আজ বিশ্ব নবী সা: দিবস

‘ত্রিভুবনের প্রিয় মুহাম্মদ এলোরে দুনিয়ায়…।’ আজ রোববার হিজরি ১২ রবিউল আউয়াল, মহান নবী সা: দিবস। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা:। সর্বশেষ নবী, মহানবী হজরত মোহাম্মদ মোস্তফা সা:-এর জন্ম ও ওফাতের দিন।
প্রায় দেড় হাজার বছর আগে ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি পবিত্র মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। জীবনের শেষ ২৩ বছর নবুয়তের দায়িত্ব পালন শেষে আবার এ মাসেরই ১২ তারিখে ৬৩ বছর বয়সে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন তিনি।

পবিত্র মদিনায় মসজিদে নববীতে শায়িত আছেন ইসলামকে পূর্ণতা দানকারী এই মহামানব। প্রতিদিন লাখো মুসলমান দরুদ ও সালাম পেশ করেন তাঁর রওজায়। নামাজ ও নামাজের বাইরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসলমানরা প্রতিনিয়ত দরুদ পাঠ করেন তাঁর উদ্দেশ্যে।
জাহেলিয়ার যুগে অনাচার-পাপাচারে নিমজ্জিত আরবে ইসলামকে রাষ্ট্রীয় ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে ইসলামের মডেল উপস্থাপনের এক মহান দায়িত্ব পালন করেন মুহাম্মদ সা:। তাঁর মাধ্যমেই ইসলাম মহান আল্লাহ তায়ালার মনোনীত পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায়। তখন অশান্ত আরবে শান্তির সুবাতাস বয়ে যায়। পরবর্তীতে ক্রমেই ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসে প্রায় পুরো বিশ^।
তাই মহানবী সা:-এর আগমনের দিনকে খুশির দিন হিসেবে ঈদে মিলাদুন্নবী সা: নামে পালন করেন উপমহাদেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ। অনেকে দিবসটিকে সিরাতুন্নবী সা: দিবস নামেও আখ্যায়িত করে তার আদর্শ বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। মাসব্যাপী রাসূল সা:-এর প্রতি দরুদ পাঠ, তার জীবনী ও আদর্শ আলোচনা, আনন্দ মিছিল, স্বাগত মিছিল প্রভৃতি কর্মসূচি পালন করা হয়। আজ রোববার সরকারি ছুটি।

সারা বিশ্বেও মহানবীর জীবন ও আদর্শ স্মরণের মধ্য দিয়ে পালিত হয় ১২ রবিউল আউয়াল।
নবী মুহাম্মদ সা:-কে দুনিয়ায় পাঠানো হয়েছিল একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য। তা ছিল দুনিয়ায় প্রচলিত সব বিধিবিধান ও ব্যবস্থার ওপরে আল্লাহর দেয়া দ্বীন বা জীবনব্যবস্থাকে রাষ্ট্র ও সমাজে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। ইসলামের বিধান অনুযায়ী দুনিয়াকে পরিচালিত করে দুনিয়াকে শান্তিময় করা, পরকালে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করে চিরসুখের জান্নাত লাভের জন্য পাথেয় অর্জন করা। ৪০ বছর বয়সে নবুয়তের দায়িত্ব পান রাসূলে পাক সা:। ২৩ বছরে আল্লাহ প্রদত্ত দায়িত্ব পালনে তিনি সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালান। ওহির মাধ্যমে আল্লাহর নির্দেশনায় নানা বাধাবিঘœ-অত্যাচার-জুলুমের বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে দ্বীনকে তিনি বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হন। তাঁর জীবদ্দশায়ই ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অহি নাজিল হয়।
মানুষের কল্যাণ সাধনই ছিল রাসূল সা:-এর সব কাজের লক্ষ্য। মানুষের কল্যাণচিন্তায় পবিত্র মক্কার হেরা পাহাড়ের গুহায় ধ্যানরত অবস্থায়ই তার ওপর প্রথম ওহি নাজিল হয়। ৪০ বছর বয়সে সেই বাণী প্রাপ্তির মাধ্যমেই নবুয়ত লাভ করেন তিনি। তাঁর ওপর নাজিলকৃত ওহির সমষ্টিই ইসলামের মহাগ্রন্থ আল কুরআন।
ইসলামের প্রচার মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত, মদিনা সনদ তৈরি, বদর যুদ্ধে বিজয়, ওহুদের যুদ্ধে সাহসী ভূমিকা, হুদাইবিয়ার সন্ধি এবং রক্তপাতহীন মক্কা বিজয়সহ বহু ঐতিহাসিক ঘটনার মধ্য দিয়ে ইসলামের পরিপূর্ণতা আনতে সক্ষম হন তিনি। রাসূলে পাক সা:-এর জীবনালেখ্য থেকে তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় ফুটে ওঠে।

মহানবী সা: ছিলেন পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ সংস্কারক। তিনি তখনকার আরবে আর্থসামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনেন, তার নজির পৃথিবীতে নেই। তিনি ধর্মের নামে অনাচার, ব্যভিচার ও কুসংস্কারের অবসান ঘটিয়ে সুস্থ-সুন্দর একটি মানবিক ব্যবস্থা মানবজাতিকে উপহার দেন। সমাজে ন্যায়, ইনসাফ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে যে সংস্কার করেন, তা ছিল অনন্য-অসাধারণ।

তিনি সব নাগরিকের সমান অধিকার, বাকস্বাধীনতাসহ মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সুদকে হারাম করে মুনাফাভিত্তিক ইসলামি অর্থনীতি চালু করেন। ধনীদের সম্পত্তিতে গরিবের অধিকার আছে ঘোষণা দিয়ে জাকাতের বিধান দেন। তিনি নারী-পুরুষ সবার জন্য জ্ঞান অর্জনকে অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা দেন। নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন। দাসদের সামাজিক মর্যাদা প্রদান করেন। শ্রমিকের ঘাম শুকানোর আগে মজুরি প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
নবী সা:-এর প্রতিষ্ঠিত ইসলাম ও ইসলামের বিধান আল কুরআন এত বছর পরও অবিকৃত অক্ষত। ইসলামের অনুসারী বিশ্ব মুসলমানের সংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের সংখ্যা অর্ধশতাধিক।


শেয়ার করুন