দশ সহস্রাধিক পর্যটক এখন কক্সবাজারে

ঈদের পরদিন থেকে লক্ষাধিক পর্যটকের ঢল!

আহমদ গিয়াস॥
এবারের ঈদুল আযহার ছুটিতে দেশের প্রধান অবকাশযাপন কেন্দ্র কক্সবাজারে রেকর্ড সংখ্যক পর্যটক সমাগমের আশা করছেন হোটেল মালিকরা। বেশ কয়েক বছর পর ঈদের ছুটিতে এবার কক্সবাজারের হোটেলে ফুল বুকিং হয়েছে। তবে তা ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার ও তার পরের দিন শুক্রবারের জন্য। অবশ্য শনিবারের জন্যও প্রায় ৮০ ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, ঈদের ছুটির সাথে সাপ্তাহিক ছুটির দিন যুক্ত হওয়ায় এবারের ঈদে ৫ লক্ষাধিক পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসবেন।
সোমবার ও মঙ্গলবার শহর ও সাগরপাড়ের হোটেল-মোটেল ও বিপণীকেন্দ্রগুলোতে সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, এবারের ঈদুল আযহার ছুটিতে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটবে এমন আশায় শহরের বার্মিজ মার্কেট ও সাগরপাড়ের ব্যবসায়ীদের জোর প্রস্তুতি চলছে। গত কয়েকদিন ধরে সংস্কার-চুনকামের পর হোটেল ও দোকানগুলোকে আরো আকর্ষণীয় করে তোলা হচ্ছে। দোকানে তোলা হচ্ছে নতুন মালামাল। হোটেলের কক্ষে কক্ষে লাগানো হচ্ছে নতুন পর্দা, টেবিল ক্লথ ও বেডশিট। ট্যুর অপারেটরদের মাঝেও চলছে প্রস্তুতি। ঈদের ছুটিতে ইতোমধ্যে অনেক পর্যটক কক্সবাজারে এসে ভীড় করছেন। আজ মঙ্গলবার ঈদের আগেরদিনও প্রায় ১৫ হাজার পর্যটক কক্সবাজার অবস্থান করছেন বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।
কক্সবাজারের হোটেল মালিকদের মতে, প্রতিবছর দুই ঈদ ছাড়াও থার্টিফার্স্ট’র ছুটিতে কক্সবাজারে সর্বোচ্চ সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটে। এসময় হোটেল-মোটেলে রুম খালি পাওয়া হয় দুষ্কর। তবে গত কয়েক বছরে শহরে এবং শহরের বাইরে সমুদ্র তীরবর্তী উপ-শহরগুলোসহ বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র ঘিরে বেশ কিছু নতুন হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউস চালু হওয়ায় কক্সবাজারে আগের মত থাকার সংকট নেই। বর্তমানে কক্সবাজার শহরেই রয়েছে চার শতাধিক আবাসিক হোটেল ও গেস্টহাউস। এখানে প্রতিদিন লক্ষাধিক পর্যটকের থাকার সুবিধা রয়েছে। এবারের ঈদের ছুটিতেও বৃহস্পতিবার ও শুক্রবারের জন্য প্রায় ২ লাখ পর্যটক কক্সবাজারের হোটেলে রুম বুকিং দিয়েছেন। বুকিং ছাড়াই আরো কয়েক লাখ পর্যটক এবারের ঈদুল আযহার ছুটিতে বেড়াতে আসবেন বলে মনে করেন কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন (টোয়াক বাংলাদেশ) এর প্রতিষ্ঠাতা-সভাপতি এসএম কিবরিয়া খান।
তিনি মনে করেন, এবারের ঈদুল আযহার তিনদিনের ছুটির সাথে সাপ্তাহিক ছুটির দিনও যুক্ত হয়েছে। ফলে এবার মানুষ মনভরে বেড়াতে পারবে। এ কারণে এবারের ঈদের ছুটিতে আগের বছরের তুলনায় অধিক পর্যটক কক্সবাজারে বেড়াতে আসবে।
তিনি বলেন, দেশের মানুষের কাছে বেড়ানোর সবচেয়ে জনপ্রিয় ঠিকানা কক্সবাজার। তাই এবারের ঈদুল আযহার ছুটিতে কক্সবাজারে ৫ লক্ষাধিক পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে আশা করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তবে বিরূপ আবহাওয়ার কারণে প্রশাসন টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি না দেওয়ায় পর্যটকরা কিছুটা হতাশ। তবে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের সুযোগ না থাকায় এবার ট্যুর অপারেটররা কক্সবাজার-টু বান্দরবান, দরিয়ানগর-হিমছড়ি-ইনানী-টেকনাফ ও রামু ভ্রমণের প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন। হাজার হাজার পর্যটক কক্সবাজার থেকে বান্দরবান ভ্রমণের প্যাকেজ কিনেছেন। এ কারণে এবারের ঈদের ছুটিতে উল্লেখ্যযোগ্য সংখ্যক পর্যটক কক্সবাজারের পাশাপাশি বান্দরবানও ভ্রমণ করবেন।
কক্সবাজার সী-বীচ হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সহ-সভাপতি নুরুল আবছার জানান, কক্সবাজার শহরের হোটেলগুলোতে লক্ষাধিক মানুষের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। ইতোমধ্যে শহরের চার শতাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেল ও গেস্ট হাউসে ঈদের পরদিন বৃহস্পতিবার ও তারপরদিন শুক্রবারের জন্য সকল কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। শনিবারও প্রায় ৮০ ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং রয়েছে। তবে আগামী রবিবার থেকে চাপ অনেকটা কমবে। তবে রবিবার থেকে পর্যটকের চাপ কমে গেলেও আগামী সপ্তাহজুড়ে কক্সবাজারে মোটামুটি ভাল সংখ্যক পর্যটক থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এবারের ঈদের ছুটিতে পর্যটক ছাড়াও শহরের আশপাশ এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ শহরে এবং সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসবে। এসময় শহরের রাস্তাঘাট ও বিপণীকেন্দ্রগুলোতে বেশ ভীড় থাকবে বলে ধারণা করছেন শহরবাসী। সেসাথে এখানকার পর্যটন কেন্দ্রগুলো আগের বছরগুলোর মতোই জমজমাট থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুুর রহমান বলেন- ঈদের ছুটিতে শহরে পর্যটকদের চাপে তীব্র যানজটের যাতে সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে পুলিশ প্রশাসনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পাশাপাশি গত কয়েকদিন ধরে অবৈধ গাড়ি আটকেও অভিযান চলছে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ফজলে রাব্বি জানান- ঈদের ছুটিতে পর্যটকরা যাতে নির্বিঘেœ ঘুরতে পারে সে বিষয়ে ট্যুরিস্ট পুলিশ শহর ও শহরের বাইরে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে টহল দেবে। এছাড়া সমুদ্র সৈকতের কয়েকটি পয়েন্টে থাকবে দিনরাত সার্বক্ষণিক প্রহরা।


শেয়ার করুন