আ.ন. ম মাঈন উদ্দিনঃ
ক্যাপশনের ছবিগুলো দেখেই আজ আমার এই লেখার অনুপ্রেরণা। সে ছোট বেলার কথা এখনো মনে আছে আমার। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমের পূ্র্বেই চারদিকে বড় আকারের বেড়িবাঁধ সংস্কারের হিড়িক পড়ে যেত। যার কারণে পাঠশালায় যেতে আমাদের কতইনা কষ্ট হতো। না বুঝে বলে ফেলতাম প্রতি বছর হাড়ি (বেড়িবাঁধ) বাঁধা পরে নেকি? চরে সৃষ্টি হত বড় কুপ আর কুপ।যেখানে উত্তপ্ত রোদেলা দূপরে সাঁতার, চরে খেলাধুলা শেষে কাদামাথা শরীরটা একটু ভিজিয়ে নিতাম।জোয়ার চলে গেলে সেই কুপগুলো থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরার তাড়া। যেখানে আমাদের ছিল অবাদ বিচরণ। আজ সেই সব দেখা হয়না আর ৯১ সালের ভয়াল ঘুর্ণিঝড়ের পর হতে।
প্রথমেই আসি কুতুবদিয়াকে নিয়ে। উপকূল, অর্থাৎ সমুদ্রতীরের অনতিদূরের দ্বীপ। বঙ্গোপসাগরের ফানেল আকৃতির অগভীর প্রণালীতে প্রচুর দ্বীপ গঠিত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান তিনটি নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার মিলিত প্রবাহ মেঘনা মোহনার মাধ্যমে বিপুল পরিমাণে পলি উপকূল অঞ্চলে জমা করে, যার ফলে এ সকল দ্বীপের সৃষ্টি। এ দ্বীপগুলির বিন্যাসরীতি লক্ষ্য করলে দেখা যায়, অধিকাংশই গঠিত হয়েছে উপকূলের মধ্য অংশে। বাংলাদেশের উপকূলবর্তী দ্বীপসমূহ অত্যন্ত সক্রিয় জোয়ারভাটা প্রভাবিত জালিকা সদৃশ নিষ্কাশন প্রণালী সুন্দরবন সহ আশপাশের অঞ্চলকে বহু ছোট ছোট দ্বীপে বিভক্ত করেছে।পূর্বাঞ্চলের উপকূলে সামান্য কয়েকটি দ্বীপ রয়েছে যার মধ্যে কুতুবদিয়া দ্বীপ উল্লেখযোগ্য। দেশের প্রধান ভূ-ভাগ গুলিতে স্থল এবং নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপুল উন্নতি সাধিত হলেও বিচ্ছিন্ন এ দ্বীপে উন্নয়নের ছোঁয়া বলতে গেলে লাগেইনি। অথচ প্রাকৃতিক দূর্যোগের ঝুঁকি এ এলাকায় প্রবল। চর এলাকার এ সমস্ত মানুষের দরিদ্রতা দূরীকরণ এবং উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বসহকারে অনুধাবন করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি।
প্রাকৃতিক সম্পদ আর সৌন্দর্যের অপার সম্ভাবনা ছড়িয়ে আছে কুতবদিয়া দ্বীপে। বাংলাদেশের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের মোহনায় দাঁড়িয়ে থাকা এ দ্বীপটি যেমন লবণ শিল্পে ভরপুর, তেমনি রয়েছে খনিজসম্পদ। কুতবদিয়া দ্বীপে কী পরিমাণ খনিজসম্পদ রয়েছে তার সঠিক হিসাব বা অনুসন্ধান আজও করে উঠতে পারেনি সরকার বা সরকারি সংস্থাগুলো।প্রাকৃতিক সম্পদ আর সৌন্দর্যের অপার সম্ভাবনা ছড়িয়ে আছে কুতুবদিয়া দ্বীপে। বাংলাদেশের তবে বিজ্ঞানী ও বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বহু মূল্যবান খনিজ সম্পদ রয়েছে এই দ্বীপে। যা দিয়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব লীলাভূমি বাংলাদেশ। নদীমাতৃক বাংলাদেশের অসংখ্য দ্বীপের ভিড়ে তাই কুতুবদিয়া দ্বীপটি আপন রূপ ঐশ্বর্যে অনন্য একটি স্থান দখল করে আছে। কুতুবদিয়ার সাগরের ঐতিহ্যবাহী বাতিঘর এর সাথে দেশ বিদেশী জাহাজের আর জলতরঙ্গের সবুজের সমারোহ অপরূপ মিতালী তৈরি করে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক পরিবেশকে করেছে আরো বেশি মোহনীয়, আকর্ষণীয়, সতেজ ও সজীব।
