তুরস্কের ডেইলি সাবাহ পত্রিকা রোববার সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার অডিও রেকর্ডিংয়ের বর্ণনা দিয়েছে কাতারের সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে।
‘আমার দম আটকে আসছে। মাথা থেকে এই ব্যাগটা সরাও, আমি বদ্ধ জায়গা সহ্য করতে পারিনা,’ এগুলোই ছিল খাসোগির শেষ শব্দ।
সাবাহ’র প্রধান অনুসন্ধানী কর্মকর্তা নাজিফ কারামান আল জাজিরাকে জানান, প্লাস্টিকের ব্যাগে খাসোগির মাথা মুড়ে দেয়ায় তিনি দমবন্ধ হয়ে মারা যান।
রেকর্ডিং থেকে বুঝা যাচ্ছে হত্যাকাণ্ড সাত মিনিটের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল, বলেন কারামান।
শনিবার তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তৈয়ব এরদোয়ান জানান, খাসোগিকে হত্যার টেপ রেকর্ডিং যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেনকে দেয়া হয়েছে।
এরদোয়ান বলেন, খাসোগির হত্যাকারী কে তা সৌদি জানে। ১৫ জন ঘাতকের দলটি ২ অক্টোবর খাসোগিকে হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগে ইস্তাম্বুলে গিয়েছিল।
কারামানের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, খাসোগির দেহ টুকরো টুকরো করার আগে ঘাতকরা ঘরের মেঝে প্লাস্টিকের ব্যাগে ঢেকে দেয়। পুরো প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দেয় সৌদি সাইন্টিফিক কাউন্সিল অফ ফরেনসিকের প্রধান সালাহ আল-তুবেইগি।
তুরস্কের পুলিশ খাসোগির মৃতদেহ খোঁজা বন্ধ করে দিচ্ছে। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তদন্ত চলতে থাকবে, রোববার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় আলজাজিরাকে।
সৌদির কনসাল জেনারেলের বাসায় এসিডের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ধারনা করা হচ্ছে সেখানেই মৃতদেহ এসিডে গলিয়ে ফেলা হয়েছে।
সৌদি ঘাতকরা যেসব যন্ত্র নিয়ে এসে খাসোগিকে হত্যা করেন সেগুলোর ছবি শীঘ্রই প্রকাশ করবে ডেইলি সাবাহ, জানান কারামান।
তিনি আরও জানান, খাসোগির জীবনের শেষ মুহূর্তের কয়েকটি রেকর্ডিংও প্রকাশ করবে পত্রিকাটি।
গতমাসে ইস্তাম্বুলের প্রধান প্রসিকিউটর বলেছিলেন, কনস্যুলেটে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে খাসোগিকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় এবং তার দেহ ছিন্ন করে ফেলা হয়।
সৌদি আরব জানিয়েছে তারা এই ঘটনায় ১৮ জনকে গ্রেফতার ও পাঁচ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে।
এদিকে, খাসোগি হত্যায় অভিযুক্তদের বিচার ইস্তাম্বুলে করার দাবী জানিয়েছে তুরস্ক।
সৌদি শাসকগোষ্ঠীর সমালোচক খাসোগিকে গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর হত্যা করা হয়।
এরপর কয়েক সপ্তাহ ধরে সৌদি আরব এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে। তবে শেষ পর্যন্ত তারা খাসোগি হত্যার দায় স্বীকার করলেও এখনও মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি। রাজপরিবারও এই হত্যার সঙ্গে জড়িত নয় বলে দাবি করা হয়েছে।
খাসোগি সৌদি যুবরাজ তথা রাজপরিবারের সমালোচনা করায় সৌদি পত্রিকায় তার কলাম বন্ধ করে সতর্ক করে দেয়া হয়। এরপর তিনি যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসনে গিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় লেখালেখি করছিলেন।