মনোনয়নপত্র আর কেনা হলো না

কক্সবাজার সদর উপজেলা চেয়ারম্যান আর নেই

ইসলাম মাহমুদ 

মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) সকালে আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তাঁর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার কথা ছিল। সেই মতে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা সকাল সাড়ে ৯টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এসে তাদের প্রার্থীকে মোবাইলে ফোন দেয়া শুরু করলেন। বারবার ফোনে রিং হচ্ছিল। কিন্তু ফোন রিসিভ করছিলেন না নেতা। টানা ১১টা পর্যন্ত রিং দেয়া হলো। সেই একই অবস্থা। কেউ ফোন রিসিভ করেননি। আর নেতাকে না পেয়ে জামায়াতের নেতা-কর্মীরা যার যার মতো ফিরে গেলেন। তার ঠিক কয়েকঘন্টা পর জানতে পারলেন তাদের নেতা, জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি ও কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান আর নেই। তিনি ঘুমন্ত অবস্থায় কক্সবাজার শহরের একটি আবাসিক হোটেলে মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজেউন)।

আর মনোনয়নপত্র কেনা হলো না জিএম রহিম উল্লাহর। তিনি মঙ্গলবার (২০ নভেম্বর) ভোর রাতের কোন এক সময়ে কক্সবাজার শহরের ঝাউতলা এলাকার আবাসিক হোটেল ‘সাগর গাঁও’য়ের ৩১৬ নাম্বার কক্ষে একাকী ও ঘুমন্ত অবস্থায় এই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। পারিবারিক ও দলীয় সূত্রগুলোর ধারণা, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করে থাকতে পারেন।

জিএম রহিম উল্লাহ মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৪ বছর। তিনি ৪ কন্যা ও এক পুত্র সন্তানের বাবা। তিনি সদর উপজেলার ৪ নাম্বার ওয়ার্ডের বানিয়াপাড়ার আবদুল হাকিম ও দিলদার বেগম দম্পতির ছেলে। তারা ৪ ভাই ও ৩ বোন। তিনি ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট। কক্সবাজার সরকারী কলেজের সাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সেলিম উল্লাহর ছোট ভাই হলেন জিএম রহিম উল্লাহ।

জিএম রহিম উল্লাহর শ্বশুরের মালিকানাধীন এই হোটেলে মাঝে মধ্যেই তিনি রাত্রীযাপন করতেন। তিনি এই হোটেলটি দেখাশুনা করতেন। হোটেল সূত্র মতে, সোমবার (১৯ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে হোটেলে এসে জিএম রহিম উল্লাহ চতুর্থতলার ৩১৬ নাম্বার কক্ষে যান। ওখানেই তিনি রাত্রীযাপন করেন।

হোটেল সূত্র জানায়, সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে হোটেল ঢোকার পর সকালে জিএম রহিম উল্লাহর কোন সাড়া না পেয়ে তাদের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়।

তাদের মতে, জিএম রহিম উল্লাহ হোটেলটিতে অবস্থান করলে সকাল ৯টার মধ্যে হোটেল বয়দের ফোন করে রাস্তার কথা বলেন। কিন্তু মঙ্গলবার সকাল ১১টা পর্যন্তও হোটেল কক্ষ থেকে কোন নাস্তার অর্ডার না আসায় হোটেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহেদুল ইসলাম ও হোটেল বয়রা জিএম রহিম উল্লাহ অবস্থানকারি কক্ষে গিয়ে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু সাড়া না পেয়ে বেলা ২টার দিকে বিকল্প চাবি দিয়ে দরজা খুলে দেখা যায়, জিএম রহিম উল্লাহ মারা গেছেন।

হোটেলটির ব্যবস্থাপক মোঃ আবদুল মান্নান জানান, অন্যদিন সকালে নাস্তার কথা বললেও আজ মঙ্গলবার কোন সাড়া শব্দ না পেয়ে দুপুর দুইটার দিকে শ্যালক শাহেদুল ইসলাম এক্সট্রা চাবি নিয়ে কক্ষে ঢুকে পড়েন। ওই সময় মৃত অবস্থায় দেখতে পান জিএম রহিম উল্লাহকে।

সবারই ধারণা করছেন, তিনি ঘুমন্ত অবস্থায় ইন্তেকাল করেছেন।

এদিকে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে হোটেল সাগর গাঁওয়ের ৩১৬ নাম্বার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মীরা জিএম রহিম উল্লাহর মরদেহ ঘিরে কান্নাকাটি করছেন। ওই সময় হোটেলের ওই কক্ষে সাদা বেডসিট দিয়ে জিএম রহিম উল্লাহকে ঢেকে রাখা হয়েছে। আর হোটেলের সর্বত্র জামায়াতে ইসলামী নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের লোকারণ্য হয়ে আছে।

এদিকে পারিবারিক ও দলীয় সুত্র জানিয়েছেন, আগামিকাল (২১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় কক্সবাজার শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে প্রথম নামাজে জানাযা ও দুপুরের পর ভারুয়াখালীর গ্রামের বাড়িতে দ্বিতীয় জানাযা হবে। পরে পারিবারিক কবরস্থানে জিএম রহিম উল্লাহকে দাফন করা হবে।

প্রসঙ্গত, জিএম রহিম উল্লাহর পরিবারে রয়েছেন স্ত্রী সাজেদা বেগম, চার মেয়ে ও এক ছেলে। তিনি ১৯৮২ সালে এসএসপি পাসের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন।

 


শেয়ার করুন