সেন্টমার্টিনের পর্যটকরা নিরাপদে

বুলবুল’র প্রভাবেও পর্যটকদের উচ্ছ্বাস

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সার্বিক পরিস্থিতি সরেজমিন পরিদর্শন করে পর্যটকদের সাথে কথা বলছেন জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ কামাল হোসেন

ইসলাম মাহমুদ
ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ এর প্রভাবে কক্সবাজারের থেমে থেমে বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। দুই দিন ধরে বৈরী আবহাওয়া ও সতর্ক সংকেত থাকায় টেকনাফ ও সেন্টমার্টিনের মধ্যে জাহাজসহ কোনও নৌযান চলাচল করেনি। ফলে প্রায় ১২০০ পর্যটক দ্বীপে আটকে পড়েছেন।

অপরদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের সবকটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে পর্যটকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমুদ্র স্নানে ব্যস্ত। তবে লাইফ গার্ড কর্মীরা সার্বক্ষণিক পর্যটকদের নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি এ অবস্থায় সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। লাল পতাকা এবং লাইফ গার্ড কর্মীদের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে উত্তাল সাগরে গোসল করছে পর্যটকরা।
ঢাকা থেকে পর্যটক রবিন বলেন, যান্ত্রিকতা জীবন ছেড়ে একটু ছুটি পেয়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ছুটে এসেছি। এখানেও দেখি প্রকৃতি বিরূপ আচরণ করছে। কিন্তু করার কিছু নেই একটু আনন্দ করার জন্য এসেছে তাই নিষেধাজ্ঞা স্বত্ত্বেও সাগরে নেমে গোসল করে জীবনকে উপভোগ করছি।
ছৈয়দুল আমিন নামে আরেক পর্যটক বলেন, সাগর উত্তাল ও লাইফ গার্ড কর্মীরা সতর্ক করে দিচ্ছে এই অবস্থায় সাগরে না নামতে। কিন্তু করার কিছুই নেই কাল কক্সবাজার ছেড়ে আবার ঢাকা চলে যাবো। তার একটু সাগরে হাঁটু পরিমান পানিতে নেমে গোসল করছি।
এ অবস্থায় যে কোন দুর্ঘটনা এড়াতে পর্যটকদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন লাইফ গার্ড কর্মীরা। সৈকতের লাবনী পয়েন্টে দায়িত্ব থাকা সী-সেইভ লাইফ গার্ডের ইনচার্জ মোহাম্মদ চিরু বলেন, সাপ্তাহিক ছুটি হওয়াতে বিপুল সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজার সৈকতে বেড়াতে এসেছে। এছাড়াও সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় তারাও কক্সবাজার সৈকতে ভিড় করছে। ফলে বেড়াতে আসা পর্যটকদের সমুদ্র ¯œানে নিরাপত্তায় হিমশিম খেতে হচ্ছে। এই মুহুর্তে যেহেতু ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর কারণে সাগর উত্তাল রয়েছে তাই আগত পর্যটকদের নিজেদের সচেতন হওয়া খুবই জরুরী বলে জানান তিনি।

এব্যাপারে পর্যটকদের নিষেধ ও সচেতন করা হচ্ছে। তবে কেউ এই নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। অসতর্ক অবস্থায় সৈকতে গোসল করছে। তবে আমরাও চেষ্টা করছি তাদের নিরাপত্তা দেয়ার
কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর কারণে কক্সবাজার উপকূলে প্রায় ৪ হাজার ট্রলার ফিরে এসেছে। বাকি যে হাজার খানেক ট্রলার রয়েছে তাও বিকেলের মধ্যে ফিরে আসবে।
এদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের পানিতে না নামা এবং সতর্কতার সাথে বেড়ানোর জন্য মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসক। শনিবার দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ট্যুারিস্ট পুলিশ পর্যটকদের উদ্দেশ্যে এই মাইকিং করেন। এছাড়া হিমছড়ি, ইনানী এবং টেকনাফ সমুদ্র সৈকতেও একই রকম মাইকিং করা হয়। অপরদিকে জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সেন্টমার্টিনে আটকে পড়া পর্যটকদের সর্তকতার সাথে সৈকতে গোরাফেরা করতে মাইকিং করেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। ইউপি মেম্বার হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে বিভিন্ন হোটেল ও আশ্রয় কেন্দ্রে আটকে পড়া পর্যটকদের কাছে গিয়ে সতর্কতার সাথে সৈকতে বেড়ানোর আহ্বান জানান।
জেলা প্রশাসনের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসন পর্যটকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে চেয়ারম্যান আরো জানান, দূর্যোগ না কাটা পর্যন্ত তাদের পরিচ্ছন্ন ভাবে হয়রানি মুক্ত আতিথেয়তা দিতে হোটেল কর্তৃপক্ষকে বলা আছে। পরিষদের সবাই সর্বক্ষণ খোঁজ খবর নিয়ে পর্যটকদের আতংকিত না হতে অনুরোধ জানানো হচ্ছে।
চেয়ারম্যানের মতে, সেন্টমার্টিন দ্বীপে ৫টি সাইক্লোন শেল্টার ও বহুতল কয়েকটি হোটেল রয়েছে। কঠিন দূর্যোগ বা জলোচ্ছ্াস হলেও আটকে পড়া পর্যটকদের বিচলিত হবার কিছু নেই। সংকেত বাড়লে আমরা তাদের এসব উচু ভবনে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করব।
দ্বীপে আটকা পড়া পর্যটকদের হোটেল ও খাবার বিল ডিসকাউন্ট দিতে সব হোটেল-মোটেলকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নূর আহম্মদ। তিনি বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে দ্বীপে বৃষ্টি ও বাতাস বেড়েছে। এজন্য রুম থেকে বের হতে পর্যটকদের নিষেধ করা হয়েছে। এছাড়া দ্বীপের চারদিকে সমুদ্র সৈকতে যাতে কোনও পর্যটক না নামেন, সেজন্য পরিষদের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। যারা প্রথমবারের মতো সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে এসেছেন, তাদের মধ্যে কিছু লোকজন ভয়ে আছেন বলে শুনেছি। তবে পর্যটকদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে।’
সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আজমীর ইলাহি বলেন, ‘দ্বীপে আটকে পড়া পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে।’


শেয়ার করুন