নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
কলাতলীর আলোচিত ৫১ একরের সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে উচ্চ আদালতের দেওয়া নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য চার মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এবং কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ ১২ জনকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। সোমবার বেলা ও সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ কবীর এ চিঠি ইস্যু করেছেন।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজার আরএস ৮০০১ নং দাগের মোট ১২৪.৩৫ একর রক্ষিত বন ও ঘোষিত পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হতে ৫১ একর বনভূমিতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য স্থানীয় জেলা প্রশাসন কর্তৃক আবাসিক প্রকল্প গড়ে তোলার জন্য বরাদ্দ প্রদান করে। উক্ত বরাদ্দ বাতিল, পাহাড় ও বনজ সম্পদ ধ্বংসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) পাহাড় কর্তনরোধে হাইকোর্ট বিভাগের রীট মোকদ্দমা (নং১১২১০/০৬) দায়ের করে। মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট বিভাগ গত ৮ জুন, ২০১১ তারিখে বরাদ্দ বাতিল, পাহাড় বা পাহাড়ের কোন অংশ কর্তন না করা, রক্ষিত বন এলাকায় সকল ধরনের স্থাপনা উচ্ছেদ করার এবং বন ধ্বংস না করতে আদেশ দিয়ে রায় প্রদান করেন। আদালত প্লট বরাদ্দ গ্রহীতাদের উচ্ছেদ করে সার্বিক বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ প্রদান করেন। আদালতের আদেশ লঙ্গন করে আবাসন প্রকল্পের কাজ শুরু করলে বেলা আদালত অবমাননার মামলা (নং-৫৪/২০১৪) দায়ের করে। পরবর্তীতে আদালত তৎকালীন জেলা প্রশাসককে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করলে গত ২০১৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির হয়ে দুই মাসের মধ্যে সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করবেন বলে অঙ্গিকার করেন। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি এ বিষয়ে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি যার প্রমান পাওয়া যায় বন বিভাগ কর্তৃক উল্লেখিত মৌজায় বিদ্যমান অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ সংক্রান্ত ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ৪ জুন ২০১৭, ১৬ ফেব্রুয়ারি,২০২০ এবং ১৮ নভেম্বর, ২০২০ তারিখের পত্রসমূহ থেকে। উল্লেখিত পত্রসমূহের মাধ্যমে ঝিলংজা মৌজার আরএস ৮০০১ নং দাগে বিদ্যমান স্থাপনা উচ্ছেদের অনুরোধ জানিয়ে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে অনুরোধ জানানো হয়।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘উল্লেখিত মামলা ছাড়াও একই মৌজায় ভিন্ন ভিন্ন পাহাড় রক্ষায় এবং সমগ্র কক্সবাজার জেলায় বিদ্যমান পাহাড় রক্ষায় বেলা একাধিক মামলা দায়ের করে (মামলা নং-৬৮৪৮/২০০৯, ৭৬১৬/২০১১, ১৫৬৭/২০১৪, ২৭১৭/২০১৪, ৮৭৯৪/২০১৪, ৭৮৮৩/২০১৫, ৯০৯৪/২০১৫, ১৩৭৪৭/২০১৯)। মামলার প্রাথমিক ও চূড়ান্ত শুনানি শেষে উচ্চ আদালত পাহাড় বা পাহাড়ের অংশ বিশেষ কর্তন না করার, পাহাড়ে বিদ্যমান স্থাপনা উচ্ছেদের নির্দেশ দিয়ে রায় বা ক্ষেত্রমতে আদেশ প্রদান করেন। বিভিন্ন সময় প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী কোন স্থাপনা উচ্ছেদ হয়নি, অধিকন্ত উল্লেখিত মৌজায় পাহাড় কাটা ও স্থাপনা নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে যা আদালতের আদেশের ষ্পষ্ট লঙ্ঘন।’
চিঠিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশ কার্যকর করতে উল্লেখিত মৌজায় পাহাড় কাটা বন্ধে, পাহাড়ে বিদ্যমান সকল স্থাপনা উচ্ছেদে এবং ইতোমধ্যে পাহাড় ও বনভূমির যে অংশটুকু কেটে ফেলা হয়েছে বা ধ্বংস করা হয়েছে সেখানে দেশীয় প্রজাতির বৃক্ষ দ্বারা বনায়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানানো হয়।
যাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে তারা হলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পরিবেশ অধিদপ্তর (চট্টগ্রাম বিভাগ) এর পরিচালক।