অসুস্থ বাবার জন্য ২৫০ কিলোমিটার পথ হেঁটে বাড়ি ফিরলেন সন্তান

দেশে লকডাউনের মধ্যে প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার পথ একটানা পায়ে হেঁটে, ৩৬ ঘন্টায় গ্রামের বাড়ি পৌঁছেন বেনজামিন (২৫)। উদ্দেশ্য শয্যাশায়ী বাবার সেবা। করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার শংকায় চারিদিকে চলছে লকডাউন। সড়কে চলছেনা যাত্রিবাহী যানবাহন। তাই দেশের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত অনেকেই কর্মস্থল থেকে নিজ এলাকায় ফিরতে পারছেন না। সুযোগ নিয়ে অনেকেই পণ্যবাহি যানে করে অথবা ফিডার সড়কে চলাচলকারী যানবহনে করে ফিরছেন। বাড়ি ফিরলেও বাধ্যতামুলক হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হচ্ছে তাদের। নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বিহারকোল এলাকার বাসিন্দা পৌর কাউন্সিলর আইজ উদ্দিনের ছেলে বেনজামিন (২৫) কর্মরত ছিলেন ঢাকার আশুলিয়া এলাকার একটি গার্মেন্টস কারখানায়। চাকরীর টানাপোড়েনের মধ্যে পড়ে সময়মত বাড়ি ফিরতে পারেননি। যখন বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হন তখন সড়কে যানবাহনের সংখ্যা যেমন কম ছিল, তেমনি পুলিশের তল্লাশীও ছিলো পথে পথে। তাই গত ১৪ই এপ্রিল পায়ে হেঁটেই তিনি রওনা হন বাগাতিপাড়ার উদ্দেশ্যে। প্রায় আড়াইশ কিলোমিটার পথ একটানা পায়ে হেঁটে ৩৬ ঘন্টায় গত শুক্রবার (১৭ এপ্রিল) ভোর রাতে নিজ গ্রামে এসে পৌঁছান তিনি। শুধু নৌকায় চেপে পার হন যমুনা নদী।

এদিকে, বেনজামিনের বাড়ি আসার এ খবর পৌঁছে যায় স্থানীয় প্রশাসনের কাছে। হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করার প্রস্তুতি নেয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে। পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী জনপ্রতিনিধি বাবা আইজ উদ্দিনের সেবা করার উদ্দেশ্য ছিল বেনজামিনের। কিন্তু পরিবারের লোকদের চাপে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে যেতে হয়।

রবিবার বিকেলে বেনজামিনকে রাখা হয় বাগাতিপাড়া মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পরদিন এখানে আরো একজনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়। এইখানে মোট ২ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

বেনজামিনের পরিবার জানায়, সে গত ১৪ই এপ্রিল ভোরে সাভার আশুলিয়া থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ৩৬ ঘন্টা হেঁটে বাড়িতে পৌঁছায়। পরে করোনা প্রতিরোধ কমিটি “সিপিসি’র” সহযোগিতায় গত শনিবার বাগাতিপাড়া পৌরসভার প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারান্টাইন এ রাখা হয় তাকে।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, সারা দেশে লকডাউন ঘোষণার পর থেকে ঢাকা, নারায়নগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ বাগাতিপাড়ায় আসতে শুরু করে। ফলে করোনা সংক্রমনের ঝুঁকি বেড়ে গেলে স্থানীয় প্রশাসনের নজরদারী বাড়ানো হয়। এসব ফেরত ব্যক্তিদের খুজে বের করে কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বাধ্য করা হয়। উপজেলায় ইতিমধ্যে ৭টি প্রাতিষ্ঠানকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের আওতায় আনা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সর্বশেষ বেনজামিন সহ ২৯ জনকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

বাগাতিপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয়াংকা দেবী পাল বলেন, “নিজেরা সচেতন হলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখার প্রয়োজন হতো না। উপজেলায় এপর্যন্ত ২৯ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে ২ থেকে ৩ জন ব্যতিত প্রায় সকলকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কোয়ারেন্টাইনে থাকা কয়েকজনের পরিবারকেও দিতে হচ্ছে খাদ্য সহায়তা।”

কেএ/ডিএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

পাঠকের মন্তব্য:


শেয়ার করুন