হুমায়ুন সিকদারঃ
গত কয়েকদিন ধরে লঘুচাপ ও অমাবস্যার জোয়ারে ভাসছে কুতুবদিয়াসহ জেলার উপকুলীয় এলাকা। নতুন করে ৮-১০ টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে একাকার হয়ে গেছে বলে দ্বীপের লোকজন জানান।
এলসকাবাসী জানান, বেড়িবাঁধ না থাকায় অমাবস্যার জোয়ারের গত কয়েকদিন ধরে কক্সবাজারের দ্বীপ-উপজেলা কুতুবদিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। যথাসময়ে টেন্ডারের কাজ না করায় এমন দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে বলে ভূক্তভোগিরা অভিযোগ করেন। প্লাবিত হয়েছে উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের পূর্ব-পশ্চিম চরধূরুং, কায়সার পাড়া, নয়াপাড়া, আকবরবলী পাড়াও মেয়ারাকাটা। দক্ষিণ ধূরুং ইউনিয়নের পুরাতন বাতিঘর পাড়া। কৈয়ারবিল ইউনিয়নের বিন্দাপাড়া, ঘিলাছড়ি ও মলমচর গ্রাম। লেমশীখালী ইউনিয়নের পেয়ারকাটা ও দরবারঘাটের দক্ষিণ এলাকা। বড়ঘোপ ইউনিয়নের উত্তর বড়ঘোপ ও দক্ষিণ অমজাখালী। আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের তাবালেরচর, আনিসের ডেইল, বায়ুবিদ্যুৎ ও কিরণ পাড়া। কুতুবদিয়ার ৪০ বর্গ কি.মি. বেড়িবাঁধের দু’তৃতীয়াংশ এলাকার বাঁধের খুবই ভয়াবহ অবস্থা বিরাজ করছে। ৯১’র ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে বিস্তীর্ণ এলাকায় বাঁধের যথাযথ সংস্কার হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে যতসামান্য কাজ হলেও তা’ নামমাত্র। বীতমান সরকার বিগত ২০১৬-১৭ অর্থ সনে বরাদ্দকৃত প্রায় ১০০ কোটির টাকার কাজ যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার শুরু না করায় এমন দুর্বিসহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতোনা বলে সচেতন মহলের মতামত । বেড়িবাঁধের নাজুক অবস্থার কথা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা( ভার;) মুহাম্মদ হেলাল চৌধূরী।
লঘুচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে তীব্র জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট বেড়ে উপকূলে আঘাত হানছে।
ককসবাজার উপকুলীয় এলাকা কুতুবদিয়া, ধলঘাটা, উজানটিয়া, মগনামা,রাজাখালী, শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমার্টিন, জালিয়াপালং ও শহরের কুতুবদিয়া পাড়ার অনেক এলাকা জোয়ারের পানিতে একাকার হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। রাস্তা ঘাট, বাড়ি ঘরে জোয়ারে প্লাবিত হয়েছে। শহরের কুতুবদিয়া পাড়ার নাজিরারটেক, মোস্তাকপাড়া, বাসিন্ন্য পাড়া, পশ্চিম কুতুবদিয়া পাড়া, কুতুববাজার, ফদনারডেইল এলাকার রাস্তা ঘাট ও ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে একাকার হয়ে যায়।
চলতি মাসের পুর্ণিমার জোয়ারের আঘাতের ১০ দিন পরই অমাবস্যার জোয়ারে সয়লাব উপকুলীয় এলাকাসমুহ।
সেন্টমার্টিন দ্বীপের পশ্চিম ও দক্ষিণপাড়া এবং শাহপরীর দ্বীপের বিস্তীর্ণ এলাকা গত দুদিন ধরে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত।
বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় দ্বীপের ৪০ হাজার মানুষের
দুূর্ভোগের শেষ নেই।
প্রবল জোয়ারের পানিতে ডুবে রয়েছে মহেশখালীর মাতারবাড়ী, ধলঘাটা, কুতুবদিয়া, পেকুয়া ও চকরিয়ার উপকূলীয় এলাকা।
ধলঘাটাও ‘মাতারবাড়ীর বেড়িবাঁধের ভাঙন এলাকা দিয়ে অর্ধেকের চেয়েও বেশি এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বহুসংখ্যক ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে।’
এলাকার লোকজন জানিয়েছেন, ভাদ্র মাসের অমাবস্যার জোয়ারের পানি গত কদিন ধরে বাড়ছে। এটি চলতি বর্ষার সবচেয়ে ‘বড় জো’ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে জোয়ারের পানির তোড়ে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের ঝাউবাগানের বিপুলসংখ্যক গাছ সাগরে ভেসে গেছে। সাগরের গ্রাস থেকে কোনো প্রচেষ্টায় রক্ষা করা যাচ্ছে না এসব ঝাউগাছ। গত কয়েকবছরে হাজার হাজার ঝাউগাছ জোয়ারে উপড়ে পড়েছে। জোয়ারের পানিতে কক্সবাজার সৈকতের কবিতা চত্বর থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ঝাউগাছ সাগরে ভেসে যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, সৈকতের ডায়াবেটিক হাসপাতাল পয়েন্ট, কবিতা চত্বর, মোটেল শৈবাল পয়েন্ট ও সমিতিপাড়ায় জোয়ারের তোড়ে ভেসে গেছে অর্ধশতাধিক ঝাউগাছ। গাছের শিকড়ও বালুচর থেকে আস্তে আস্তে উপড়ে পড়ছে সাগরে। সৈকতের কলাতলী থেকে উত্তরে নাজিরারটেক পর্যন্ত চার কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঝাউগাছগুলো জোয়ারের পানির তোড়ে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকা কবিতা চত্বর থেকে নাজিরারটেক পর্যন্ত ফুঁসে উঠা জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে অধিকাংশ ঝাউগাছ।
বন বিভাগ কর্তৃক প্রায় ২৫ বছর আগে সৃজিত ঝাউগাছগুলো বর্তমানে বেশ বড় হয়েছে। ঝাউবাগানটির কারণে সৌন্দর্য বাড়ার পাশাপাশি সৈকতের ভাঙনও রোধ হয়েছে। কিন্তু বিগত পূর্ণিমা ও অমাবস্যর জোয়ার ও সাগরের ঢেউয়ের তোড়ে উপড়ে পড়ছে ঝাউগাছ।
এভাবে ঝাউবাগান বিলীন হয়ে পড়লে কক্সবাজার শহরও ঝুঁকির মুখে পড়বে।’
দক্ষিণ বন বিভাগ সুত্র জানায়, ‘১৯৭৪ সালে কক্সবাজার সৈকতে ১০০ হেক্টর বালুচরে ঝাউবাগান সৃজন করা হয়। গতবছরে আরো ৫০ হাজার ঝাউ বাগান সৃজন করছে বন বিভাগ। —–