হুমায়ুন সিকদারঃ
জেলার উপকুলীয় এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠীর বাঁচার লড়াই চলছে। কুতুবদিয়া, মহেশখালীর ধলঘাটা, পেকুয়ার মগনামা, রাজাখালী, উজানটিয়া, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সেন্টমাূটিন ও উখিয়ার জালিয়াপালং ও ককসবাজার শহরের কুতুবদিয়াপাড়া ও বাঁকখালী নদীর তীরবর্তী এলাকার জনগোষ্ঠীর জীবনমান এখনো অনুন্নত বলাই চলে। উপকুলীয় ওই জনগোষ্ঠীর রক্ষার্থে টেকসই বেড়িবাঁধ নেই, জোয়ার ভাটায় যাদের জীবন চলে, নেই বিদ্যুৎ, যাতায়াতে ডিঙি নৌকা যাদের বাহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নাগরিক জীবন নিয়ে তারা এখনো অবহেলিত বলে জানা যায়।
নাগরিক হিসেবে মৌলিক অধিকার যথাযথ সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত তারা।
জীবন-যাত্রার মানোন্নয়নে মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের দাবি সরকারের কাছে তাদের।
জানা যায়, উপকুলীয় এলাকায় লবণ, চিংড়ী, মিষ্টি পান ও পর্যটন দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রাজস্ব আয়ও বৃদ্ধি করেছে।
বাংলাদেশের ১৯ জেলার ১৪৭ উপজেলার ১৩ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা উপকূলীয় অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। প্রায় ২৮% মানুষ উপকূলীয় অঞ্চলে বসবাস করে। ওই উপকুলীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে উপকূল মন্ত্রনালয় গঠন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে বলে উপকূল বাঁচাও আন্দোলনের নেতারা জানান। তারা সরকারের কাছে এদাবি জানান।
পাশাপাশি উপকুলীয় জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেটেও বিশেষ বরাদ্দ রাখার দাবী জানানো হয় সরকারের কাছে।
উপকুল বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি সাংবাদিক হুমায়ুন সিকদার বলেন, ৩ টি পার্বত্য জেলার জন্য মন্ত্রনালয় গঠন করা হলেও ১৯ টি জেলার ১৪৭ টি উপকুলীয় উপজেলার জন্য কেনো মন্ত্রনালয় গঠন করা হয়নি তা উপকুলবাসীর প্রশ্ন!
উপকূল দেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। প্রায় দুই কোটি উপকূলীয় মানুষ ঘূর্ণিঝড়- জলোচ্ছাসে সম্পূর্ণ অরক্ষিত। প্রতিবছর বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলের অসংখ্য মানুষ তাদের বসতভিটা ও কৃষিজমি হারিয়ে স্থানচ্যুত হচ্ছে।
দেশের ৩ পার্বত্য জেলার জন্য মন্ত্রানালয় গঠিত হলেও ১৯ জেলার ১৪৭ উপজেলার উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে এখনো মন্ত্রানালয় গঠিত হয়নি কেনো এ প্রশ্ন উপকুলীয় এলাকার জনসাধারণের !
বাংলাদেশ সরকার উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি হ্রাসের জন্য বেশ কিছু আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন করেছে।
জাতীয় পরিবেশ নীতিমালা, ১৯৯২; উপকূলীয় অঞ্চল নীতিমালা, ২০০৫; জাতীয় অভিযোজন কর্মসূচি, ২০০৫; বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা, ২০০৯; জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা (২০১০-২০১৫); জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা, ২০০১; দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১২। এছাড়া সরকার জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় ক্লাইমেট চেঞ্জ সেল, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড প্রতিষ্ঠা এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গৃহিত বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড-এর অর্থায়নে উপকূলীয় অঞ্চলে দূর্যোগ মোকাবেলা এবং মানুষের ঝুঁকি মোকাবেলায় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত উপকুলীয় মন্ত্রানালয় গঠন করা হয়নি।
উপকূলীয় অঞ্চলে ঘনঘন ঘূর্ণিঝড় আর জলোচ্ছাস বারবার আঘাত হানার কারণে সড়ক অবকাঠামো, বসতবাড়ী, কৃষিজমি বিনষ্ট হয়। কৃষিজমিসমূহ লবনাক্ততার কারণে দীর্ঘ সময়ের জন্য উর্বরতা হারায় ফলে ফসল উৎপাদন হ্রাস পায়। সরকারী-বেসরকারী কোন সুযোগসুবিধা তাদের নিকট প্রত্যাশিত হারে ও সময়মত পৌঁছায়না। বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে রয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা। যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা এসব অঞ্চলের জীবনযাত্রাকে অচল করে রেখেছে। যুগের পর যুগ পিছিয়ে থাকলেও উপকূলের জন্য সুনির্দিষ্ট মন্ত্রানালয় গঠনে উদ্যোগ নেই বললেই চলে। উপকূলবাসীকে সমুদ্রের ভয়াল ছোবল থেকে রক্ষায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র ও উপকূলীয় বনায়নের কোন বিকল্প নেই।