কক্সবাজার শহরের চারশত বছরের ঐতিহ্যবাহী পুকুর দখলে নিচ্ছে একটি চক্র!

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কক্সবাজার শহরের চারশত বছরের ঐতিহ্যবাহী সাচী চৌধুরী পাড়া মসজিদের পুরণো একটি পুকুর ভরাট করে দখল করে নিচ্ছে প্রভাবশালী একটি সংজ্ঞবদ্ধ চক্র। বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণের জন্য অবৈধভাবে এই ভরাট কাজ চালাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

স্থানীয়দের অভিযোগ, গত এক সপ্তাহ ধরে পরিবেশ ও আইনবিরোধী এই কার্যক্রম চললেও সংশ্লিষ্ট সরকারি কোন কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

জানা যায়, কক্সবাজার শহরে গত কয়েক বছরে জমির দাম বেড়ে যাওয়ায় বিডিআর ক্যাম্প এলাকার সাচী চৌধুরী পাড়া মসজিদের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন পুকুরের দিকে লুলোপ দৃষ্টি পড়ে স্থানীয় প্রভাবশালী একটি সংজ্ঞবদ্ধ চক্রের। বাণিজ্যিক দোকান নির্মাণের জন্য স্থানীয় কামরুল হুদা ও গিয়াস উদ্দিনের নেতৃত্বে ওই সংজ্ঞবদ্ধ চক্রটি মাটি দিয়ে এই পুকুর ভরাট কাজ চালাচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পুরণো এই পুকুরটিতে মাছ চাষ করে তার আয় থেকে মসজিদটি পরিচালনা করা হয়। অপরদিকে এই পুকুরের পানি দূর্যোগ মুহুর্তে ফায়ার ব্রিগেড সদস্যরা অগ্নিনির্বাপণের জন্য ব্যবহার করেন।

ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজার এর প্রধান নির্বাহী ইব্রাহিম খলিল উল্লাহ মামুন বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া খতিয়ানভূক্ত পুকুর ভরাটের কোন সুযোগ নেই। সাচী চৌধুরী পাড়া মসজিদের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন পুকুরটি যেভাবে ভরাট করা হচ্ছে তা সম্পুর্ণ অবৈধ। তাই পুকুর ভরাটকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছি।

সরেজমিন ঘুরে ও অনুসন্ধানে দেখা যায়, বিজিবি ক্যাম্প চৌধুরী পাড়া এলাকায় বিজিবি ক্যাম্প টু সিকদার পাড়া সড়কের পাশে সাচী চৌধুরী পাড়া মসজিদের পুকুরটির অবস্থান। আরএস মূলে পুকুরটির আয়তন ২ একর ২১ শতক হলেও বিএস রেকর্ডে তা হয়ে যায় ১ একর ৫৩ শতক। চারশত বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরাতন এই পুকুরটির উত্তর ও পশ্চিম অংশে ভরাট কাজ চালাচ্ছে প্রভাবশালীরা। আগে দিন-দুপুরে ভরাট করা হলেও কয়েকদিন ধরে রাতের আঁধারে পাশর্^বর্তী পিএমখালী এলাকা থেকে পাহাড় কাটার মাটি দিয়ে এই ভরাট কাজ চালাচ্ছে। কিন্তু দখলদাররা প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় সাধারণ লোকজন প্রতিবাদ করলে তাদের বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হয় বলে প্রতিবাদকারীদের অভিযোগ।

অভিযোগ অস্বীকার করে কামরুল হুদা বলেন, এটি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি হওয়ায় যাতায়াতের জন্য সামান্য ভরাট করা হচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক কামরুর হাসান বলেন, অভিযোগ পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে পুকুরটি পরিদর্শন করে দখলের সত্যতা পাওয়া গেছে। কয়েকদিনের মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। এরপর বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্ণেল (অব.) ফোরকান আহমেদ বলেন, খবর পেয়ে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে একটি টিম পাঠিয়ে পুকুর ভরাটকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে এবং মসজিদ কমিটির লোকজনকে পুকুরের কাগজপত্র অফিসে জমা দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

তবে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ভরাট কাজ বন্ধ করে দেয়ার কথা জানালেও সরেজমিনে দেখা যায়, এখনও চক্রটি ভরাট কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।


শেয়ার করুন