ডেস্ক রিপোর্টঃ
বাঁধ তৈরি করে দু’টি খাল ভেঙে বালু উত্তোলন করছে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় একটি সিন্ডিকেট। কক্সবাজারের বৃহত্তর উপজেলা চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউনিয়নের পার্শ্ববর্তী আবাদি জমি থেকে বালু উত্তোলন করে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যকে ছিন্নভিন্ন করছে ওই সিন্ডিকেট।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে স্থানীয় প্রভাবশালী মহলকে ইজারা দেয়া খাল দুটি হলো পরিবেশগতভাবে স্পর্শকাতর ও পর্যটন শহর চকরিয়া উপজেলার পাগলির চর খাল ও ডুলাহাজার খাল।
এরপর থেকে ওই সিন্ডিকেট অন্তত ৫০টি ড্রেজার ব্যবহার করে খাল ও খামারের জমি থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন করে নির্মাণ কাজের জন্য উত্তোলিত বালু ও মাটি বিক্রি করে আসছে।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিদিন প্রায় ৫০ ট্রাক বালু ও মাটি বিভিন্ন নির্মাণস্থলে নিয়ে যায়। প্রতিটি ট্রাক ২৫০ বর্গফুট বালি বা মাটি বহন করতে পারে, যা বিক্রি করে ৮ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত পেতে পারে।
এই প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করা হচ্ছে গাছ, গুল্ম, সূর্য ঘাস, ভেষজ এবং বিভিন্ন বন্যপ্রাণী এই অঞ্চলে তাদের আবাসস্থল হারাচ্ছে।
ফাসিয়াখালী বন অত্যন্ত বিপন্ন এশিয়ান হাতির আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত।
পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি টিম অনুমান করেছে যে, পূর্ববর্তী ইজারাধারীদের দ্বারা বালি ও মাটি উত্তোলনের ফলে গত বছর দুটি খালের ৪ হাজার বর্গফুট এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বছর জেলা প্রশাসন আবার ইজারা দেয়ার আগে পরিবেশ অধিদপ্তর বেআইনি কাজের সাথে জড়িত আটজনকে জরিমানা করেছিল।
মাটি উত্তোলনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী যাদের আবাদি জমি খাদে পড়ে গেছে তারা প্রতিকার চেয়ে গত ১ ফেব্রুয়ারি জেলা প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন।
ডুলাহাজারা ইউনিয়নে মাটি উত্তোলনের পরোক্ষ শিকার মাইনুল এহসান চৌধুরী বলেন, তাদের পৈত্রিক আবাদি জমি এখন ধসে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, কারণ মাটি কেটে ফেলার কারণে পাশের জমি পুকুরে পরিণত হয়েছে।
‘শুধু তাই নয়, বনভূমিও সিন্ডিকেটের শিকার হয়েছে। প্রায় ২০ একর বনভূমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে’, বলেন তিনি।
কক্সবাজারভিত্তিক পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, স্থানীয়দের বনভূমি ও কৃষিজমি ৩০ ফুট গভীরে খনন করা হয়েছে, যার ফলে আনুমানিক ৩০০ একর আবাদি জমি ও বনভূমি বড় পুকুরে পরিণত হয়েছে।
‘আশেপাশের বন, যা বিভিন্ন প্রজাতির বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল, তাও রেহাই পায়নি। কিন্তু কর্তৃপক্ষ সেদিকে খুব একটা নজর দিচ্ছে না’, বলেন তিনি।
স্থানীয়রা জানান, বর্তমান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর, একই ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও ডুলাহাজারা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সাইদুল ইসলাম বাবলু ও স্থানীয় জাতীয় পার্টির সদস্য নুরুল আমিন ভুট্টো এই সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
হাসানুল ইসলাম আদর পরিবেশ ধ্বংসের সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। এমনকি জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন বলেও দাবি করেন।
নুরুল আমিন এবং সাইদুল ইসলাম বাবলু ফোন রিসিভ করেননি। তাদের মন্তব্যের অনুরোধ জানিয়ে পাঠানো টেক্সট মেসেজের জবাবও দেননি।
চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাওসার উদ্দিন কাসির বালু উত্তোলন এবং আবাদি জমি ও বনের ক্ষতি করার বিষয়টি অস্বীকার করেন।
তিনি বলেন, ‘যারা অতীতে ইজারা পেয়েছে তারা ক্ষতি করেছে। আমরা তা করিনি’। এই দাবি করেই তিনি ফোন কেটে দেন।
কক্সবাজার উত্তর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন সরকার বলেন, তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘একটি প্রভাবশালী স্থানীয় চক্র ক্ষতি ঘটাচ্ছে’। তবে তিনি কোনো নাম প্রকাশ করেননি।
চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেপি দেওয়ান জানান, সম্প্রতি তিনি ওই পদে যোগদান করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত কিছু জানি না। তবে আমি অবশ্যই এটি দেখব’।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলার পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম বলেন, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং উপরের মাটি উত্তোলন ও বনভূমির ক্ষতি করার জন্য অপরাধীদের জরিমানা করেছেন।
চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওসমান গণি জানান, বনভূমি ধ্বংসের বিষয়ে তাদের কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি।
তিনি বলেন, ‘আমি আপনার কাছ থেকে এটি সম্পর্কে জানতে পেরেছি, আমি এটি দেখব’।