হাইকমিশনে খোলা হয়েছে স্পেশাল সেল

জানুয়ারী থেকে নতুন পদ্ধতিতে শ্রমিক যাবে মালয়েশিয়ায়

মালয়েশিয়া সরকার নতুন বছরের শুরু অর্থাৎ জানুয়ারী মাস থেকে ‘নতুন অনলাইন পদ্ধতিতে’ বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়া শুরু করতে পারে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে দুই দেশের মধ্যে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সম্পন্ন হয়েছে।

উচ্চ পর্যায়ের এসব বৈঠকে দুই দেশের কর্মকর্তারা এবার অল্প অভিবাসন ব্যয়ে কর্মী নিয়োগের উপর সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দিয়েছেন। এছাড়া সকল রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে কর্মী পাঠানো নিশ্চিত করা, এজেন্সীগুলোর মান সম্পন্ন ট্রেনিং সেন্টার থাকা ছাড়াও শ্রমিক সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়গুলো নিয়ে ইতিমধ্যে উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনা প্রায় চুড়ান্ত করা হয়েছে। এখন শুধু স্থগিত থাকা শ্রমবাজার নতুন করে চালুর আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেয়া বাকী রয়েছে মাত্র।

এদিকে ঢাকার ১০ রিক্রুটিং এজেন্সীর নামে এখনো মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে প্রায় ৩০ হাজারেরও বেশী গ্রামের অসহায় কর্মী।

এরআগে দেশটির সরকার এসব কর্মীদের ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রেরনের জন্য সময়সীমা বেধে দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে শ্রমিক পাঠাতে না পারলে চাহিদাপত্র বাতিল বলে গন্য হবে। এতে মালয়েশিয়ার এজেন্ট, অপেক্ষমান শ্রমিক, ঢাকার রিক্রুটিং এজেন্সী, মধ্যস্বত্বভোগীসহ অনেকেই বিপদে পড়তে পারে বলে আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা। যদিও অপেক্ষমান কর্মীরা যাতে দ্রুত দেশটিতে যেতে পারে, সেই লক্ষ্য মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনে জরুরী ভিত্তিতে ‘স্পেশাল সেল’ খোলা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে প্যাসেজ এসোসিয়েটস এর স্বত্তাধিকারী আরিফ আলম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, আমার প্রতিষ্ঠানের নামে এখনো ৩ হাজারেরও বেশী কর্মী মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অপেক্ষায় আছে। এসব কর্মীর নামে কলিং, মেডিকেলসহ সবকিছুই সম্পন্ন হয়েছে। তারপরও যেতে পারছে না। তিনি বলেন, শ্রমিকরা যাতে যেতে পারে সেই লক্ষ্য মালয়েশিয়া সরকার সময় বাড়িয়ে ৩০ নভেম্বর নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যেও ঢাকার মালয়েশিয়ান হাইকমিশন থেকে ঠিকমতো আমাদের স্ট্যাম্পিং দিচ্ছে না। গত ১৫-১৬ নভেম্বর থেকে এ্যাম্বাসি স্ট্যাম্পিং বন্ধ রেখেছে।

পাসপোর্টও জমা নিচ্ছে না। এখন কি কারণে তারা জমা নেয়া বন্ধ করেছে সেব্যাপারে আমরাতো আর সরাসরি জিজ্ঞেস করতে পারি না। তবে নতুন করে যদি মালয়েশিয়া সরকারের কাছ থেকে সময় বাড়িয়ে না নেয়া যায় তাহলে এসব কর্মীর যাওয়া অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করেন। তার মতে, এখনো ১০ রিক্রুটিং এজেন্সীর নামে ৩০ হাজার প্লাস কর্মী যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে শুক্রবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থাণ মন্ত্রনালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব রৌনক জাহান এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

তবে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের একজন কর্মকর্তা শুক্রবার নয়া দিগন্তকে নাম না প্রকাশের শর্তে শুধু বলেন, ঢাকায় অপেক্ষমান কর্মীদের নেয়ার জন্য মালয়েশিয়া সরকার খুবই আন্তরিক। যার কারণে তারা ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নতুন করে আবার সময় বাড়িয়েছে। এরপরেও কি কারণে ঢাকা থেকে শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে না ? ওই কর্মকর্তার মতে, আমি যতটুকু জানি, হতে পারে এই অল্প সময়ের মধ্যে এতগুলো শ্রমিক আসা অসম্ভব। মানবিক কারণে তারা গরীব কর্মীদের কথা চিন্তা করে আরো এক অথবা দেড় মাস সময় বাড়ানোর ঘোষনা দিতে পারে।

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুধুমাত্র শ্রমিকদের এ্যাটাসটেশন কাজ দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষ্য হাইকমিশনে আলাদা একটা সেল খোলা হয়েছে। সেখানে শুধু এই শ্রমিকদের সমস্যা জানা ও সমাধান করার কাজগুলো কর্মকর্তারা করছেন। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মালয়েশিয়ার মার্কেটতো খোলাই আছে। এসপিপিএ সিস্টেম এর পরিবর্তে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ এর সরকার নতুন অনলাইন সিস্টেমে এবার মার্কেট খোলার ঘোষনা দেবে। আশা করছি জানুয়ারী মাস থেকে নতুন প্রসেসিংএ লোক আসতে শুরু করবে।

সেই লক্ষ্য সবকিছুই চুড়ান্ত হয়েছে দুই পক্ষের মধ্যে। এবার একজন কর্মী আসতে অভিবাসন খরচ অনেক কম লাগবে বলে তিনি মতামত ব্যক্ত করেন। তবে অভিবাসন ব্যয় মূলত নিয়ন্ত্রন করার কথা ঢাকা থেকে। কারণ এখানে অভিবাসন ব্যয় নিয়ন্ত্রনের কিছু নেই। নিয়ন্ত্রন করতে হবে ঢাকাসহ দেশের মিডিয়াম্যানদের। তাহলে সব ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে ১০ রিক্রুটিং এজেন্সীর মাধ্যমে মালয়েশিয়া যেসব কর্মী পাঠানো হয়েছে, তার মধ্যে প্রতি কর্মীর জন্য প্রসেসিং খরচ বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা করে আদায় করা হতো। এরমধ্যে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক সরকারের লোকজনের নামে প্রতি শ্রমিকের বিপরীতে ৫ হাজার মালয় রিংগিট (১ লাখ টাকা) নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। আর এই টাকা যেতো আমিন নুর এর কোম্পানীর নামে। বর্তমানে এই টাকা লাগছে না। তারপরও এজেন্সীগুলো এখনো কর্মী পাঠাতে প্রসেসিং খরচ এক লাখ ৮০ হাজার টাকা করে আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ প্রসঙ্গে বৃহস্পতিবার আল ইসলাম ওভারসীসের স্বত্তাধিকারী জয়নাল আবেদিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি টেলিফোন ধরেননি। একইভাবে আরেক এজেন্সী প্রান্তিক ট্রাভেল এন্ড ট্যুরস এর স্বত্তাধিকারী গোলাম মোস্তফার সাথে যোগাযোগ করে তার বক্তব্য নিতে একাধিকবার ফোন দিলে তিনিও টেলিফোন ধরেননি।


শেয়ার করুন