সিটিএন ডেস্কঃ
উজানের পানি প্রবাহ যেমন কমেছে, তেমনি নদী খেকোদের ভয়ঙ্কর থাবায় দেশের বহু নদী মরে গেছে। যুগের পর যুগ ধরে মরা নদী নিয়ে কোনও কাজ হয়নি। এসব নদীতে কীভাবে জোয়ার-ভাটার পানি ফেরোনো যায় তাও ছিল চিন্তার বাইরে। এসব মরা নদী নিয়ে গত সাড়ে তিন বছর ধরে কাজ করছে নদী কমিশন। আগামী জুনে মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও চলছে মরা নদী শনাক্তের কাজ।
কমিশন সূত্র বলছে, এই জঞ্জাল দীর্ঘদিনের। কোনও নদীতে চর জাগলে সেখানের নদী খেকোরা নদী দখল করেছে। এভাবে সেখানে স্থায়ী বসতি এবং ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে। খনন করে এসব নদীকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টাও কখনও করা হয়নি। এতে করে মূল নদীর অনেক শাখা প্রশাখা মরে গেছে। সরকার বা কোনও সরকারি সংস্থার কাছে এর কোনও হিসাবও নেই। তবে নদী কমিশন গঠিত হওয়ার পর থেকেই প্রধান ৪৮টি নদী নিয়ে কাজ শুরু হয়। চার বছর ব্যাপী একটি প্রকল্প আগামী বছরের জুনে শেষ হওয়ার কথা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৪৮ নদী নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা গেছে, এখানের অনেক শাখা নদীই এখন মরে গেছে। সেসব নদী উদ্ধার করা প্রায় দুরূহ। নদীর জমি কোনও ব্যক্তির নামে রেকর্ড হওয়ার বিধান নেই। কিন্তু নানাভাবে অনেক নদীর জমিই ব্যক্তির দখলে চলে গেছে। সঠিকভাবে সীমানা চিহ্নিত করে এসব জমি আবার নদী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়।
বালু, আড়িয়াল খাঁ, মধুমতি, ধলেশ্বরি নদীর সমীক্ষা শেষ করার কথা জানিয়ে এসব নদীর কোথায় কোথায় কী সমস্যা রয়েছে তা চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব নদীর যেসব শাখা রয়েছে তার অনেকগুলোতেই পানির প্রবাহ এখন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কোনও কোনও জায়গা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।
এছাড়া জামালপুর, শেরপুর, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জের ৯টি আর্ন্তজাতিক নদীর পানির প্রবাহ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমেছে। এতে করে সোমশ্বেরী, জাদুকাটা-রক্তি, জালুখালী, নয়াগাঙ, জিনজিরাম, চিতলখালী, ভোগাই-কংস, নিতাই ও উমিয়ামের এখন মরার দশা। আন্তর্জাতিকভাবে নদীর পানির সঠিক হিস্যা না মেলায় এই অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এই এলাকা দিয়ে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্রের ওপর চীন বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে। একবার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ভারত এবং বাংলাদেশে নদীর জীবন শঙ্কায় পড়বে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বহু দিনের চেষ্টার পরও ভারতের সঙ্গে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি করতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে তিস্তায় ভারত নিজের ইচ্ছামতো পানি ছাড়ে। কৃষি সেচ মৌসুমে পানির প্রবাহ না থাকায় উত্তরের জনপদের বিভিন্ন জায়গায় হাজার হাজার একর জমি অনাবাদি পড়ে থাকে। এভাবে চলতে থাকলে নদীটির জীবন বিপন্ন হবে। এতে করে আশেপাশের এলাকার পানির স্তর আরও নিচে নেমে যাচ্ছে। ফলে গোটা উত্তরাঞ্চলে মরুময়তা ছড়িয়ে পড়ছে। ভারত এক তরফাভাবে নদীটির ওপর বাঁধ নির্মাণ করায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। শুধু এসব নদীই নয়, দেশের বেশিরভাগ নদীই রয়েছে সংকটাপন্ন শঙ্কায়।
নদী কমিশনের সদস্য মো. আলাউদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। এই বিষয়ে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে মৃত নদী বা বিলুপ্ত নদী শনাক্ত করতে কাজ চলছে। প্রাথমিকভাবে ৪৮টা নদী ধরা হয়েছে। এই ৪৮টা নদীর মধ্যে একবারে মৃত নদী আছে কিছু। আবার কয়েকটিতে পানি এখনও চলমান, কিন্তু কম এমন নদীও আছে। এই প্রকল্পটি তিন বছরের। আগামী জুন মাসে শেষ হবে। শেষ হলে আমরা আরও প্রকল্পের চিন্তা করছি। সেগুলোর বিষয়ে কাজ করবো।’