فَعَلْتُمْ نَادِمِينَ
‘হে মুমিনগণ! যদি কোনো পাপাচারী তোমাদের কাছে কোনো বার্তা নিয়ে আসে, তোমরা তা পরীক্ষা করে দেখবে। যাতে অজ্ঞতাবশত তোমরা কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধনে প্রবৃত্ত না হও এবং পরে যাতে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য তোমাদের অনুতপ্ত হতে না হয়।’ (সূরা আল হুজুরাত-৬)
প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘যা শুনবে, তা-ই (যাচাই করা ছাড়া) প্রচার করা মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (মুসলিম শরিফ)।

তথ্য গোপন রোধ: ব্যক্তি স্বার্থ, দলীয় স্বার্থ কিংবা নিজস্ব চিন্তা-চেতনা বিরোধী হওয়ায় অনেকে প্রাপ্ত তথ্য গোপন করে থাকে। নিউজ রুমে অনেক নিউজ ‘কিল’ করা হয়। এটি ইসলাম সমর্থন করেনা। সত্য ও সাক্ষ্য গোপন করা আল কোরআনের দৃষ্টিতে অসুস্থ মনমানসিকতার পরিচায়ক।

আল্লাহ বলেন,
وَلاَ تَكْتُمُواْ الشَّهَادَةَ وَمَن يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ
‘আর তোমরা সাক্ষ্য গোপন করো না, আর যে ব্যক্তি তা গোপন করে, অবশ্যই তার অন্তর পাপী।’ (সূরা আল বাকারা-২৮৩)

প্রিয় নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তির চেহারা উজ্জ্বল করুন; যে আমার কথা শুনে অতঃপর তা হুবহু ধারণ করে অবিকল অন্যের কাছে পৌঁছে দেয়।’ (তিরমিজি শরিফ)

ব্যক্তিস্বার্থে কাউকে দোষারোপ করা যাবে না: আক্রোশ তাড়িত হয়ে কাউকে হেয় করার মানসে তার ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ করা খুবই অন্যায়।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ لِلّهِ شُهَدَاء بِالْقِسْطِ وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে নীতিবান থাকবে এবং কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের কখনো যেন সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে।’ (সূরা মায়েদা : ৮)

ব্যক্তি অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট না হলে কারো দোষ-ক্রটি জনগণের সামনে তুলে ধরার অনুমতি ইসলাম দেয় না। বরং প্রিয় নবী (সা.) মানুষের ব্যক্তিগত দোষ-ক্রটি গোপন রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন।

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (মুসলিম ও বুখারি)
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ لِلّهِ شُهَدَاء بِالْقِسْطِ وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর উদ্দেশে সাক্ষ্যদানের ব্যাপারে নীতিবান থাকবে এবং কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ তোমাদের কখনো যেন সুবিচার বর্জনে প্ররোচিত না করে।’ (সূরা মায়েদা : ৮)

ব্যক্তি অধিকার ও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট না হলে কারো দোষ-ক্রটি জনগণের সামনে তুলে ধরার অনুমতি ইসলাম দেয় না। বরং প্রিয় নবী (সা.) মানুষের ব্যক্তিগত দোষ-ক্রটি গোপন রাখতে উৎসাহ দিয়েছেন।

আবূ হুরাইরাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে দুনিয়াতে কোনো বান্দার দোষ গোপন রাখে, আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার দোষ গোপন রাখবেন।’ (মুসলিম ও বুখারি)

মনে রাখা দরকার, কোনো ব্যক্তির দোষ তার অগোচরে বর্ণনা করার নাম হলো গীবত। গীবত বা পরনিন্দা মহাপাপ। কোরআনে একে মৃত ভাইয়ের গোশত খাওয়ার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

হাদিস শরীফে গীবতকে ব্যাভিচারের চেয়েও মারাত্মক বলা হয়েছে। আর অপবাদের গুনাহ এর চাইতেও ভয়াবহ। অতএব প্রত্যেক সাংবাদিককে কারো ব্যাপারে নেতিবাচক সংবাদ প্রচার করার আগে অনেকবার চিন্তা করা উচিত।

তবে ব্যক্তির দোষ-ত্রুটি যদি এমন পর্যায়ের হয় যে, তার দ্বারা অন্য ব্যক্তি, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে তার অত্যাচার, দুর্নীতি ও প্রতারণা থেকে জনগণকে সচেতন করার লক্ষ্যে তার আসল চেহারা তুলে ধরতে অসুবিধা নেই। এ বিষয়ে ইসলাম বিশেষ ছাড় দিয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,
لاَّ يُحِبُّ اللّهُ الْجَهْرَ بِالسُّوَءِ مِنَ الْقَوْلِ إِلاَّ مَن ظُلِمَ
‘আল্লাহ মন্দ কথার প্রচার-প্রসার পছন্দ করেন না, কিন্তু যার ওপর জুলুম করা হয়েছে (তার কথা ভিন্ন)।-(সূরা নিসা-১৪৮)

