জেলা জুড়ে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব

হুমায়ুন সিকদারঃ

করোনা ভাইরাসের প্রকোপকালে জেলার বিভিন্ন অলিতে গলিতে কুকরের উপদ্রুবে আতংকিত এলাকাবাসী।
ভাদ্র মাসে কুকুরের প্রজননের মৌসুমে সড়ক উপ- সড়কে কুকুরের মিছিল উদ্বেগজনক!
নিরাপদ চলাফেরা দায় পথচারীদের ! কুকুর নিধনে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগীরা।

জেলার আট উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও ককসবাজার শহরের
সমুদ্র সৈকত, শহরের বাহারছড়া, নতুন বাহারছড়া, হাসপাতাল সড়ক, কলাতলী, সমিতি পাড়া ও কুতুবদিয়া পাড়া, এন্ডারসন রোড়, গোলদিঘি পাড়, ঘোনারপাড়া, টেক পাড়া, রুমালিয়ারছড়া, বিজিবি ক্যাম্প, আলিরজাহালসহ বিভিন্ন অলিতে-গলিতে কুকুরের দৌড়াদৌড়ি।
বেওয়ারিশ কুকুরগুলো রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে দেদারসে।
এ অবস্থায় অলি-গলিতে ঘুরে বেড়ানো কুকুরদের নিধনে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ব্যবস্হা নেয়া হয়নি বলে জানা গেছে।

বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাত থামেনি। বছরের এই সময়টাতে জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচি হাতে নেওয়া প্রয়োজন বলে সচেতনমহল মনে করেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সহযোগিতায় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর , স্থানীয় সরকারের ( পৌরসভা) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কুকুর নিধন ও জলাতঙ্ক টিকা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। ।

স্থানীয় দৈনিকে কর্মরত সংবাদকর্মী তারেক সম্প্রতি সন্ধ্যায় অফিসে যাওয়ার সময় কুকুরের হামলার শিকার হন বলে জানা গেছে। কুকুর আতংক থেকে কেউ নিরাপদ নন বলে জানান শহরবাসী।

বিভিন্ন পেশার লোকজনের কর্মস্হলে যাতায়াত, হাটবাজার ও রাস্তা ঘাটে পথচারীদের আসা যাওয়া কুকুরের উৎপাতে নিরাপত্তাহীন বলে ভুক্তভোগীরা জানায়।
এছাড়া সমুদ্র সৈকতে পর্যটকরাও কুকুরের উৎপাতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে একাধিক আগত পর্যটক জানায়।

একইভাবে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডের বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগী ওই আতংকের কথা জানান।

চিকিৎসকরা বলছেন, কুকুরের কামড়ে সংক্রমণ, টিটেনাস রোগের আশঙ্কা থাকে। শিশুদের নাক-মুখে কুকুর কামড়ালে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই তারা মারা যায়। র‌্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর বা চিকার মাধ্যমে জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায়। আমাদের দেশে মূলত কুকুরের কামড়ে বা আঁচড়ে (রক্ত বের না হলেও) জলাতঙ্ক রোগ বেশি হয়।

তাদের মতে, শরীরের কোন অংশে কামড় বা আঁচড় দিয়েছে, তার মাত্রার ওপর নির্ভর করে কতদিনে জলাতঙ্ক দেখা দেবে। সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে তিন মাসের মধ্যে লক্ষণ দেখা দেয়। শরীরের নিচের অংশে কামড় বা আঁচড় দিলে এবং এর মাত্রা কম হলে সাত বছর সময়ের মধ্যে যেকোনো সময় জলাতঙ্কে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এ রোগে আক্রান্ত হয়ে গেলে মানুষ সাধারণত বাঁচে না।

‘আক্রান্ত ব্যক্তি অস্বাভাবিক আচরণ করে। ক্ষত স্থানে ব্যথা হয়, জ্বালাপোড়া করে। শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। ঢোক গিলতে গলায় ব্যথা লাগে। জ্বরও হতে পারে। খিঁচুনিও হতে পারে। মুখ দিয়ে লালা ঝরে। মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। ইচ্ছা থাকলেও পানি খেতে পারে না। বাতাস সহ্য করতে পারে না। মৃত্যুর আগে আলো দেখলে ভয় পায়। আবার পা থেকে শুরু করে পুরো শরীর অবশ হয়ে যেতে পারে’।
কুকুরকে হত্যা না করে চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ এবং রোগমুক্ত করা যেতে পারে এবং অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হলেই এসব কুকুরকে ছেড়ে দেয়াও যেতে পারে বলে একদল চিকিৎসকের অভিমত।

ফিজিওলজি ও প্রাণিকল্যাণ বিভাগের শল্যচিকিৎসকরা ‘নিউটার (বন্ধ্যাকরণ)’, ‘ভ্যাকসিন (জলাতঙ্ক টিকা)’ প্রদানের কাজও করেছেন। মাঝে মধ্যে বেশ কিছু কুকুরের বন্ধ্যাকরণও করেন বলে জানা যায়। এ পদ্ধতি ককসবাজারে ও করলে শহরবাসী কুকুর থেকে নিরাপদ থাকতে পারবে বলে সচেতন মহল মতামত দেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসের মতে,
আক্রান্ত কুকুর চেনার উপায় ;

র‌্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর যেখানে যা পায়, কামড়ানোর চেষ্টা করে। উদ্দেশ্যহীনভাবে ছুটে বেড়ায়। মুখ থেকে লালা পড়তে থাকে। সারাক্ষণ ঘেউ ঘেউ করে। একপর্যায়ে শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। খাবার দিলেও খেতে পারে না।

জলাতঙ্ক নির্মূল কর্মসূচির আওতায় কুকুরকে জলাতঙ্ক টিকা প্রদান করলে ওই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে জনস্বাস্থ্য নিয়ে কিছুটা হলেও রেহাই পাওয়া যাবে।

চিকিৎসকরা আরো জানান,, কুকুরের কামড় বা আঁচড়ের পর ক্ষতস্থান ক্ষারযুক্ত সাবান ও পরিষ্কার পানি দিয়ে অন্তত ১৫ মিনিট ধরে ধুয়ে নিতে হবে এবং র‌্যাবিস ভাইরাসের টিকা নিতে হবে। সদর হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাওয়া যায়। কুকুরের কামড়ে জখমের ধরণ অনুযায়ী এন্টি র‌্যাভিস ভ্যাকসিন (এআরভি) ও ইআরআইজি নামের দুটি ভ্যাকসিন শরীরে দিতে হয়।
বেওয়ারিশ কুকুর থেকে সাবধান থাকার পরামর্শও দেন তারা।


শেয়ার করুন