‘মানবিকতার ঘর’ এর মানবিক কার্যক্রম কক্সবাজারে দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

কক্সবাজারের আনাচে কানাচে ‘মানবিকতার ঘর’ এর মানবিক সহায়তা কার্যক্রম দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। তারা খাদ্য সহায়তা, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে পিপিই বিতরণ কার্যক্রম, বিভিন্ন স্থানে জীবাণু নাশক স্প্রে করা, হাত ধোঁয়ার সেন্টার স্থাপন, হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, বেওয়ারিশ কুকুরকে রান্নাকরা খাদ্য প্রদান, পরিবহন সুবিধা দেওয়া সহ করোনা সংকট জনিত এই লকডাউন (Lockdown) পরিস্থিতিতে বহুবিধ মানবিক সহায়তা নীরবে দিয়ে যাচ্ছে। গত ৩ এপ্রিল থেকে এ সহায়তা কার্যক্রম শুরু হলেও ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত এ মানবিক কার্যক্রম কোনদিন কোন গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়নি।

এডভোকেট খালেকুজ্জামান স্মৃতি পরিষদের উদ্যোগে ‘মানবিকতার ঘর’ এর তত্বাবধানে এবং ফেইম ফাউন্ডেশনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় শনিবার ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৭ আইটেমের নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী দিয়ে ১৫৭০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। ২ আইটেম দিয়ে ৩০০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এসব খাদ্য সহায়তা মানবিকতার ঘর এর নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবী কর্মী দিয়ে নিজস্ব যানবাহনের মাধ্যমে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের দ্বোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে নিরবে।

কক্সবাজার শহরের সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে গুলোতে মানসম্মত পিপিই (পারসোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট), এন-৯৫ মাস্ক, গ্লাভস ও এন্টি ভাইরাস চশমা বিতরন করা হয়েছে মানবাধিকার ঘর এর উদ্যোগে। কক্সবাজার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালের পক্ষে আবাসিক চিকিৎসক ডা. সৈয়দ মারুফুর রহমান, ইউনিয়ন হাসপাতালের পক্ষে চেয়ারম্যান ও এমডি আরিফুল মওলা ও নুরুল হুদা, সেন্ট্রাল হাসপাতালের পক্ষে চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ স্বাচিপ এর পক্ষে সভাপতি ডা. মাহবুবুর রহমান এসব পারসোনাল সুরক্ষা সামগ্রী গ্রহন করেন। এছাড়া, বিভিন্ন গ্রামে পল্লী চিকিৎসকদেরও মানসম্মত ও উন্নত পিপিই সামগ্রী বিতরণ করা হয়। মাঠে উম্মুক্ত পরিবেশে কাজকরা করোনা ভাইরাস যুদ্ধের অন্যতম সৈনিক পুলিশের মাঝেও প্রচুর পরিমাণে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে। অসহায় মানুষের পাশাপাশি বেওয়ারিশ কুকুর গুলোকে খাবার হিসাবে প্রতিদিন খিচুড়ি দেওয়া হয়। যাতে, ক্ষুধার্থ কুকুর গুলো যত্রতত্র গিয়ে হামলা নাকরে।

কক্সবাজার-৩ আসনের সাবেক সংসদ এডভোকেট মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান স্মরণে গঠিত ‘এডভোকেট খালেকুজ্জামান স্মৃতি পরিষদ’ উদ্যোগে ফেইম ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনায় ‘মানবিকতার ঘর’ এই মানবিক কার্যক্রম অবিরাম চালিয়ে যাচ্ছে।

মানবিকতার ঘর এর প্রথম ধাপের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম প্রায় শেষ করে তারা এখন আসন্ন রমজানমূখী ইফতার ও সেহেরী সামগ্রী নিয়ে কাজ করার উদ্যোগ নিয়েছে। যাতে চলমান করোনা সংকটে রুজি রোজগার বিহীন অসহায় মানুষ গুলো রমজান মাসের পবিত্র রোজা রাখতে কিছুটা হলেও সহায়তা পায়।

‘মানবিকতার ঘর’ এর এ বিশাল কার্যক্রম এর বিস্ময়কর ব্যাপার হলো-তারা কোন ভিডিও করেনি, ছবি উঠায়নি, কোন আনুষ্ঠানিকতা করেনি। সব ধরণের সহায়তা সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে, করোনা ভাইরাস সংক্রামণ প্রতিরোধে সরকারের স্বাস্থ্য নির্দেশনা মেনে চলে উপকারভোগী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানে এসব মানবিক সহায়তা দেওয়া ও বিতরণ করা হয়েছে। এডভোকেট খালেকুজ্জামান স্মৃতি সংসদের পক্ষে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ওয়াহিদুজ্জামান এই মানবিক কার্যক্রম তদারকি করছেন সফলভাবে।

ফেইম ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী হারুনর রশিদ জানান, তাদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে ২৫ জন ছাত্র যুবক স্বেচ্ছাসেবক এর দায়িত্ব পালন করছেন। বিনা পারিশ্রমিকে এসব স্বেচ্ছাসেবীদের নিরন্তর সেবা, শ্রম ও চেষ্টা সত্যি প্রশংসনীয়। তিনি বলেন ‘মানবিকতার ঘর’ এর এ মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে যেকোন স্বচ্ছল, ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান স্বেচ্ছায় অংশ নিতে পারবেন। যাঁরা ‘মানবাধিকার ঘর’ এর সাথে এ মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী হবেন, তারা সরাসরি কক্সবাজার শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সম্মুখস্থ হাসপাতাল সড়কের ‘মানবিকতার ঘর’ এর প্রধান কার্যালয়ে যোগাযোগ করতে পারবেন বলে তিনি জানান।

‘মানবিকতার ঘর’ এর সার্বিক সমন্বয় এর দায়িত্ব পালন করা হারুনর রশিদ আরো বলেন, খাদ্য সংকটে পড়া অসহায় নিরন্ন মানুষ গুলো কোন ভিক্ষুক নয়, বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাস জনিত সংকটের আকস্মিকতায় তারা পরিস্থিতির শিকার। এধরণের একটা ভয়াবহ পরিস্থিতির তাদের মুখোমুখি হতে হবে, তা তারা চিন্তাও করেনি কোনদিন। তাদের সহায়তা প্রদানের সময় ছবি উঠিয়ে তাদের বিব্রত ও জনসমক্ষে ছোট করা একটা গর্হিত কাজ। একটানা গত ১৫ দিন ধরে পরিচালিত ‘মানবিকতার ঘর’ এর মানবিক কার্যক্রমে আমরা সেটা সম্পূর্ণ পরিহার করতে চেষ্টা করেছি। আমরা একটা এ ব্যাপারে দৃষ্টান্ত স্থাপনের চেষ্টা করেছি। আমাদের কোন রাজনৈতিক কিংবা অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই, শুধু দায়িত্বশীলতা ও নৈতিকতাবোধের কারণে সম্মিলিত এ মানবিক উদ্যোগ নিয়েছি। তাদের কার্যক্রমের সামগ্রিক একটা চিত্র তুলে ধরার বিষয়ে জানতে চাইলে হারুনর রশিদ আরো বলেন, সকলকে এ বিষয়ে আগ্রহী ও উৎসাহিত করে তুলছে তাদের প্রচারবিহীন কার্যক্রম সামগ্রিকভাবে তুলে ধরছন। তিনি এ কার্যক্রমে বিভিন্নভাবে যারা সহযোগিতা করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।


শেয়ার করুন