তাফসিরবিদ আল্লামা মুজাহিদ (রহ.) বলেন, এ আয়াতের উদ্দেশ্য হলো, নিপীড়িত জনতার সপক্ষে গিয়ে জালিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা এবং বিষয়টি জনসম্মুখে প্রকাশ করা বৈধ।

সত্য প্রকাশে আপোস নয়: অপশক্তির কাছে মাথা নত না করে নির্ভিকচিত্তে সংবাদ পরিবেশন করাই ইসলামের দাবি।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘অত্যাচারী শাসকের সামনে ন্যায়বিচারের বাণী তুলে ধরা বড় জিহাদ।’ (তিরমিজি)

মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.) তার সাথীদের এই আদর্শেই গড়ে তুলেছিলেন। হজরত মুয়াজ (রা.) বলেন, রাসূল (সা.) আমাকে বলেছেন, ‘হে মুয়াজ, তুমি সত্যই বলবে, যদিও তা তিক্ত হয়। আল্লাহর ব্যাপারে কোনো নিন্দুকের নিন্দাকের নিন্দা যেন তোমাকে প্রভাবিত না করে।’

মহান আল্লাহ বলেন,
وَلاَ تَرْكَنُواْ إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُواْ فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ ‘যারা অত্যাচার করেছে, তোমরা তাদের প্রতি ঝুঁকে পড়ো না; অন্যথায় জাহান্নামের আগুন তোমাদের স্পর্শ করবে।’ (সূরা হুদ- ১১৩)

তাই পক্ষপাতদুষ্ট সংবাদ বর্জন এবং নিরপেক্ষ সংবাদ পরিবেশন সাংবাদিক সমাজের কর্তব্য। অনুমান নির্ভর সংবাদ নয়: কোনো বিষয়ে সংবাদ পরিবেশনের আগে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা ইসলামী শরীয়ার অন্যতম বিধান।

সুস্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া শুধু অনুমান ও জনশ্রুতি নির্ভর সংবাদ পরিবেশন করা প্রচলিত ও ইসলামী সাংবাদিকতার নীতিমালার পরিপন্থী।

এ বিষয়ে আল্লাহর নির্দেশ,
وَلاَ تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولـئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْؤُولاً
‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না; নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর- এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ৎ তলব করা হবে।’ (সূরা বনি ইসরাঈল-৩৬)

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اجْتَنِبُوا كَثِيرًا مِّنَ الظَّنِّ إِنَّ بَعْضَ الظَّنِّ إِثْمٌ
‘হে মুমিনগণ! তোমরা অনেক ধারণা থেকে বেঁচে থাক। নিশ্চয় কতক ধারণা গোনাহ।’ (সূরা আল হুজরাত-১২) গুজব ও মিডিয়া সন্ত্রাস কাম্য নয় সংবাদ কখনো গুজবের জন্য হতে পারেনা, এবং তা হতে পারেনা কাউকে বিভ্রান্ত বা প্রতারণা করার জন্য।

গুজব ও মিডিয়া সন্ত্রাসের কারণে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে , সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট হয় এবং দেশ জুড়ে দেখা দেয় বিশৃংখলা। তাই এটা সম্পূর্ণ বর্জনীয়।

আল্লাহ বলেন,
وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ
‘এবং পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করতে প্রয়াসী হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ অনর্থ সৃষ্টিকারীদেরকে পছন্দ করেন না।’ (সূরা কাসাস ৭৭)

মিডিয়া অশ্লীলতার বাহন নয় বিনোদন সাংবাদিকতার নামে চলছে বেহায়য়াপনা ও অশ্লীলতার প্রসার।

ইসলাম সাংবাদিকের সত্য বলার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। তাই সত্য প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে জাতির বিবেক সাংবাদিকদের ভূমিকা হবে আপোসহীন। উচ্চারিত হবে তাদের কন্ঠে তাদেরই অগ্রজ সাংবাদিক বিদ্রোহী কবির শ্লোগান ‘অসত্যের কাছে কভূ নত নাহি হবে শীর, ভয়ে কাঁপে কাপুরুষ লড়ে যায় বীর।’

একজন মুসলিম সাংবাদিক ইসলামী বিধি-বিধানের আলোকে সংবাদ কার্যক্রম পরিচালনা করলে তা হবে ইবাদত এবং ইহপরকালীন জীবনের মুক্তির কারণ।

এর ব্যতিক্রম হলেই একজন সংবাদ কর্মী হয়ে যাবেন দুনিয়া ও আখেরাতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে বুঝার ও মানার তাওফিক দান করুন। আলালাহুম্মা আমিন।

যুগ্ম সম্পাদক
সাংবাদিক ইউনিয়ন কক্সবাজার -জেইউসি


শেয়ার করুন