সেই ৯১ সালের ভয়াল ঘূর্ণিঝড়ে বিলীন হওয়া বেড়িবাঁধ নিয়ে মানুষের চাওয়া পাওয়ার শেষ কোথায়? ঠিক তথন থেকেই আর দেখা মেলেনি বললেই চলে,সেই বড় আকারের বেড়িবাঁধ নির্মানের। তখন তো আমাদের দেশের প্রেক্ষাপট আর বর্তমান প্রেক্ষাপট ছিল ভিন্ন । ছিলনা কোন তথ্য প্রযুক্তির ছোয়া। আজ আমাদের দেশপ্রযুক্তি নির্ভর ও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী। তারপরেও কেন পূর্বের ন্যায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে এত অনিহা? প্রশ্নই থেকেই যায়। অনেক আগেই শুনেছি কুতুবদিয়ায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের জন্য বরাদ্ধ হয়েছে । প্রতি বছর ভাঙনে কিযে দুর্ভোগে পড়তে হয়, বসবাসরত জনগোষ্টি ছাড়া কেউ বুঝবেনা। যার ভাঙে সেই বুঝে। প্রতি বছরের ভাঙনে সোশাল মিডিয়ায়,পত্র পত্রিকায় কত লেখালেখি হয়। শুধূ আমরা পড়ে যায়,কিন্তু গড়ার কেউ নাই। ছবিতে যে ছেলেটি কে দেখা যাচ্ছে আসলেই এটাই বাস্তব।এটাই কুতুবদিয়ার বর্তমান অবস্থা। কত পত্রিকার নিউজ দেখি আমরা, পানি উন্নয়ন বোর্ড,কন্ট্রাকটর আরো কত কি?আমরা সাধারণ জনগণ বুঝি যে, সরকার বরাদ্দ দিয়েছে আর যারা কাজ পেয়েছে তারা জবাবদিহিতা মূলক কাজ শেষ করে যাবে। প্রিয় পাঠকবৃন্দ – ঘরে বউ নাই, নাকের নোলক কার জন্য? কক্সবাজার জেলার সর্বোচ্চ শিক্ষিত কুতুবদিয়ার জনগোষ্টির আজ একটাই প্রাণের দাবি টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মানের।
আর বিদ্যুতায়ন- কুতুবদিয়ার জনগোষ্টির প্রাণের দাবী ছিল পূর্বে থেকেই। পরে কুতুবদিয়া বাসীর অন্তরে বায়ু বিদ্যুৎ নিয়ে কিছুটা আশার সঞ্চার হলেও কতঠুকু লাভবান হয়েছে? প্রশ্নই থেকে যায়। কুতুবদিয়ায় আমি ২০ মিনিটের জন্য বায়ু বিদ্যুতের মাধ্যমে ফ্যানের বাতাস পেয়েছিলাম সেই ২০১১ কি ২০১২ সালে। আর দেখার সুযোগ হয়নি। জানিনা বসবাসরত মানুষগুলো বায়ুবিদ্যুৎ যেখানে অবস্থান সেখানে গিয়ে প্রাকৃতিক বাতাস ছাড়া বিদ্যুত চালিত বাতাসের দেখা পেয়েছে কিনা? এখন সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুৎ যাবে শুনে আমরা কুতুবদিয়ার আপামর জনগোষ্টি খুশি। সে সুবাধে যেখানে গড়ে উঠবে কলকারখানা,লবণ উৎপাদনে প্রযুক্তির ব্যবহার,আরো কত কিছু । কুতুবদিয়ার মানুষ এখন স্বপ্ন দেখে, হরেক রকমের স্বপ্ন। যার জন্য উন্নয়নের রুপকার মমতাময়ী প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞ। কিন্তু পূর্বে থেকেই সরকারের বরাদ্দকৃত টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ কি দেখে যেতে পারবে কুতুবদিয়ার আপামর জনগোষ্টি? নাকি প্রতিবছরে বর্ষা মৌসুমে ও পূর্ণিমার জোয়ারের ভাঙনে আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে বিতাড়িত হতে হবে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভুমি থেকে।
এখন কুতুবদিয়ায়,মহাসাধক আব্দুল মালেক শাহ এর মাজার, পর্যটকদের জন্য পরিচ্ছন্ন ঝাউগাছ বেষ্টিত সমুদ্র সৈকত, সমুদ্র বিলাস নামক সুন্দর ও বিলাসবহুল হোটেল, আধূনিক মানের বেলাভূমি রেষ্টুরেন্ট আর বায়ু বিদ্যুৎস্পট কুতুবদিয়ার প্রকৃতিক সৌন্দর্য আর সাগরের হাতছানি যে কাউকেই মোহাবিষ্ট করে দেয়।
যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারলে কুতুবদিয়া হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান একটি পর্যটন কেন্দ্র। নানা ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা দূর করে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধকরণে কুতুবদিয়া দ্বীপের বিকল্প নেই।