কক্সবাজারে ৬ বছর ধরে ক্রিকেট ও ফুটবল লীগ হচ্ছে না

সিটিএন ডেস্কঃ 

প্রতি বছর নিয়মিত ক্রিকেট এবং ফুটবল লীগ আয়োজনের নিয়ম থাকলেও কক্সবাজারে ৬ বছর ধরে ক্রিকেট এবং ফুটবল লীগ হচ্ছে না। এতে নতুন করে খেলোয়াড় উঠতে পারছে না। আর টানা লীগ না হওয়ায় বেশির ভাগ খেলোয়াড় শুধু মাত্র ঘরোয়া আয়োজনে অংশ নিতে পারলেও জাতীয় পর্যায়ে খেলার সুযোগ পাচ্ছে না। এতে জেলা ক্রীড়ার দায়িত্বশীল প্রতিষ্টান এবং ক্রীড়া সংগঠকদের চরম ব্যার্থতা বলে মনে করছেন সচেতন মহল। এদিকে দেশের বিভিন্ন জাতীয় ইস্যূ এবং স্থানীয় কোন্দল এবং অপরাজনীতির কারণে ক্রিকেট এবং ফুটবল লীগ আয়োজন হয়নি বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

কক্সবাজার জেলা ক্রীড়া সংস্থা সূত্রে জানা গেছে সর্বশেষ ২০১৫ সালে জেলা ক্রিকেট লীগ আয়োজন হয়েছিল। পরে অবশ্য ২০১৮ সালে প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ আয়োজন হলেও তা শেষ করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। তাই সেই আয়োজনকে হিসাবে আনা যাচ্ছে না সেই হিসাবে টাকা ৬ বছর কোন জেলা ক্রিকেট লীগ আয়োজন হয়নি।
অন্যদিকে আরেক জনপ্রিয় খেলা ফুটবলে শনির দশা কাটছে না। ফুটবল লীগ আয়োজনের দায়িত্বে থাকা জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনে একের পর এক বিতর্ক এবং জটিলতার কারণে বর্তমান কমিটির দায়িত্বে থাকাকালীন কোন ফুটবল লীগ আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। আর বর্তমান কমিটির মেয়ার শেষ হয়েছে প্রায় এক বছর আর সর্বশেষ লীগ আয়োজন হয়েছিল ২০১৫ সালে অর্থাৎ ৬ বছর ধরে ফুটবল লীগও দেখেনি কক্সবাজারের দর্শক। তবে ২০১৮ সালে জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে একটি ফুটবল লীগ আয়োজন করা হয়েছিল। একটি উপজেলা ফুটবল লীগ আয়োজন করা হয়েছিল তাও শেষটা ভাল হয়নি। দীর্ঘ ৬ বছর ধরে জেলায় ক্রিকেট এবং ফুটবল লীগ না হওয়ায় চরম হতাশ এবং ক্ষোব্ধ সাধারণ খেলোয়াড়রা।
এ ব্যপারে জেলা ক্রিকেট লীগের খেলোয়াড় শাকিল সরওয়ার বলেন, ক্রিকেট লীগ না হওয়ায় জেলাতে নতুন করে কোন খেলোয়াড় উঠতে পারছেনা। এর মধ্যে যে কয়েকজন জাতীয় পর্যায়ে যাচ্ছে তারা শুধু মাত্র নিজের যোগ্যতা এবং ব্যাক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে যাচ্ছে। আগে জেলা লীগ হলে সেখান থেকে জাতীয় পর্যায়ের ক্লাব কর্মকর্তারা এসে পছন্দমত খেলোয়াড় বাছাই করে তাদের ক্লাবের জন্য নিয়ে যেত। আমি মনে করি এই ব্যার্থতার দ্বায়ভার কখনো জেলা ক্রীড়া সংস্থা এড়াতে পারেনা। এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য ও সাবেক কৃতি ক্রিকেটার আশরাফুল আজিজ সুজন বলেন, নিয়মিত ক্রিকেট লীগ আয়োজন না হওয়ায় ক্রিকেটার নানান ধরনের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা কেউ জাতিয় পর্যায়ে অংশ নিতে পারছেনা। নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে পারছেনা। তাছাড়া নতুন করে কেউ ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহী হচ্ছে না। তাই নিয়মিত ক্রিকেট লীগ আয়োজনের কোন বিকল্প নেই। একই মত দিয়ে সাবেক কৃতি ফুটবলার ও বর্তমান কোট মাসুদ আলম বলেন, লীগ হচ্ছে ফুটবলারদের যোগ্যতা প্রমাণ করার শ্রেষ্ট স্থান। তাই নিয়মিত লীগ না হওয়ায় ফুটবলারা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। বিশেষ করে সদর উপজেলা এবং রামু উপজেলার খেলোয়াড়রা বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। একই মত দিয়ে জেলা ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ইসমাঈল জাহেদ বলেন, বর্তমানে ফুটবলের সোনালী সময় এখন পেশাদার ফুটবলারদের জন্য অনেক বড় সুযোগ রয়েছে। তবে কক্সবাজারে নিয়মিত লীগ আয়োজন না হওয়াতে ফুটবলাররা নিজেদেরকে প্রমাণ করতে পারছেনা। কয়েকজন ঢাকার মাঠে গিয়ে ব্যাক্তিগত ভাবে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করছে। এছাড়া ডিএফএ সচল না থাকায় দীর্ঘ মেয়াদী কোন প্রশিক্ষণ পাচ্ছে না ফুটবলারা।

এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য এবং ক্রিকেট সম্পাদক প্রভাষক জসিম উদ্দিন বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে কক্সবাজারে প্রথম বারের মত ২০১৫ সালে জেলা লীগ এবং ২০১৮ সালে প্রিমিয়ার লীগ আয়োজন করা হয়েছিল। এর পরে জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাচন এবং সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতির কারণে লীগ আয়োজন সম্ভব হয়নি। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মাঠ, বর্তমান স্টেডিয়াম মাঠ হচ্ছে অর্নূধ-১৪ খেলোয়াড়দের জন্য। এখানে জেলা লীগ আয়োজন করা যায়না। আর আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আমাদের লীগের খেলা খেলতে দেয়না। তাছাড়া বড় সমস্যা হচ্ছে ক্রিকেট লীগে অর্ন্তভূক্ত ২৭ টি টিম। আমরা লীগ আয়োজন করতে চাইলে তারা ১২/১৫ টি ক্লাব এক হয়ে নানান অজুহাত দেখিয়ে বলে খেলতে পারবো না তাই নানান কারণে লীগ আয়োজন সম্ভব হয়নি।
অন্যদিকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোষাধ্যক্ষ এবং ফুটবল সম্পাদক একেএম রাশেদ হোসাইন নান্নু বলেন,ফুটবল লীগ আয়োজনের সম্পূর্ন দায়িত্ব জেলা ফুটবল এসোসিয়েশন (ডিএফএ)র আমার জানা মতে বাফুফে টাকা দিয়েছে তার পরও বর্তমান ডিএফএ লীগ করতে পারেনি। এই ব্যর্থতা তারা এড়াতে পারবে না। আর জেলা ক্রীড়া সংস্থা নিয়মিত ফুটবল মাঠে রাখার চেস্টা করেছে। এ ব্যপারে জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলুল করিম সাঈদী বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পরে ২ বার লীগ আয়োজনের জন্য দল বদল করা হয়েছে। কিন্তু কিছু ক্লাব কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের কারণে লীগ আয়োজন সম্ভব হয়নি। এছাড়া ডিএসএ যে লীগ আয়োজন করেছে সেখানে আমাদের অংশ গ্রহণ ছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন জাতিয় এবং আর্ন্তজাতিক ফুটবলের আয়োজনে ডিএফএ সব সময় অগ্রণি ভুমিকা রেখেছে। মূলত কিছু অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্রের কারণে ফুটবল লীগ হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সহ সভাপতি অনুপ বড়ুয়া অপু বলেন, কক্সবাজার এখন দেশের ক্রীড়াঙ্গনে একটি অনন্য নাম। আমরা যে ঘরোয়া আয়োজন করেছি তা দেশসেরা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে করোনা পরিস্থিতির কারণে সারা দেশে সব খেলাধুলা বন্ধ হয়ে যায়। করোনাকালীন ক্রীড়াবিদদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া মাঠের সমস্যার কারণে এখন লীগ আয়োজন কঠিন। কোথাও কোন মাঠ নেই। আর কক্সবাজার স্টেডিয়ামের একটা মাঠ এটা সারাবছর ছোট বড় আয়োজনে ব্যাস্ত থাকে। তবে এখন থেকে নিয়মিত লীগ আয়োজন হবে বলে জানান তিনি।

–সূত্রঃ দৈনিক কক্সবাজার


শেয়ার করুন